হুমায়রা হিমুকে নিয়ে অভিনেতা ছিদ্দিকের আবেগঘন স্ট্যাটাস
চিরতরে চলে যাওয়া হুমায়রা হিমুকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার সহকর্মী অভিনেতা ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি আজ শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকাল বেশ কয়েকটা ছবি দিয়ে ফেসবুক লিখেছেন, ‘মৃত্যুটা কত সহজ। এক মিনিটে নাই ভরসা, এটা কথাটা আবারও প্রমাণ করলো অভিনেত্রী হোমায়রা হিমু।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার অ্যালবামের ছবিগুলো সত্যিকারে ছবি হয়ে গেল। আমার মনে হয় আমার অভিনীত সবচাইতে বেশি নাটকের নায়িকা ছিল হোমায়রা হিমু। শুটিংয়ে দেখা হলেই বলতো ভাইয়া আমার মনে হয় বিয়ে হবে না কোনোদিন। বলতাম কেন রে?। সবাই খালি তোমার সাথে যখন অভিনয় নেয় আমাকে ঝগড়াটে চরিত্র দেয়। এইসব টেলিভিশনে দেখে সবাই ভাবে বাস্তব ও আমি বোধহয় একটা ঝগড়াটে মেয়ে। আর এমন একটা ঝগড়াটে মেয়েকে কে বিয়ে করবে বলো? আমি হাসতাম আর বলতাম আরে পাগল তোর বিয়ে হবে, সুন্দর একটা ছেলে দেখে তোকে বিয়ে দিয়ে দেবো আমরা। আমি চিত্রলেখা দিদি, ডলি ভাবি, নাদিয়া, বন্ধু রুমি, দিলু ভাই, আশিক এবং পরিচালক সোহাগ কাজী অনেক মজা করতাম ওর বিয়ের বিষয় নিয়ে বউ বিরোধ নাটকের শুটিংয়ের সময়। অনেক হাসাহাসি করতাম আমরা।’
ছিদ্দিকুর রহমান লিখেছেন, ‘আজ এইসব কথা ভাবলেই অনেক খারাপ লাগে যে মেয়েটাকে আমরা বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম আজ সেই মেয়েটাই কি না এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে। এটা কি মেনে নেওয়া যায়? আর কখনো হোমায়রা হিমু বলবে না তার বিয়ের কথা। বাবাকে হারিয়েছিল অনেক আগে। মা ছিল তার একমাত্র বন্ধু, জীবনের সঙ্গী। সেই মাকেও হারিয়েছে প্রায় বছর দুয়েক আগে। বড় একা ছিল সে। মা-মারা যাওয়ার পর থেকে শুটিং আসতো সবসময় লেট করে, আমরা জিজ্ঞাসা করলেই বলতো ভাইয়া একা থাকি, ঘুম থেকে উঠতে পারি না। পরিচালক এবং আমরা কিছু বলতাম না কারণ যখন অভিনয় শুরু করতো কিঞ্চিত পরিমাণে ভুল হতো না এই মেয়েটির এক শট দ্বিতীয়বার দিতো না। পরিচালক হাসি দিয়ে বলতো ওকে হিমু আপু বা হিমু চলেন লাঞ্চ ব্রেক।
হোমায়রা হিমুর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি আরও লিখেছেন, সারাক্ষণ মেকআপের টেবিলে, চেয়ারে বসে ফাঁক পেলে ঘুমিয়ে পড়তো। ধমকের সুরে বলতাম হিমু। সে বলতে বলো আমি কি ঘুমিয়েছি নাকি? চলো একবার রিহার্সেল করে নেই। চলো। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারতেছি না হিমু সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গিয়েছে চিরজীবনের মতো আর তাকে দেখতে পাবো না শুটিং সেটে। পরিচালক আর কমপ্লেন দেবে না হিমু সেটে আসে নাই সিদ্দিক ভাই। ওকে নিয়ে আর কোনো কথাই শুনতে হবে না আমাদের। তবে ফজরের নামাজের পর শুধু একটা কথাই বলতে চাই সবাইকে হোমায়রা হিমুর জন্য দোয়া করবেন। মা-মরা এতিম মেয়েটাকে যেন আল্লাহপাক ভালো রাখেন পরকালে এবং জান্নাতুল ফেরদৌসের নসিব করেন। আল্লাহপাক সবাইকে হেফাজত করুন।
হোমাইরা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম নাট্যজগতে প্রবেশ করেন। ফ্রেঞ্চ নামক নাট্যদলের হয়ে তিনি অভিনয় করেন।
২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে হুমায়রা হিমুর অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রের গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিল।