Main Logo
আপডেট : ৭ জুন, ২০২৪ ১০:১৯

বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে যত দুশ্চিন্তা

আগামীকাল শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামীকাল শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ

আমেরিকার ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে আগামী কাল শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টায়  মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মানেই গত কিছুদিন যাবত ধরেই শংকা আর দুর্দশা।  টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে সমর্থকদের মন্তব্য দেখলে মনে হবে, অনেকেরই তেমন কোনও আশা নেই বাংলাদেশ দলের কাছে। ২০২২ বা ২০২৩ সালের দুই ফরম্যাটের দুই বিশ্বকাপে যারা আশা করছিলেন বাংলাদেশ অন্তত সেমিফাইনালে উঠুক. তারা এবার বলছেন "একটু শুধু ভালো খেলুক!"
ওই দুটো টুর্নামেন্টে, এবং এখনও আসলে খুবই বাজে খেলছে বাংলাদেশ। এ বছর খেলা ৩টি সিরিজে দুটিতেই হার, জয় শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যারা বিশ্বকাপেই নেই। তাই আরও খারাপ ফলের আশংকা নিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা দেখতে টেলিভিশন বা মোবাইল সেট নিয়ে বসবেন দর্শকরা।

গা গরমের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বোলিং করার সময় ফিরে আসা বল ধরতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। এই শরিফুল এখন বাংলাদেশের মূল ফাস্ট বোলার হিসেবে বল হাতে নিচ্ছিলেন শেষ কিছুদিন ধরে। শরিফুল তার গতি ও সুইং দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং-এর সময় শারীরিক ভাষায় দৃশ্যতই বদল আনতে সক্ষম হন। এবারর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে ধরনের কন্ডিশনে খেলা হচ্ছে এবং বোলাররা যে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন উইকেট থেকে, তাতে করে শরিফুলকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবে দল। দলের অন্য পেসার তাসকিন আহমেদ ডালাসে সাংবাদিকদের বলেছেন, শরিফুলের না থাকা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর আগে ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে সে বছর চোটে পড়ে খেলা থেকে দূরে সরে গিয়েছেন এবাদত হোসেন, ক্রমশই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠছিলেন তিনি। তাসকিনও যে পুরোপুরি ফিট তা নয়, দল ঘোষণার আগে তাকে নিয়ে বারবার ভাবাও হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচকদের হাতে খুব বেশি অপশন নেই।


ব্যাটিং-এ দুরবস্থা, বিশেষত টপ অর্ডারে :   বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকদের চাকরি একদিক থেকে সহজ কারণ তাদের হাতে খুব বেশি অপশন নেই বেছে নেওয়ার জন্য, তাই ভাবনার জায়গাও কম।

আরেক দিক থেকে কঠিন - কারণ কোনও ক্রিকেটার ফর্ম হারালে তাকে বিশ্রাম বা বাদ দেওয়ার চিন্তা করলে সেই জায়গায় নতুন ক্রিকেটার নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটা খুব সহজ নয়!

ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন ক্রিকেটার খুবই কম, যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই কারও জায়গা নিয়ে নিতে পারবে।

যেমন লিটন দাস এই বছর ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন, কোনও ম্যাচেই ৪০ পার করতে পারেননি। সব মিলিয়ে ১০০ রানও করেননি এই ৮টি ম্যাচে, এর মধ্যে মাত্র একবার তিনি ১০০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন।

পরিসংখ্যানে যে দুরবস্থা দেখা যাচ্ছে সেটা ম্যাচ দেখলে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাবলীল, সুন্দর ব্যাটিং-এর জন্য প্রশংসা কুড়ানো লিটন দাসের ব্যাট যেন ভারি হয়ে উঠেছে এই বছর, ব্যাট নড়ছে না, পা জায়গা মতো পড়ছে না!

সব মিলিয়ে লিটন দাসকে নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়াটাই একটা বড় সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে।কিন্তু দেশের ক্রিকেটে খুব বেশি অপশন নেই যে ২০২২ ও ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং একই সাথে বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের একজনকে এভাবে বিশ্বকাপের আগে দল থেকে বাদ দেওয়া যাবে।

এমন সমস্যা হয়েছিল তামিম ইকবালকে নিয়েও। স্ট্রাইক রেট নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে তামিম ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

সেই সময় তামিমের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৬, এরপরে তার জায়গায় এসেছেন নাইম শেখ যার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট ১০৩। এখন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তার স্ট্রাইক রেট ১১০-এর আশেপাশে।

