আপডেট : ১৫ মে, ২০২০ ২০:৪৫
সীমিত ব্যাংকিংয়ে ‘ঝুঁকি’, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে চলছে সাধারণ ছুটি। ছুটির মধ্যেই সীমিত আকারে চলছে ব্যাংকের কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে অনেক শাখা। ফলে যেসব শাখা খোলা থাকছে সেখানে সেবা পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন গ্রাহকরা, বাড়ছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি।
অন্যদিকে, সীমিত ব্যাংকিংয়ের কারণে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। একদিনের কাজ শেষ করতে লাগছে চার থেকে পাঁচদিন। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট শাখায় গ্রাহকের ভিড় কমাতে এবং সার্বক্ষণিক লেনদেনসহ সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকায় কাজের সময় কমেছে। অনেক শাখা বন্ধ রয়েছে। যেগুলো খোলা সেখানেও ব্যাংকাররা দুই শিফটে কাজ করছেন। সব সেবাও পাওয়া যাচ্ছে না। এতে একদিনের কাজ শেষ করতে চার থেকে পাঁচদিন লাগছে। ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বিলম্ব হচ্ছে, খরচও বেড়ে যাচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমও। তাই সাধারণ ছুটির মধ্যে যেহেতু সরকার দোকানপাট-শপিংমল, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছে সেহেতু ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং সব শাখা খোলা রাখাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি-রফতানি খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাণিজ্যিক এলাকার ব্যাংকগুলো খোলা রাখার সময়সীমা ও পরিধি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সাধারণ শাখাগুলোর কার্যক্রম এখনও বন্ধ রয়েছে। যেসব এলাকায় সীমিত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে সেখানে কর্মীদের পালাক্রমে দায়িত্বপালন ও রেশনিংয়ের কারণে সাধারণ জনগণের লেনদেন এবং কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণের পাশাপাশি ব্যবসায়িক গ্রাহকরাও ব্যাংকিং লেনদেনে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। ফলে করোনার এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এছাড়া সীমিত ব্যাংকিংয়ের করণে গ্রাহকরা প্রয়োজনীয় লেনদেন মেটাতে খোলা থাকা ব্যাংকগুলোর শাখায় ভিড় করছেন, অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি। অনেক স্থানে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী গ্রাহকদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত ব্যাংকিং বা পালাক্রমে দায়িত্বপালন বা রেশনিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক খোলা রাখার ব্যবস্থার পরিবর্তে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা গেলে সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালন সহজ হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং জটিলতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ধীরগতি, তা দূর করাও সম্ভব হবে।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী ছৈয়দ মুহাম্মদ শোয়াইব হাছান জাগো নিউজকে বলেন, সীমিত আকারে ব্যাংক খোলায় কাজের সময় কমেছে। ব্যাংকাররা দুই শিফটে কাজ করছেন। ফলে একদিনের কাজ চার থেকে পাঁচদিনের বেশি সময় নিয়ে করতে হচ্ছে। এলসি (ঋণপত্র) খুলতে বিলম্ব হচ্ছে। খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
‘এমন অবস্থায় সময় মতো এলসি জটিলতার সমাধান না হলে প্রয়োজনের সময় শিল্পের কাঁচামাল আনা সম্ভব হবে না। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু না হলে এ সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে পড়বে’— বলেন এ ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সব বন্ধ থাকলেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মহামারির সময়ও সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে লেনদেনের সময় ও শাখা খোলার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। আমদানি-রফতানি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম সচল রাখতে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনে নিয়োজিত সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের শাখা, বাণিজ্যিক এলাকায় সব শাখাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যাংকের শাখা খোলা রাখতে বলা হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
‘তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। স্বাস্থ্যঝুঁকি সবারই রয়েছে। তাই সরকারের নির্দেশনা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।’
ব্যাংকের শাখা খোলা প্রসঙ্গে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সীমিত ব্যাংকিংয়ের কারণে গ্রাহকদের সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি আমরাও বুঝি। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। কারণ জীবনের নিরাপত্তা সবচেয়ে বড়। তারপরও আমাদের কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে মাত্র ১৫টি শাখা খুলেছিলাম, এখন ৭০টি শাখা খুলছি। তার মানে, শাখা খোলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিফটভিত্তিক হিসাব করলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ শাখা খোলা। সময় খারাপ, বিষয়টি তো সবার বুঝতে হবে।
গ্রাহকদের সাধারণ লেনদেনের জন্য সবসময় ব্যাংকে না আসার পরামর্শ দিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০ বা ৫০ হাজার টাকার লেনদেনের জন্য ব্যাংকে না এসে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলুন। এখন অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে বাড়তি চার্জ দিতে হচ্ছে না। তাই সবসময় ব্যাংকে না এসে সহজ সেবাগুলো গ্রহণ করুন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারাদেশে সবধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই ছুটির মেয়াদ পর্যায়ক্রমে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সবশেষ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ৩০ মে করে সরকার।
প্রতিেবদক : মো. শফিকুল ইসলাম