logo
আপডেট : ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:৪৯
সিরিয়াল কিলারের অপরাধ উদঘাটন করল পিবিআই কুমিল্লা জেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক


সিরিয়াল কিলারের অপরাধ উদঘাটন করল পিবিআই কুমিল্লা জেলা

কখনো গাড়ির হেলপার, কখনো বেকারীর কারিগর। প্রেমের ফাঁদে ফেলে টকা হাতিয়ে নিয়ে খুন করা তার নেশা। এক মাসের ব্যবধানে ২টি খুন করে আরও হত্যার পরিকল্পনা ছিল হত্যাকারীর। প্রেমিক সেজে টাকা হাতিয়ে নেয়ার আইডিয়া অন্যের কাছ থেকে পাওয়া।কিন্তু খুন করার পরিকল্পনা নিজের। খুনের ধরণ একই। পিবিআই এর জালে ধরা পড়েছে সেই সিরিয়াল কিলার।  নাম আব্দুল্লাহ আনসারী @ মুন্না (23) পিতা, মো: শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া, মাতা, মৃত ঝর্ণা বেগম, গ্রাম, বারকোটা ভূঁইয়া বাড়ি, খানা, দাউদকান্দি, জেলা, কুমিল্লা।  তার সাথে দীন ইসলাম দীনু(১৯) পিতা- মোস্তফা, গ্রাম দুর্গাপুর, থানা কোতয়ালী, জেলা,কুমিল্লাকে কোতোয়ালী থানাধীন সুরগাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ঘাটন করা হয়েছে কুমিল্লা জেলা সদর দক্ষিণ থানার বহুল আলোচিত ব্যাগ পান্না ও লাইলী বেগম হত্যা মামলার রহস্য।   
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ খানা মামলা নং 4, তারিখ 25/10/2021 G2, ধারা 302/201/34 পেলান কোড এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে  আদালতে দায়ের করা মামলা নং 1145/2021 (কোতোয়ালি), মামলার সাথে সরাসরি জড়িত আসামী 1. আব্দুল্লাহ আনসারী @ মুন্না এবং ২. দীন ইসলাম দীনু (১৯ কুমিল্লা কোতোয়ালী থানাধীন সুরগাপুর এলাকা থেকে ৩১/১০/২০২১ তারিখ সকাল ৬.৩০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয়েছে।  
ভিকটিম পান্না আক্তারকে 20/10/2021 তারিখ দুপুর 12.15 টার মধ্যে 20/10/2021 তারিখে 20:15 টার মধ্যে এবং বিছানার চাদরে মুড়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে হত্যা করা হয়। উভয় চোখে আঘাতের চিহ্ন এবং নীচের ঠোঁটে রক্তাক্ত কাটার চিহ্ন, লাশের গলায় প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে শক্তভাবে মোড়ানো, দুটি ওড়না দিয়ে হাতে এবং দুটি প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে পায়ে পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে নিহতের মা মোছাঃ শরীফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী/ আসামীদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা নং ৪০, তারিখ ২৫/১০/২০২১ খ্রিঃ, ধারা ৩০২/২০১/৩৪ দায়ের করেন।  পিবিআই কুমিল্লা জেলা মামলার ছায়া তদন্তকালে  সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে এবং পরে নিজ উদ্যোগে তদন্তের দায়িত্ব নেয়। 
এছাড়া গত ০২/০৯/২০২১ বিকাল ৫.০০ ঘটিকায় ভিকটিম লিলি বেগম (২৮), পিতা- মৃত আব্দুল খালেক, স্বামী মোঃ জনি, সাং- আমতলী (ধর্মপুর), থানা- কোতয়ালী, জেলা- কুমিল্লা গত ০২.  ০৯/২০/২১ তারিখে নিহতের মা শাহনূর ও সুজনকে কোতয়ালী থানার অন্তর্গত গোমতী নদীর আইল থেকে অপহরণ করার অভিযোগে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন।  26/10/2021 তারিখে, বিজ্ঞ আদালত পিবিআই কুমিল্লা জেলা প্রধানকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। 26/10/2021 তারিখে মামলার তদন্ত শুরু হয়।  
ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার) পিপিএম তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করেন পিবিআই কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার জনাব মোঃ মিজানুর রহমান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল।  আহমেদ ও পুলিশের পরিদর্শক (এন) বিপুল চন্দ্র দেবনাথ মামলা দুটি তদন্ত করেন।  গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রায় ২ মাস আগে ভিকটিমের মোবাইল নম্বর থেকে আসামীর মোবাইল নম্বরে কল এলে অভিযুক্ত ও ভিকটিম পরিচয় হয়।  অভিযুক্ত মুন্না ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাত সোয়া ৮টার দিকে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।  অভিযুক্তরা পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে তার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।  ভুক্তভোগীর কাছ থেকে আগের দাবি অনুযায়ী কোনো টাকা না পাওয়ায় অভিযুক্ত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।  একপর্যায়ে ভিকটিমকে গলায় হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ চাদরে মুড়িয়ে রাখে। চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে লাশ বস্তাবন্দী করে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে ঘটনাস্থল সদর দক্ষিন থানাধীন গোপিনাথপুর সার্কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামমূখী মহাসড়কের উত্তর পাশে, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ এর বিপরীত পার্শ্বে ফেলে দেয়। 
এক মাস আগে অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আনসারী-মুন্না তার বন্ধু পারভেজ সঞ্জীবের সহযোগিতায় ভিকটিম লিলি বেগমের সঙ্গে প্রেম করে। এই প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে ভিকটিম গত ০২/০৯/২০২১ তারিখে টাকা নিয়ে জাগরঝিল এলাকায় আসে। 20,000/- নগদ এবং 2টি মোবাইল ফোন এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।  অভিযুক্ত মুন্না ও দ্বীন ইসলাম ভিকটিমকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। পরে নিহতের লাশ ফেনী মডেল থানাধীন শর্শদী ইউপিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়। ফেনী সদর মডেল থানা পুলিশ 13/09/2021 তারিখে নিহতের গলিত লাশ উদ্ধার করে এবং ফেনী সদর মডেল থানায় মামলা নং 30, 13/09/2021, ধারা 302/201/34 দণ্ডবিধি দায়ের করা হয়। 
 পরে আব্দুল্লাহ আনসারী মুন্না ও দ্বীন ইসলাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, পারভেং (সজিবের সহায়তায়) ভিকটিমকে অপহরণ করে হত্যার করে। এ ব্যাপারে পিবিআই কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার জনাব মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এই হত্যাকান্ডটি একটি কুলস হত্যা মামলা। আমাদের সদস্যদের আন্তরিকতা এবং আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে আসামীকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিম উদ্ধার করা হয়েছে।  
আসামিদ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করে