Main Logo
আপডেট : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:০৬

কাব‍্য নাটক : মুক্তির মিছিল

নাট‍্যকার: জাহিদুল কবীর রিটন

কাব‍্য নাটক : মুক্তির মিছিল
(পূর্ব প্রকাশিতের পর )
 
দৃশ্য ৫ 
 (মঞ্চে লাল মিয়ার প্রবেশ।)
 
লাল মিয়া : বহুদিনের স্বপ্ন 
আজ হবে পূর্ণ
ভাষার জন্যে যারা দিয়ে গেছে প্রাণ
ভুলিনি আমরা
ভুলিনি আমরা 
আমাদের গড়া শহীদ মিনারে
স্মরণ হবে তাদের ত্যাগের কথা-
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি...
[পলাশ ও শিমুলের প্রবেশ]
 
লাল মিয়া : [পলাশ ও শিমুলের দিকে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকবে]
পলাশ : কি দেখছেন এমন করে ?
যেন নতুন কিছু খুঁজে পেলেন
আমাদের মাঝে!
লাল মিয়া : শুধু যে দেখেছি এমনটি নয়
ভাবনাগুলিও সাথে আছে
গর্বের মিনার তোমরা দু’জন
আমাদের জীবন-ভুবনে!
শিমুল : [হাসি]
মিনার হলো নীরব পাথর
স্মৃতির আস্তরণ
বীরত্বের শেষ ঠিকানা
ঠায় দাঁড়িয়ে রয়।
আমরা তাহা নই!
শহীদ গাজি নই আমরা 
রণাঙ্গণে রই!
লাল মিয়া : [স্মিত হাসি]
রণাঙ্গণে!
তাহাই হউক!
জীবন যুদ্ধে জয় হউক!
প্রতিনিয়ত যুদ্ধ 
চলছে অনবরত
দিবানিশি এখানে
আঁধারের সাথে আলোর
মিথ্যার সাথে সত্যের
শোষকের সাথে শোষিতের 
অন্যায়ের সাথে ন্যায়ের,
পরাজয় আসতে পারে
তবে তাহা স্থায়ী নয়
মেঘ যতই ঘন হোক
কিরণেই জয় হয়!
পলাশ : মেঘের তাণ্ডব বড়োই নির্মম
স্বল্প সময়ের উপস্থিতে
লণ্ডভণ্ড করে দেয়
সাজানো-গোছানো অঞ্চলটিকে,
কিছু ক্ষত নয় সাময়িক
মনের মাঝে গেঁথে রয়
যতই চাই ভুলে যেতে
তবুও তাহা ভোলার নয়!
লাল মিয়া : মনের ক্ষত খুবই জটিল
যদি তাহা সৃষ্টি হয়
ক্ষমা দিয়েই এই ব্যথা
চিরতরে সারাতে হয়!
পলাশ : ক্ষমার কথা তখনই আসে
অপরাধী যদি অনুতপ্ত হয়
উদ্ধত হয়ে বিচরণকারী
ক্ষমা পাবার যোগ্য নয়!
ক্ষমা হচ্ছে মহৎ গুণ
মনুষ্যত্বের চিহ্ন তাহা
তাই বলে যখন তখন
অপাত্রে দানের নয়!
লাল মিয়া : বায়ব্য কোণে মেঘের ঘটা
ঝড়ের পূর্বাভাস
তোমার চোখে ক্রোধের ছায়া
ঝড়ের পূর্বাভাস,
ঝড়ের রূপ বড়ো কুৎসিত
তাণ্ডব হয় নির্মম
বহুদিন পরও দেখা মেলে যার
ধ্বংসের অক্ষত সেই চিহ্ন,
ক্রোধের রূপ আরোও ভয়ৎকর
তছনছ হয় বন্ধন
মনের ভাঙ্গন পাড়ের ভাঙ্গন নয়
মোছে না সেই চিহ্ন!
পলাশ : ক্রোধের চেয়েও কষ্ট বেশি
দেখা যাহা যায় না
স্বজনের এমন বেঈমানী আস্ফালন
মনের মাঝে সয় না!
লাল মিয়া : মনের এই কষ্ট-ঢেউয়ের
কারণ কি তা জানতে পারি
সাধ্যের মধ্যে উৎস হলে
ঢেউয়ের আঘাত থামবে জানি।
পলাশ : কষ্ট-ঢেউয়ের উৎস কি তা
আপনি তাহা ভালো জানেন
সর্বক্ষেত্রে ক্ষমা শুধু
বিপর্যয়ের বাহন হয়
ভাড়া নিয়ে মালিক দাবি
সামান্য বচন নয়
নানান জনের মুখে শুনি
তুতু কাকার প্রচারণা
দূরভিসন্ধির ষ্পষ্ট প্রমাণ
হেলাফেলার বিষয় নয়!
 
