আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:১৪
কাব্য নাটক : মুক্তির মিছিল ( ধারাবাহিক )
নাট্যকার : জাহিদুল কবির রিটন
( পূর্ব প্রকাশিতের পর-দশম কিস্তি )
দৃশ্য- ৪.
[ মঞ্চে পলাশ ও শিমুলের বিষণ্ণভাব নিয়ে প্রবেশ।]
পলাশ :পুরানো দিনে ঘরের বেড়াতে
ইজেলে সাঁটানো ক্যানভাসের মতো
সুতোর আলপনায় কাপড়ে লেখা
মনের মাঝে উঁকি দিলো
একটি শব্দ বদল হয়ে
নতুন রূপের প্রকাশ যেনো-
ভাই বড়ো ধন,
রক্তের বাঁধন
যদিও পৃথক হয়,
সম্পদের কারণ!
শিমুল : [কষ্টের হাসি]
নারী এখানে লুপ্ত
সম্পদ প্রকাশ্য
নেপথ্যে থাকে যারা
তারা হয় অষ্পষ্ট
কবিতার সেই পঙক্তিগুলি
মিছে কভু হয় না-
‘কোন কালে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী,
রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।’
পলাশ : স্মরণে আসে ইতিহাস মোদের
বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল যাদের
সেই মুক্তিযোদ্ধাগণের আগমন ঘটেছিল
মাধু মড়লের বাড়ি ধন্য হয়েছিল
খেসারত দিতে হয়েছিল পরে বাসিন্দাদের
হানাদার বাহিনীর আগুনের লেলিহানে
বাড়ি পুড়ে ছাই হলো
তবুও সেই গর্ব মনে রয়ে গেলো
সুবর্ণজয়ন্তীর প্রান্তে দাঁড়িয়ে
অধিকার হরণের খপ্পড়ে পড়েছি
সেই বাড়ির মেয়ে হয়ে
আমরা দু’জনে,
এরা ভুলে গেছে
ভস্ম হওয়া সেই বাড়ি
আবারো মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে
অরুণোদয়ের পরশ মেখে!
শিমুল : সত্যি এরা ভুলে গেছে
ভুলে গেছে সব কিছু
স্রষ্টার কথা,
পুত্র-কন্যা দেয়ার ক্ষমতা রাখেন যিনি
এরা যেন তার চেয়েও অগ্রগামী
নবীজির রওজা দেখে আসা হাজীদ্বয়
দ্বিধাহীন কণ্ঠে শুনিয়ে যায়
পুত্র না থাকার অক্ষমতার কথা,
বড় ভাই হয়ে তারা বেমালুম
ছোট ভাইয়ের মমতা,
এ যেন চেয়ারম্যানের ঘৃণ্য উক্তিরই প্রতিবার্তা-
‘পুত্র না থাকলে
এসব মেনে নিতে হয়
সবাই মানিয়ে নেয়,
মামুলি সমস্যা নিয়ে
আলোচনার কিছু নাই!’
পলাশ : আলোচনা চায় না তারা
হাঙ্গামা চায়
এটা মোরা খুব ভালো বুঝি
এই অবস্থায়
যদিও আলোচনারও তেমন কিছু নাই
টাকা আর জমির বিনিময়ে কেনা সম্পদ
রাধা চক্করের গোলক ধাঁধায় দলিল রেখে
প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়
দুষ্ট সংঘের দুর্বুদ্ধি এটা
ভয়-ভীতি দেখাবার পায়তারা যেটা,
পুত্রকে সাথে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়
মোদের বারান্দায় এসে
রাতের আঁধারে কেউ যেন না দেখে
এই মতলব এঁটে,
বড়দের উপস্থিতিতে তুতু কাকার আস্ফালন
এই বাড়ির আঙিনাতে বিষবৃক্ষের রোপন,
বোঝার ছিল যারা
হেরে গেলো তারা,
এভাবেই দিনের পর দিন হেরে যাচ্ছে মানবতা
এবং এটাই সামাজিক চলমান নিদারুণ বাস্তবতা !
শিমুল : আমরা হারবো না
অধিকারের প্রশ্নে ছাড় দেবো না
অন্ধকার যত গভীর হবে
সুবেহ সাদিক তত কাছে চলে আসবে!
পলাশ : মেয়ে বলে অবহেলা
মেনে নেবো কতো বেলা
জুলুমের শেষ হবে
আইনের পথ বেয়ে!
শিমুল : মানুষ যদি জেগে উঠে
জুলুমের অবসান হবেই হবে!
[প্রস্থান]
চলবে...