"ডেঙ্গুরোগসহ ভেক্টর-বর্ণ ডিজিজসমূহ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী" - স্বাস্থ্যদিবসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
গতকাল ৩ নভেম্বর, রবিবার, দুবাই-এ ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ২০২৩ (কপ ২৮) এক দিনের জন্য একটি বিশেষ হেলথ ডে (স্বাস্থ্য দিবস) উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৈঠক ও আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মন্ত্রী জাহিদ মালেক-সহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।স্বাস্থ্যদিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, "বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। ডেঙ্গুরোগসহ অন্যান্য ভেক্টর-বর্ণ ডিজিজসমূহ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। এই জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো দায় এড়াতে পারে না। এ কারনে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি কমিয়ে নিতে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোকে সহযোগিতার হাত আরো প্রসারিত করতে হবে, পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে সহোযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।"
গতকাল সকালে প্রথমে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক আয়োজিত "Launch of Asian Development Bank led climate and health initiatives " শিরোনামে গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসময় বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভেক্টর বর্ন রোগব্যাধিও বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বব্যাপী ডেংগু আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া অন্যতম। মন্ত্রী তার বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে নানাবিধ তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। যার ফলে আমাদেরকে এই সমস্ত রোগসমূহ ম্যানেজ করতে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। হাসপাতালের বিছানা ডেঙ্গু রোগীদের দিয়ে ভর্তি থাকছে। যার ফলে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকায় অন্য রোগীরা স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।"
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিকর দিক সমূহ তুলে ধরে সভায় বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এর উদ্যোগ ও সহায়তায় বাংলাদেশে জলবায়ু বান্ধব ভ্যাক্সিন প্ল্যান্ট স্থাপিত হতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এসময় এডিবি প্রতিনিধিদের বিশেষ ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সাথে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মানে কার্যকরী পদক্ষেপ সহ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার আহবান জানান।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী "Walking the Talk with the Climate and Health Action" শীর্ষক আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যসেবায় কি ধরনের ক্ষতি হয় এবং কীভাবে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যায়, তা তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুষ্টি ও জনসংখ্যা উন্নয়ন প্রোগ্রামে (৫ম সেক্টর প্ল্যান) নামে আরেকটি বৈঠকে অংশ নিয়ে জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি সকল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে স্মার্ট এবং জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মানে অংশগ্রহণ করার আহবান জানান।
এর পর বিকেলে স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে "Climate Health Ministerial" শীর্ষক আরেকটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধি বর্গ। এই সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সভায় উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশ তথা যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদেরকে কমিটমেন্ট অনুযায়ী সহযোগিতা করার আহবান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
উল্লেখ্য, এই সভায় প্রথমবারের মতো "Health Ministerial Declaration" গৃহীত হয়। বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে এই Declaration কে জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তিনটি সুপারিশ দেন; ১. জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানানসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; ২. স্বাস্থ্যখাতে জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ খুজে বের করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে; এবং ৩. আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতার উপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট বক্তা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলমও অংশ নেন। সচিব তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক পলিসিসমূহ এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে সৃষ্ট নানাবিধ চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সকলের করণীয় কী কী তাও তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন এবং সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
হেলথ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দিনের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোর ভুয়সী প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যখাতে আরো সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের আশ্বাস দেন।
দুবাই এর কপ ২৮ এর বিশেষ স্বাস্থ্য দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মো: মামুনুর রশিদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব এম আই প্রধান মুকুল । স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোঃ রিয়াজুল হক, সচিবের একান্ত সচিব মো. আবু রায়হান দোলন, ডা. মো: মফিজুল ইসলাম বুলবুল, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এনএনএস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ডা. মোহাম্মদ ফেরদৌস রহমান সরকার, সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার, আইইডিসিআর।