 
লাল মিয়া : [স্মিত হাস্য]
ও! ইহা! তাহা বলো
কান কথা শুনে নাচো!
শিমুল : আব্বা আপনার সরল মন 
তুতু কাকা তাহা নয়
শুধু যে দোকান নেবে
এমন কথাই বলে না সে
  ভিটে-বাটি যা কিছু আছে 
সব কিছুর দখল নেবে
যাদের কাছে এসব শুনি 
তারা মোদের শত্রু নয়!
লাল মিয়া : মিত্র যে খুব এমন কথাও
সর্বদা তাদের ভেবো না
রক্তের চেয়ে বড় বাঁধন
এই জগতে কিছু না,
তোমরা এখন বলছো যাহা
এমন কথা নতুন নয়
একেক সময় একেক জনের 
লোভের চোখ চকচক্ হয়,
কন্যার বিয়ের সময় তুতু
এমন কথা বলেছে জানি
ভাতিজির যদি ভালো হয় 
এমন কথা মন্দ তো নয় ;
তবে কি মা জানো ইহা
মিথ্যা শুধু মিথ্যা আনে
  আচমকাতে মিথ্যার পাহাড়
ধূলি হয়ে বাতাসে উড়ে!
 
পলাশ : আব্বা আপনি যাই ভাবেন
  আমরা হবো সতর্ক
ঢাল তলোয়ার ছাড়া কভ
যুদ্ধে টেকা যায় না!
লাল মিয়া : তোমরা যাহা বলতে চাও
  তাহা আমি ভাবছি এখন
সমাজে ঘটা কর্মকাণ্ড 
আমার কাছেও অজানা নয়!
চলো এবার যাওয়া যাক্
মিলন সমাজ মাঠের কাছে
সেখানটিতে দাঁড়িয়ে গেছে
আমাদের গড়া শহীদ মিনার,
কৃষ্ণচূড়ার ছায়াতলে
সাদা-লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে
বহু দিনের স্বপ্ন-সাধ
আজ হবে তার উন্মোচন!
পলাশ ও শিমুল : [শ্লোগানের কণ্ঠে]
বাংলা থেকে বাংলাদেশ
বাংলা থেকে বাংলাদেশ
বাংলা থেকে বাংলাদেশ
বাংলা থেকে বাংলাদেশ
[প্রস্থান]
লাল মিয়া : [গর্বিত কণ্ঠে]
শিক্ষার কি মর্ম, জানি বলেই ধন্য
শিক্ষার ক্ষেত্রে নেই ছেলে মেয়ের ব্যবধান
হায় আফসোস! যার করে উপহাস
তারা এসে দেখে যাক্
আমার কন্যাদ্বয় উচ্চকণ্ঠে বলে যায়-
‘বাংলা থেকে বাংলাদেশ’,
          ইহা উপলব্ধির বিষয়!
[প্রস্থান]
 
চলবে...
 
উপরে