ফেব্রুয়ারিতে স্কুল কলেজ খোলার জোর সম্ভাবনা
করোনার কারণে প্রায় ১১ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমতির দিকে। এ মাসে করোনার টিকাও দেশে পৌঁছনোর কথা। এ অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য স্কুল-কলেজ খোলার জোরালো সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অবশ্য মন্ত্রণালয় এমন পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চলতি সপ্তাহেই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসার পরিকল্পনা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিকসহ বিভিন্নজনের মতামত নেবে মন্ত্রণালয়। এরপর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে ৩০ জানুয়ারির আগেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পক্ষে নই। আবার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথাও আমাদের গুরুত্বসহকারে ভাবতে হচ্ছে।’ তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফেব্রুয়ারিতে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনার কথা আগেই জানানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সচিব বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা জানতে আমরা চলতি সপ্তাহেই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসব। এরপর শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, করোনার কারণে স্কুলের কার্যক্রম আরো এক বছর ব্যাহত হলে সেই ক্ষতির ভার শিশুরা বইতে পারবে না। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য প্রায় সব কিছুই অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এমনকি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গেলেও নিয়মিতই ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যুক্তি কী হতে পারে?
গত বছর সাধারণত এক মাস করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়। তবে গত ১৫ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত করেছে। এতে অনেকেই মনে করছেন, ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হতে পারে। স্কুল-কলেজগুলোও অনেকটা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, যাতে সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলতে পারি।’
স্কুল খোলার জন্য তাঁরা প্রস্তুত আছেন বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতেই স্কুল-কলেজ খোলা হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আংশিক শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিত রাখার ব্যাপারটি চিন্তা করা হচ্ছে। একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক দিন স্কুলে উপস্থিত করা হতে পারে।
গত ডিসেম্বরের শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে এলে আগামী জুনে এসএসসি এবং জুলাই-আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। তবে এর আগে এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস পুনর্বিন্যস্ত করা হচ্ছে। এই শিক্ষার্থীদের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে স্কুল-কলেজ খোলার চিন্তা করতে বলেছিল। কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। গতকালও এই হার ছিল ৫.৪৯ শতাংশ।
জানা যায়, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির স্কুলগুলো শুধু দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য গতকাল থেকে খুলেছে। অবশ্য যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি, সেখানকার স্কুল এখনো খোলা হয়নি। যেসব এলাকায় স্কুল খুলেছে, সেখানে মা-বাবার লিখিত অনুমতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। স্কুলে ক্লাসের সময় ছয় ঘণ্টা থেকে কমিয়ে দুই ঘণ্টা করা হয়েছে। ৫০ জনের বেশি ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবে না। ল্যাবে একসঙ্গে ১০ জনের বেশি থাকতে পারবে না। স্কুলের মূল ফটক ক্লাসের আগে খুলে দেওয়া হয়, যাতে সেখানে ভিড় না হয়।
সূত্র : কালের কণ্ঠ