Main Logo
আপডেট : ১৫ মে, ২০২০ ১৫:২৬

অনলাইনে দেদার বেচা বিক্রি হচ্ছে

দেড়শো টাকায় মিলছে পিপিই

রেইন কোটকেও চালানো হচ্ছে পিপিই হিসেবে

দেড়শো টাকায় মিলছে পিপিই



কানিজ  ফাতেমা
পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পাওয়া যাচ্ছে না এমন আলোচনা ছিল ক’দিন আগেও। সেই পিপিই এখন মিল্েছ ফুটপাতে। দামও হাতের নাগালে। দেড়শো টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এই পিপিই। তবে এসব পিপিই করোনা ভাইরাস থেকে কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে খোদ ক্রেতাদের মাঝেই। এরপরও দেদার কিনছে মানুষ। রেইন কোটকেও পিপিই হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর  মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস রাস্তায় রাস্তায় বিক্রির জন্য দাড়িয়ে থাকছে হকাররা। 
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এ ছাড়া খোজ নিয়ে জানা গেছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক-উদ্বেগের কারনে সুরক্ষাপণ্যের জমজমাট কেনাকাটা চলছে অনলাইন-ভিত্তিক ই-কমার্স এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুকে দেয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপন। মানের কোনো বালাই না থাকলেও দাম নিয়ন্ত্রণহীন। যে যার মতো বানাচ্ছে, আর ব্যবসা করছে। আবার বিভিন্ন ওষুধের দোকান কিংবা ফুটপাথেও এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
গত তিন দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে  রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, টিকাটুলীসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে পিপিই বিক্রি হচ্ছে। ওয়ারি এলাকার টিকাটুলী এলাকায় রাজধানী মার্কেটের পাশে দেখা গেছে সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে  কয়েকটি দোকান বসেছে। তাদের দোকানে পাওয়া যায় পিপিই, মাস্ক, কয়েক ধরনের চশমাসহ নানা সরঞ্জাম। দেখা যাায় দেড়শো টাকা থেকে ৮০০ টাকায় তারা বিক্রি করছেন পিপিই। এক দোকানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, দেড়শো টাকা দামের পিপিই খুব ভাল। এটি ধুয়ে পরা যায়। আর ৮ শ’ টাকার দামের পিপিই দেখা গেছে রেইন কোটের মতো। মানুষজন ফুটপাথে জামা কাপড় কেনার মতো করে পিপিই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার টিকাটুলী এলাকা থেকে একটি চশমা কিনেন রফিকুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, প্লাস্টিকের চশমাটি চোখের অনেক উপরে থাকে। দুচোখের চারদিকে অটকে রাখে। জিনিসটটি দেখতে ভাল মনে করে তিনি দেড়শো টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। বাসায় নিয়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরতে গিয়ে দখেন ঝপসা দেখা যায়। এটা কেনার সময় করোনা ভাইরাসের ভয়ে পরতে পারেননি। যে কারনে তিনি ঠকেছেন। 
গতকাল বিকালে জসিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা পিপিই’র ধরদাম করছিলেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এতো কম দামে পিপিই বিক্রি করছে বিষয়টি সন্দেহ জনক। ব্যবহৃত পিপিই ধুয়ে আবার বিক্রি করতে এনেছে কি না কে জানে। তার মতে যারা এসব পিপিই ফুটপাথে বিক্রি করছেন সেগুলো কি সত্যিই পিপিই কি না সেটা সরকারের তরফ থেকে পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
তিনি আরো বলেন, ৮০০ টাকা দাম চেয়েছে সেটিকে আমার কাছে রেইন কোট মনে হয়েছে। পাশ থেকে আরো একজন বললেন- রেইন কোট কি বলছেন, এটাতো রেইনকোটই। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইনে দেদার বিক্রি হচ্ছে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই। এসবের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও প্রয়োজন এবং বাস্তবতার কারণে অনেকেই অনলাইন কেনাকাটায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। অনলাইন আলীবাবা, দারাজ, আলিএক্সপ্রেসের পাশাপাশি অখ্যাতরাও নেমে পড়েছেন এই ব্যবসায়। দ্রব্যের গুণগত মান না থাকলেও নেয়া হচ্ছে চড়া দাম।
করোনাভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোনো যথাযথ চিকিৎসাব্যবস্থা আবিষ্কৃত না হওয়ায় সতর্কতাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। রক্ষাকবচ হিসেবে ধরা হচ্ছে মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজারকে। আর রোগীর কাছে যারা থাকবেন তাদের জন্য পিপিই। এসব পণ্যের মানদণ্ড হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়েছে নির্ধারিত গাইডলাইন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, কোভিড-১৯-এর রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের বিশেষ পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট পরতে হবে। তবে এটি হতে হবে রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধযোগ্য (কেমিক্যাল হ্যাজার্ড প্রিভেন্টেবল)। এ ছাড়া এই পোশাক হতে হবে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী। এই পোশাক হবে কম্বো পিপিই-কাভারঅল, হেডমাস্ক, গগলস, বুট এবং সুকাভারসহ। এগুলো হবে ডিসপোজেবল, একবার পরার পর ফেলে দিতে হবে। চিকিৎসক, রোগীর কক্ষে থাকা স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ প্রতিটি স্তরের পেশাজীবীর জন্য পৃথক পৃথক পিপিই’র কথা বলা হয়েছে। আর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পিপিই পরা মানে কোভিড-১৯কে আরো ছড়িয়ে দেয়া।
আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে নানা ধরনের কাপড় সেলাই করে পিপিই হিসেবে বাজারে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। পিপিই হিসেবে ব্যবহারযোগ্য না হয়ে বরং এগুলোর ব্যবহারে সংক্রমণের শঙ্কার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ব্যাপক চাহিদা থাকায়, গার্মেন্টসের পাশাপাশি রাস্তার অলিগলির টেইলার্স দোকানেও এখন বাজারের ব্যাগের কাপড়সহ বিভিন্ন কাপড় দিয়ে পিপিই তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ ঘুরে দেখা যায়, দেশে তৈরি মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। একটু উন্নতমানের মাস্ক নিতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই শ’ টাকা। সাথে রয়েছে ডেলিভারি চার্জ। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রে ৫০ মিলিলিটারের প্রতি বোতল বিক্রি হচ্ছে এক শ’ থেকে ১২০ টাকায়। 

 

উপরে