logo
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:৩২
টিকা নিয়ে হঠাৎ রাখঢাক!
অনলাইন ডেস্ক

টিকা নিয়ে হঠাৎ রাখঢাক!

অনেক দেশেই করোনার টিকা দেওয়া চলছে, এমনকি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা কয়েকটি দেশেও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে টিকা পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হচ্ছে হতাশা। টিকা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে এক ধরনের রাখঢাক। তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে লুকোছাপা বা মুখ বন্ধ রাখার অবস্থান নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। আগে যাঁরা কথা বলতেন তাঁরাও এখন একে অন্যকে দেখিয়ে দিচ্ছেন; কিন্তু কেউ পরিষ্কার কিছুই জানাতে চাচ্ছেন না।

বিভিন্ন মহল থেকে বারবার সতর্ক করার পরও এখন পর্যন্ত সরকারের হাতে ভারতের সেরাম (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড) ও কোভ্যাক্স ছাড়া অন্য কিছুই হাতে নেই। এমনকি অন্য কিছুর জন্য চেষ্টার কথা বলা হলেও এর প্রকাশ্য কোনো অগ্রগতির খবর নেই। কেন অন্য কোনো টিকার জোগান এখনো সরকার করতে পারছে না, এ ব্যাপারে খুব একটা জোরালো বক্তব্যও মিলছে না সরকারের তরফ থেকে।

ফলে এখন পুরনো প্রশ্নই আবার বড় হয়ে সামনে এসেছে—যদি সেরাম বা কোভ্যাক্স থেকে টিকা পেতে আরো দেরি হয়ে যায়, তত দিন কী করবে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—কোনো কৌতূহল বা অতি উৎসাহে সরকার এমন কোনো কাজ করতে চায় না, যাতে দেশের মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়ে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান গতকাল শনিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপাতত আমাদের হাতে আর কোনো নিশ্চিত টিকার আগাম জোগান নেই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এফডিএ, ইউরোপীয় কমিশন, যুক্তরাজ্যের মতো কোনো দেশ-প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া কোনো টিকা আমরা দেশে আনব না। এতে যদি আমাদের দেরি হয়—হোক।’ তিনি বলেন, ‘যদি অক্সফোর্ডের টিকা যুক্তরাজ্যে অনুমোদনের আগে ভারত অনুমোদন দিয়েও দেয়, তবু আমরা আমাদের পলিসির বাইরে যাব না; অপেক্ষা করব। কারণ আমরা আমাদের দেশের মানুষের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব।’

অন্য যেসব দেশে ফাইজার, মডার্না, রাশিয়া কিংবা চীনের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে সেগুলো নিয়ে দেশে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘আমরা আপাতত সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেরাম ও কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়ার জন্যই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এর বাইরে যদি বেসরকারি সেক্টর থেকে কেউ এগিয়ে আসে আমাদের আমাদের পলিসির মধ্যে থেকে, সেগুলো বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এখন শুরুর দিকে কেউ কেউ যোগাযোগ করলেও আমদানির জন্য কেউ যোগাযোগ করছে না। আমরা তো কাউকে বাধা দিচ্ছি না। যদিও ভারত বায়োটেক ও চীনের অপর একটি প্রতিষ্ঠান দেশে ট্রায়াল ও উৎপাদনের আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং কথাবার্তা বলছে। সেগুলো আরো কিছুটা পূর্ণতা না পাওয়া পর্যন্ত বলতে চাচ্ছি না।’

অণুজীববিজ্ঞানী সমীর কুমার সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি খুবই আশাবাদী, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন হয়ে যাবে। তবে তার পরেও বলব, আমাদের দেশে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে রাশিয়া ও চীনের টিকার দিকে নজর বাড়ানো দরকার। কারণ শুধু একটি সোর্সের ওপর ভর করে থাকা ঠিক হচ্ছে না।’

এদিকে দেশে আর কোনো প্রতিষ্ঠান টিকা আনার জন্য সরকারের কাছে এখনো আবেদন করেনি বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র। যদিও এই দপ্তরও এ ক্ষেত্রে মুখ খুলছে না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্ট করা হলেও তাঁর সারা মেলেনি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি) ডা. সামসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে সে অনুসারে বলতি পারি, বড় কোনো ব্যত্যয় না ঘটলে হয়তো দু-এক দিনের মধ্যেই যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন পেয়ে যাবে। সেখানে এমন প্রস্তুতি চলছে বলেও জানতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে আর কোনো টিকার আগাম সংস্থান এখনো নেই। মন্ত্রণালয়ে কিছু আছে কি না সেটা হয়তো মন্ত্রণালয় থেকে জানা যাবে। যদিও আমরা ইতিমধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা ঘিরেই যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি।’ তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিসাবে পর্যায়ক্রমে মোট ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষ টিকা পাবে বিনা মূল্যে। যাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের প্রত্যেকে পাবে দুই ডোজ করে, প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যসূত্র অনুসারে অক্সফোর্ডের টিকা প্রথম লটে আসবে ৫০ লাখ। পরে প্রতি মাসেই আসবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম আসা টিকা পাবেন প্রথম পর্যায়ের ১৯ ক্যাটাগরির অগ্রাধিকারের শীর্ষে থাকা করোনা মোকাবেলায় সম্মুখসারির মানুষ।

এদিকে রাশিয়া ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের দুটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ চলছে, যারা ওই দুই দেশের দুটি টিকা উৎপাদন করবে। সূত্র বলছে, এ ব্যাপারে সরকারের কেউ কেউ অবহিত আছেন। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে না যাওয়ায় সরকারের কেউ এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।

একটি সূত্র জানায়, আরেকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সরকারের কোনো এক পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এরই মধ্যে অনুমোদন পাওয়া একটি টিকা দেশে আমদানির জন্য। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক কোনো আবেদন করেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অক্সফোর্ডের আর কোভ্যাক্স ছাড়া আমার হাতে এখন পর্যন্ত আর কোনো টিকার আগাম নিশ্চয়তা নেই। আমরা বরং এখন সেরামের মাধ্যমে অক্সফোর্ডের টিকা হাতে পাওয়ার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি। আর্থিক যে প্রক্রিয়া সেটিও প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছিলাম বড়দিনের উপহার হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন হবে, কিন্তু তা তো হলো না। এখন হয়তো সামনে যেকোনো দিন হতে পারে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’ 
সূত্র : কালের কণ্ঠ