logo
আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৪১
আরব প্রতিবেশীরা কেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে চায় না
নিজস্ব প্রতিবেদক


আরব প্রতিবেশীরা কেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে চায় না

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিও জর্ডানের বাদশাহর মতো ফিলিস্তিনিদের নিজ দেশে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে মিশরের দিকে পাঠানোর চিন্তা করার আরেক অর্থ হল; পশ্চিম তীরের মানুষদের বাস্তুচ্যুত করে জর্ডানে পাঠানোর মতো একই ধরণের পরিস্থিতি ঘটবে। এর ফলে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য মিশর বা আন্তর্জাতিক মহলে যে আলোচনা চলছে সেটা আর সম্ভব হবে না।

বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে কিছু বাস্তবিক কারণে ফিলিস্তিনিদের নিজ দেশে আশ্রয় দিতে নারাজ তার প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্র গুলো।  

এই যেমন মিশরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীর কোনো সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। ধারণা করা হয় সংখ্যাটা ৫০ হাজার থেকে এক লাখের মতো হতে পারে। জাতিসংঘের হিসেবে মিশরে সাড়ে তিন লাখের উপরে নিবন্ধিত শরণার্থী আছে যাদের দেড় লাখই এসেছে সিরিয়া থেকে। মিশরের শঙ্কা একবার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী তাদের দেশে ঢুকলে তাদেরকে আর তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে ফেরানো সম্ভব হবে না।

মিশরের বর্তমান সরকারের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক রয়েছে। একটা সময়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমও ছিল তারা। ২০০৭ সালে হামাস গোষ্ঠী গাজার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সঙ্গে মিশরও গাজার সঙ্গে তাদের সীমান্তের কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। কারণ হামাস আশির দশকে সৃষ্টি হয়েছিল মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা হিসেবে যারা বর্তমানে মিশরে নিষিদ্ধ।

২০১৩ সালের পর থেকে সীমান্তবর্তী সিনাই উপত্যকায় মিশরকে বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠীদের তৎপরতা সামাল দিতে হয়েছে। হামাস যাতে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে মিশরে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্যেই এতটা কড়াকড়ি। কারণ বাড়তি সশস্ত্র গোষ্ঠী তৎপরতা সামাল দেয়ার সক্ষমতা মিশরের নেই।

মিশরের প্রেসিডেন্ট গাজার উদ্বাস্তুদের গাজার কাছে ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে রাখার পরামর্শ দেন যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলের অভিযান শেষ না হচ্ছে।

তাছাড়া ইসরায়েলের প্রাকৃতিক গ্যাস মিশরের রিফাইনারিগুলোতে তরলীকরণ হয় যেটা পুরো বিশ্বে বাজারজাত করা হয়। এটাও সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিশরের অবস্থান না নেয়ার অন্যতম কারণ।

অপর দিকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের সীমান্ত জর্ডানের সঙ্গে তারাও নতুন করে ফিলিস্তিনি শরণার্থী ঠেকাতে তৎপর। কারণ ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা যেসব দেশে আশ্রয় নেয় তার মধ্যে শীর্ষে আছে জর্ডান। সেখানে নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংখ্যা ২০ লাখের উপরে। এ হিসাব ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ’র। এর বাইরে দেশটিতে সাড়ে সাত লাখের বেশি শরণার্থী রয়েছে যার সিংহভাগ এসেছে সিরিয়া থেকে।

মিশরের মতো জর্ডানেরও শঙ্কা রয়েছে যে একবার দেশটিতে শরণার্থী ঢুকে পড়লে তাদের ফেরত পাঠানো কঠিন হয়ে যাবে।

তাছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানেরও রয়েছে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। জর্ডান সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সৌদি আরব, ইসরায়েল ও আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। যেমন গ্যাস তো বটেই, সুপেয় পানির জন্যও ইসরায়েলের উপর নির্ভর করতে হয় জর্ডানকে।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জর্ডান আমেরিকার মিত্র দেশ, এছাড়া আমেরিকা ও জার্মানির বিমান সেখানে অবস্থান নিয়ে আছে তাই ফিলিস্তিনে মানবিক সংকটের বিষয়ে আরব দেশগুলো একজোট হলেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি শত্রুতা বা যুদ্ধে জড়ানোর পর্যায়েও কেউ যেতে চায় না।

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত সীমানা অনুসারে লেবাননের সঙ্গেও ফিলিস্তিনের সীমানা রেখা থাকার কথা কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা কখনোই হয়ে ওঠেনি। ১৯৪৮ সালের ইসরায়েল-আরব যুদ্ধের সময় নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা লেবাননে ঢুকে পরে। যার বর্তমান সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৯০ হাজার।

অভ্যন্তরীণ নানা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে দেশটিতে এখন কোনো কার্যকর সরকার বা প্রেসিডেন্ট নেই। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে দেশটিতে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে লেবাননের ক্ষয়ক্ষতি হলে অথবা সেখানে কোনোভাবে ফিলিস্তিনি শরণার্থী স্থানান্তর করা হলে সেটা সামাল দেয়ার পরিস্থিতি লেবাননের নেই।

ফিলিস্তিনের সঙ্গে প্রতিবেশীদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিবিসিকে তুরস্কের হাসান কালিয়ানচু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. মুরাত আসলান বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী দেশগুলো কোনো পক্ষের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয় এবং তাদের মনোযোগ নিজেদের লাভের দিকেই। তাই ফিলিস্তিনের ইস্যু শুধু ফিলিস্তিনের, অন্যদের নয়।

সূত্র: বিবিসি