শরীয়তপুরে প্রথমবারের মতো চার ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের একজনের বাড়ি জাজিরা মুলনা ইউনিয়নে এবং অপর তিনজনের বাড়ি সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় প্রশাসন ওই দুটি ইউনিয়নের ৮২টি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছেন।
আক্রান্ত চারজনের মধ্যে জাজিরার মুলনা ইউনিয়নের বাসিন্দা ঢাকার আজিমপুরে থাকতেন। ওই ব্যক্তিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কুর্মিটোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চিতলিয়ায় আক্রান্ত তিন ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। সম্প্রতি তাঁরা শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িতে আসেন।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি অ্যাম্বুলেন্সে মুলনা থেকে ওই ব্যক্তিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রেখে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়,শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক পরিবারের চার সদস্য নারায়ণগঞ্জে থাকেন। ওই পরিবারের দুই পুরুষ সদস্য সেখানে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। ৯ এপ্রিল তাঁরা নারায়ণগঞ্জ থেকে শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে আসেন। এমন খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেন। পরে ওই চার ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে গত শনিবার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। গত সোমবার সেখান থেকে তাঁদের পাঠানো নমুনার ফলাফলে তিনজনের শরীরের করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাঁদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জাজিরার মুলনা ইউনিয়নের ওই ব্যক্তি ঢাকার আজিমপুরে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা। তিনি সম্প্রতি জাজিরার গ্রামের বাড়িতে আসেন। জ্বর, ঠান্ডা ও কাশির লক্ষণ দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ শনিবার তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। সোমবার আইইডিসিআর থেকে ওই ব্যক্তির করোনা সংক্রমণের খবর জানানো হয়।
ওই চার ব্যক্তির মধ্যে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন সোমবার বিকেলে জাজিরার মুলনা ইউনিয়নের একটি গ্রামের ৮০টি বাড়ি ও চিতলিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের ২টি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ বলেন, এর আগে ৪ এপ্রিল শরীয়তপুরের এক ব্যক্তি ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সোমবার পর্যন্ত শরীয়তপুরে ৩৯ ব্যক্তির ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে ৪ জনের দেহে সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। আর ৩৫ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। আর ১১ ব্যক্তির নমুনার ফলাফল আইইডিসিআর থেকে এখনো আসেনি।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, নৌপথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ শরীয়তপুরে আসছেন। ঠিক কত মানুষ এভাবে শরীয়তপুরে এসেছেন, তার কোনো সঠিক তথ্য তাঁদের কাছে নেই।
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন,ওই দুটি পরিবারসহ তাদের আশপাশের ৮২টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন ওই গ্রাম দুটির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। আর নারায়ণগঞ্জ-ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সম্প্রতি যাঁরা শরীয়তপুরে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।