রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুর রহমানের (৫৪) সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন নিহত আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তার (২৬)। দুজন পরিকল্পিতভাবে আজহারকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তাঁদের বিয়ে হলে তা আবদুর রহমানের জন্য হতো দ্বিতীয়, আসমার চতুর্থ। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আজহারের হত্যার ঘটনায় আসমা ও আবদুর রহমানকে গতকাল বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম নিভানা খায়ের জেসীর আদালত। এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণখানের সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারের ছয় টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আবদুর রহমান ও আসমার বিয়ে করার কথা ছিল। আজহারকে হত্যা করতে দুজন পরিকল্পনা করেন বলে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে টাঙ্গাইলের এক কৃষকের সঙ্গে বিয়ে হয় আসমার। পরে তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন নিহত আজহারের বড় ভাইকে। এরপর আজহারের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। ২০১৬ সালে দুজন পালিয়ে ঢাকায় এসে বিয়ে করেন। আজহার গার্মেন্টে চাকরি নেন। ২০১৭ সালে তাঁদের ছেলে হয়। চার বছরের এই শিশু আরিয়ানকে আরবি শেখাতে গত জানুয়ারিতে আবদুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর দুজনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি টের পেরে গত ফেব্রুয়ারির একদিন আবদুর রহমানকে ঘর থেকে বের করে দেন আজহার। পরে অন্যের নামে কেনা মোবাইলের সিমে দুজনের কথা হতো। এই সময়ের মধ্যে অন্য বাড়িতে গিয়ে চার দিন তাঁরা একান্তে সময় কাটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন আবদুর রহমান ও আসমা।
র্যাব সূত্র জানায়, গত রমজানের আগেই আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। প্রথমে ভাড়াটে খুনির কথা ভাবা হয়। পরে আবদুর রহমান নিজেই হত্যার দায়িত্ব নেন। সে অনুযায়ী গত ১৯ মে তিনি আজহারকে ডেকে এনে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরা করে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। এরপর সব ধুয়েমুছে মসজিদে নামাজ পড়ান। ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তিনি চার দিন নামাজ পড়ান। এ সময় নামাজে প্রতিবারই তিনি ভুল করেন।
আবদুর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ৩৩ বছর ধরে দক্ষিণখান এলাকার মসজিদে নামাজ পড়াচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি র্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি আসমাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছিলেন। তাঁর কথা রাখতে গিয়ে আজহারকে হত্যা করেছেন। তা না হলে আসমা নিজেই আজহারকে হত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। নিজেও মরবেন এবং তাঁকেও (আবদুর রহমান) মারবেন। অন্যদিকে আসমা র্যাবকে জানিয়েছেন, আজহারের আচার-আচরণ তাঁর ভালো লাগছিল না। এ কারণে তিনি পরকীয়ায় জড়ান।
সূত্র : কালের কণ্ঠ