রাজধানীর গরুর হাট
ছোট গরুর দাম ছড়া
কোরবানির ঈদের আর মাত্র বাকি ৫দিন। রাজধানীতে অস্থায়ীভাবে বসেছে পশুর হাট। বিভিন্ন জেলা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে হাটে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। রাজধানীর ধোলাইখাল ও পোস্তগোলা বালুর মাঠ এলাকার হাট ঘুরে দেখা গেছে ছোট গরুর দাম ছড়া। আজ সকালে ধোলাইখালের হাটে ছোট একটি গরুর দাম করেন ক্রেতা হানিফ মিয়া। গরু বিক্রেতা সেই গরুর দাম চান ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। দাম শুনে চমকে যান হানিফ মিয়া। তিনি সংবাদ এবং-কে বলেন, গত বছর একই রকম গরু কিনেছি ৬০ হাজার টাকায়। এবার এ লোক ১ লাখ ২০ হাাজার টাকা চাইলো?
রাজধানীর পোস্তাগোলা, ধোলাইখাল এবং শনির আখড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রধান সড়কজুড়ে অবৈধভাবে বসেছে গরুর হাট। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা গরু নিয়ে এলে রাস্তার মধ্যেই গরু নামানো হচ্ছে গরু। পাশাপাশি রাস্তার দুই পাশে অস্থায়ী খুঁটিতে বেঁধে রেখে চলছে বেচা-কেনা।
তকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকা থেকে ধোলাইখাল যেতে প্রথমেই চোখে পড়ে প্রধান সড়কের ওপর ইজারাদার আসফাক আজিম নামের বিশাল গরু ছাগলের হাটের একটি তোরণ। একটু সামনে যেতেই দেখা যায় প্রধান সড়কের দুই পাশে এবং মাঝখানে সারিবদ্ধভাবে গরু রাখা হয়েছে।
দয়াগঞ্জের এই সড়কে অন্যান্য দিনের তুলনায় যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে অসহনীয় গরমে যানজটে নাকাল হয়ে পড়ছেন এই পথে যাতায়াতকারী যাত্রীরা।
বেশ কয়েকটি পরিবহনের চালকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এই সড়কে মাঝে মধ্যে যানজট থাকে, তবে তা দীর্ঘ সময় ধরে নয়। কিন্তু বর্তমানে রাস্তার মধ্যে গরুর হাট বসায় সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গা গরুর হাট দখল করে নিয়েছে। এজন্য যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। দয়াগঞ্জ থেকে সদরঘাট এলাকায় যেতে সময় লাগছে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।
মাদারীপুর থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুর থেকে আমরা ২০টা গরু নিয়া আইছি। আমরা তো জানি না কোথায় গরু রাখতে হবে। হাটের লোকজন আমাদের দয়াগঞ্জের এই মেইন রাস্তার ওপরেই গরু রাখতে বলছে, তাই রাখছি। আমরা চাই না রাস্তা বন্ধ কইরা গরু রাখতে। আর এইখানে গরু রাখতে পুলিশ প্রশাসন কেউই আমাগো কোনো সমস্যা করছে না।’
রিকশাযোগে সদরঘাট যাচ্ছিলেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মারুফ হোসেন। ধোলাইখালের সড়কে যানজটে পড়েন। কিছুক্ষণ পর তিনি রিকশা থেকে নেমে দেখতে পান প্রশস্ত রাস্তা যেন সরু হয়ে গেছে। রাস্তায় বাঁশ গেড়ে সেখানে গরু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মারুফের সঙ্গে ঢাকা টাইমসের কথা হলে তিনি বলেন, ‘দেখেন রাস্তাজুড়ে গরু ছাগলের হাট বসছে। এটা নাকি আমাদের ডিজিটাল দেশ। ধোলাইখালের এই রাস্তা এখন গরুর হাট। আমাদের চাইতে গরুর কদরই এহন বেশি মনে হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মাঝারি সাইেজর গরু এবার এক লাখেন নিচে বিক্রি করবেন না। তার যুক্তি গরুর খাবারের দাম বেড়েছে। মাংসের দাম বেড়েছে। এবার কোরবানীর গরুর দামও বাড়তি থাকবে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ২৩টি গরু নিয়ে আসা নুরু মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গরুগুলা নিয়া ঢাকায় আইতে অনেক সময় লাগছে। কাইলকা (সোমবার) দুপুরে রওনা দিছি। গ
খাওয়া-দাওয়া নেই, ঘুমও নেই। ভোরে গরু নিয়ে ধোলাইখাল নামছি। এইহানের লোকজন আমাগো রাস্তায় গরু রাখতে কইছে। তারা রাস্তার অর্ধেক নাকি সরকারের থেইকা লিজ নিছে। তাই রাস্তার দুইপাশের অর্ধেক বাশ দিয়া গরু রাখার জায়গা কইরা দিছে। এইহানে আমাগো গরু রাখতে কোনো সমস্যা নাই। তয় রাস্তায় সকাল থেইকা জাম লাইগা আছে। এইডাতো আর আমাগো দোষ না।’
ধোলাইখাল এলাকার সড়কগুলোতে দেখা যায় সড়কের দুপাশ জুড়েই বাঁশ দিয়ে গরু রাখার জায়গা করা হয়েছে। এছাড়াও বাঁশের ওপর ত্রিপল দিয়ে ছাউনিও দেওয়া হয়েছে। গরু রাখায় ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে সড়কের বাকি অংশ। এছাড়াও সড়কের দুপাশের হাঁটাচলার ফুটপাতও দখল করে রাখা হয়েছে গোখাদ্য রেখে। ফুটপাতে দখল করে অনেক ব্যাপারীরা আবার রাত্রিযাপনের স্থানও বানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ওসি (অপারেশন) বাইতুল ইসলাম বলেন, ‘ধোলাইখালের রাস্তার ওপরেই হাট হয়। আর তো কোনো জায়গা নেই। তবে আমি নতুন এসেছি। ইজারা কোথায় দিয়েছে সেটা জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’