বিনোদনকেন্দ্র খুলল সাত মাস পর
সাত মাস পর খুলল চিড়িয়াখানা। প্রথম দিনের ভিড়ই বলে দেয় ঘরবন্দি অবস্থা থেকে বের হয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচার কথা। গতকাল তোলা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের বড় বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ফলে দীর্ঘসময় ধরে চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকা শিশু-কিশোরদের নিয়ে এসব বিনোদন কেন্দ্রে ছুটছেন অভিভাবকরা। গতকাল রবিবার দর্শনার্থীদের জমজমাট উপস্থিতি ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, সুন্দরবন, সাফারি পার্কসহ দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ঘরে আবদ্ধ থাকা সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আনন্দযাত্রার বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার ঘটনা প্রশান্তি এনে দিয়েছে অভিভাবকদের মনে। শুধু শিশুরাই নয়, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সব বয়সী লোকজনের ভিড় দেখা গেছে গতকাল।
দীর্ঘ লাইন জাতীয় চিড়িয়াখানায় : সাত মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানার দরজা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীদের পদচারণে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণ। চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য দীর্ঘ লাইন লক্ষ করা গেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম রবিবার দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী গতকাল টিকিট ছাড়াই প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে দর্শনার্থীরা। জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড. আব্দুল লতিফ জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রবেশের আগে তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। কারো তাপমাত্রা বেশি হলে বা মাস্ক না থাকলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
সীমিত পরিসরে খুলেছে জাতীয় জাদুঘর : গতকাল সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় জাদুঘরও। আগে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার দর্শনার্থী জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনে যেতে পারলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই সংখ্যা কমিয়ে এখন ৫০০ থেকে ৮০০-এর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। গেটের সামনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম দিন গতকাল চার শতাধিক দর্শনার্থী জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনে যায়।
দর্শনার্থীদের ভিড় সুন্দরবনের করমজলে : পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় গতকাল সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের ভিড় জমেছে মোংলার পিকনিক কর্নারে। সেখান থেকেই বিভিন্ন নৌযানে করে তারা যাচ্ছে সুন্দরবন ভ্রমণে। সবচেয়ে কাছাকাছি ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হওয়ায় করমজলে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটকরা যাচ্ছে হাড়বাড়িয়া, হিরণপয়েন্ট, কটকা, কচিখালী, সুপতি ও দুবলায়। তাদের সব ধরনের সহায়তা করছেন বন প্রহরীরা। করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, শর্তসাপেক্ষে সুন্দরবন খুলে দেওয়ার পূর্ব ঘোষণার কারণেই পর্যটকরা ভ্রমণে আসতে শুরু করেছে। সরকার ঘোষিত করোনা বিধিনিষেধ ও শর্ত মেনেই পর্যটকদের বনে ভ্রমণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে।
মাস্ক ছাড়া সাফারি পার্কে প্রবেশ নয় : করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক ছাড়া দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। গতকাল সকাল ৯টায় পার্কের প্রধান ফটক খোলার আগেই বাইরে ব্যানারে নির্দেশনা দেখে নিতে বলা হয় দর্শনার্থীদের। পরে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘদিন পর খোলার প্রথম দিন গতকাল দর্শনার্থী ছিল খুবই কম। মূল ফটক ছাড়াও ভেতরের ১০টি টিকিট কাউন্টারের সামনে তিন ফুট দূরে দূরে গোল চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছে। সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান জানান, গতকাল সব মিলিয়ে দর্শনার্থী ছিল হাজারখানেক। পার্ক খোলার বিষয়টি সবাই জানার পর দর্শনার্থী বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
সূত্র : কালের কণ্ঠ