logo
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১০:২০
জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ
'সজিবের লাশ আরো কয়েক টুকরো করার পরিকল্পনা ছিল'
অনলাইন ডেস্ক


'সজিবের লাশ আরো কয়েক টুকরো করার পরিকল্পনা ছিল'

খুনের দায়ে গ্রেপ্তার শাহানাজ

রাজধানীর ওয়ারীতে পরকীয়া প্রেমিককে পাঁচ টুকরো করে হত্যা করা শাহনাজ পারভীন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, 'আমি ছাড়াও আরও ১০টি মেয়ের সঙ্গে সজিবের সম্পর্ক ছিল। আমার কলেজপড়ুয়া মেয়ের ওপরও কুদৃষ্টি দিয়েছিল। আমার কাছে টাকাপয়সা নিয়ে অন্য মেয়েদের পেছনে খরচ করত। এসবের কারণেই ওকে শেষ করে দিয়েছি।'

শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন শাহনাজ। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শাহনাজ জবানবন্দিতে আরো জানান, 'সজিবের লাশ আরো কয়েক টুকরো করার পরিকল্পনা ছিল তার। স্বামীর সংসার ছেড়ে প্রেমিক সজিব হাসানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলেও তার বিশ্বাস অর্জন করতে পারেননি। তাকে অবিশ্বাসের চোখেই দেখতেন সজিব। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় শাহনাজকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। এ ছাড়া তার স্বর্ণালংকার বিক্রি ও স্বামীর কাছ থেকে আনা টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দিতেন।'

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ওয়ারীর স্বামীবাগের একটি বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে ৩৩ বছর বয়সী সজিব হাসানের পাঁচ টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের তিন টুকরো ঘরের মেঝেতে এবং দুই টুকরো টয়লেটে ছিল। মেঝেতে লাশের পাশ থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় ৪২ বছর বয়সী শাহনাজ পারভীনকে।

স্বামীর করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ভিত্তিতে শাহনাজকে ওই বাসায় খুঁজতে গিয়েছিল পুলিশ। এ ছাড়া শাহনাজের স্বামীও পুলিশকে ফোন করে তার স্ত্রীর অবস্থান জানান। স্বামীর কাছে ফোন করে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানান শাহনাজ। এও বলেন, 'তোমার পরিবারকে বাঁচিয়ে গেলাম। এবার আমাকে বাঁচাও। এর পরই শাহনাজের স্বামী বিষয়টি পুলিশকে জানান।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় স্বর্ণালংকার, টাকা ও কাপড়চোপড় নিয়ে স্বামীর বাসা ছেড়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় তার স্বামী শাহনাজ নিখোঁজ রয়েছেন- মর্মে থানায় জিডি করেন।

সজিব হত্যা মামলায় শাহনাজ পারভীনকে একমাত্র আসামি করে নিহতের খালু নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতেই মামলা করেন। ওই মামলায় গতকাল তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে শাহনাজ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, সজিবকে ভালোবেসে স্বামীর সংসার ছাড়েন। গত সোমবার স্বামীর বাসা ছেড়ে সজিবের বাসায় ওঠেন। কিন্তু তার প্রতি সজিবের বিশ্বাস ছিল না। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ঘরের বাইরে বের হতে দেওয়া হয়নি। সজিব যখনই বাইরে যেতেন, তখন তাকে ভেতরে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখতেন। আরো একাধিক মেয়ের সঙ্গে সজিবের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। শাহনাজের মেয়ের ওপরও তার কুনজর পড়েছিল। এ ছাড়া সজিব ছিল লোভী প্রকৃতির। তার স্বর্ণালংকার বিক্রি করে এবং স্বামীর বাসা থেকে আনা টাকা নেওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছিলেন। টাকা না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে ঝগড়া হয় দু'জনের। এক পর্যায়ে সজিব ছুরি দিয়ে তাকে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় ছুরি কেড়ে নিয়ে সজিবকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন শাহনাজ। সজিব মারা যাওয়ার পর রক্তাক্ত ম্যাক্সি ও বিছানার চাদর পানিতে ভিজিয়ে রাখেন শাহনাজ।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরো জানান, পাঁচ বছর আগে যখন সজিবের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখনই তিনি কেএম দাস লেনের ওই চার তলায় একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে। তবে তিনি রাতে ওই বাসায় থাকতেন না। দিনের বেলায় মাঝেমধ্যে যেতেন। যে কারণে প্রতিবেশীরা সজিবের স্ত্রী হিসেবেই জানত তাকে।

সায়েদাবাদে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের স্টাফ ছিলেন সজিব। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থানার নারায়ণকান্দি। তার খালু ও মামলার বাদী নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রামে সজিবের প্রথম স্ত্রী রয়েছে। শাহনাজকেও তারা সজিবের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে জানতেন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