অর্থাৎ তামিমের পরে বাংলাদেশ দলে এমন কেউই আসেননি যে তামিমের চেয়ে বেশি গতিতে রান করতে পারছেন।

ঘুরেফিরে সেই সৌম্য সরকারকেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে জাতীয় দলে, যার টি-টোয়েন্টি গড় ২০-ও স্পর্শ করেনি।

মাঝে তেমন কোনও হিটার নেই :  বাংলাদেশ ক্রিকেটে তেমন মারকাটারি ব্যাটার নেই যারা ১০ থেকে ১৫ বল খেলেই ম্যাচের মোড় বদলে দিতে পারেন।

যদি এই বছরের পরিসংখ্যানও ধরা হয় সে ক্ষেত্রেও এক থেকে ছয়ে নামা কোনও ব্যাটার ১৫০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করতে পারেননি।

একমাত্র রিশাদের স্ট্রাইক রেট ১৫৫। তৌহিদ হৃদয়, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়া কারো পারফরম্যান্সই বলার মতো নয়।

এই বছরই প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামা তানজিদ তামিম শুধু কিছুটা ভালো খেলেছেন।

তবে বিশ্বকাপে প্রেক্ষাপট থাকবে ভিন্ন, যেমনটা দেখা গেছে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও।

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শান্ত, হৃদয়রা হুট করেই বিশ্বকাপে মাঠে নেমে ব্যাট হাতে নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছেন!

দলের অবস্থা দ্বিধাগ্রস্ত
বাংলাদেশ থেকে এক ঝাঁক সাংবাদিক এখন বিশ্বকাপ কভার করতে আমেরিকায় অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেট রিপোর্টার সাজিদ মুস্তাহিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "মনে করা হয়েছিল যে আমেরিকার সাথে সিরিজ হারের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল খানিকটা নেতিবাচক অবস্থানে থাকবে। কিন্তু এই হারের তেমন কোনও ছাপ দলে দেখা যাচ্ছে না।"

"শান্ত চেষ্টা করছেন দলটাকে এক সুতোয় বাঁধতে। কিন্তু যত যাই হোক তিনি তো মাশরাফী বা সাকিবের মতো করে সেটা পারবেন না, তিনি তার মতো চেষ্টা করছেন", জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আসলে এখন নিজেদের সামর্থ্য নিয়েই সন্দিহান।

যাদের ভালো করার কথা, তারা বারবার ঘুরেফিরে খুব সাদামাটা ক্রিকেট খেলছেন এবং তাদের জায়গায় নতুন কেউই উঠে আসছেন না, এই অবস্থাই আসলে দলকে আরও দুর্বল জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে।

সাজিদ মুস্তাহিদ জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ক্রিকেটের বাইরের কিছু আয়োজনেও যোগ দিয়েছে এর মাঝে, এর সবগুলোতে বিসিবির 'গ্রিন সিগনাল' ছিল না।

সাকিব আল হাসান নিজেই জানিয়েছেন তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের পরে ব্যক্তিগত কিছু কমিটমেন্ট পূর্ণ করতে কিছু আয়োজনে সামিল হবেন, সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের জন্য তিনি দলের সাথে একই যাত্রায় নাও থাকতে পারেন। এসব ঘটনা দলে কিছুটা হলেও প্রভাব রাখে।

সাজিদ মুস্তাহিদ বলেন, "দল জিতে গেলে হয়তো এসব নিয়ে তেমন কথা হবে না কিন্তু দল হারলে এগুলোই আলোচনায় উঠে আসবে, খেলার আলাপ হারিয়ে যাবে।"

মাঠে সাকিব বরাবরই বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত হলেও ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে মাঠেও তার ওপর শতভাগ আস্থা রাখা যাচ্ছে না, বলছিলেন সাজিদ মুস্তাহিদ।

মুস্তাহিদ নিয়মিত বাংলাদেশের অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করছেন। তার পর্যবেক্ষণ, সাকিবের চোখের অবস্থা এখনও পর্যন্ত ঠিক লাগছে না এবং বল আসার ঠিক আগের মুহূর্তে তিনি মাথার অবস্থান ঠিক রাখতে পারছেন না। মাঠে সাকিবের পরিসংখ্যানও করুণ, ৫ ম্যাচ খেলেছেন এই বছর আর রান করেছেন মাত্র ৫৮।

এই পাঁচটি ম্যাচই খেলেছেন জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। বল হাতেও বেশ সাদামাটা অবস্থা সাকিবের। এমন অবস্থায় সাকিব দলের জন্য একজন বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন কি না, সেটা টুর্নামেন্ট শুরু হলেই বোঝা যাবে।

উপরে