চোরাপথে কোরবানির পশু কোনোভাবেই যেন দেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। এই ইস্যুতে সাধারণ কোরবানির পশু বিক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডিজিটাল মাধ্যমে আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক হতে যাচ্ছে। আজকের বৈঠকের আটটি এজেন্ডার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে কোরবানি উপলক্ষে অবৈধ পথে পশু আমদানি ঠেকানো। দেশে খামারি ও গৃহস্থালি পর্যায়ে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু আছে। এ ছাড়া করোনার কারণে টানা চার মাস ছোট-বড় সব অনুষ্ঠান বন্ধ, হোটেল ও খুচরা বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে কম। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি গরু মজুদ থাকায় প্রকৃত দাম পাবেন কি না তা নিয়ে বিক্রেতারা রয়েছেন চিন্তায়। এর মধ্যে চোরাপথে কোরবানির পশু দেশে ঢুকলে খামারিদের স্বপ্ন মাঠে মারা যাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট গরু, মহিষ ও ছাগলের সংখ্যা দুই কোটি ৪৯ লাখ। এর মধ্যে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। ২০১৯ সালে কোরবানির জন্য গরু, ছাগল ও মহিষের চাহিদা ছিল এক কোটি চার লাখের মতো। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে কোরবানির চাহিদা বাড়ার হিসাবে এবার এক কোটি ১২ লাখের মতো গরু, মহিষ ও ছাগলের চাহিদা থাকার কথা। কিন্তু করোনার কারণে চাহিদা বাড়ার কারণ দেখছে না প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এবার কোরবানির চাহিদা ধরা হয়েছে আনুমানিক এক কোটি পাঁচ লাখের মতো। এর মধ্যে গরুর চাহিদা আছে ৪২ লাখের মতো, বাকিটা মহিষ ও ছাগলের মাধ্যমে পূরণ হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশ থেকে কোরবানির পশু আনার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। দেশীয় উৎস থেকেই আমরা পর্যাপ্ত গরু, মহিষ ও ছাগল পাচ্ছি। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অন্য দেশের পশু চোরাপথে দেশে আনতে না দেওয়ার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। আজকের বৈঠকের পর সেটি আরো জোরালোভাবে তাগিদ দেওয়া হবে। ঈদ সামনে রেখে মূলত সীমান্তপথ দিয়ে চোরাই পশু ঢোকানোর হিড়িক পড়ে। এটা কঠোরভাবে বন্ধ করতে চায় মন্ত্রণালয়।
চার-পাঁচ বছর ধরে ভারত থেকে পশু আনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর দেশি চাহিদা, বিশেষ করে কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিগত বছরগুলোতে দেশি খামারি ও গৃহস্থালি পর্যায়ের পশু দিয়েই চাহিদা পূরণ হয়েছে। তার পরও চোরাচালানিসহ বিভিন্নভাবে কিছু পশু দেশে আনা হচ্ছে। কিন্তু এবার করোনার কারণে একদিকে কোরবানির চাহিদা কম, তার ওপর পর্যাপ্ত পশু দেশেই আছে। তাই এবার চোরাই পশু ঠেকাতে আগেভাগেই তৎপর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
আজকের আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠকের এজেন্ডায় আরো রয়েছে—কোরবানির হাটে ভেটেরিনারি সেবা দেওয়ার জন্য স্টল বরাদ্দ এবং ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন, গবাদি পশুতে স্টেরয়েড বা হরমোনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব কোরবানি নিশ্চিত। আন্ত বিভাগ সমন্বয়ের দায়িত্ব নির্ধারণ, ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রমের তদারকি ও যথাযথ প্রচারণার ব্যবস্থা করা এবং ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমের ক্যাম্প স্থাপন ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যবস্থা।
সূত্র : কালের কণ্ঠ