আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অশান্তি করা হলে ‘খবর আছে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমরা অশান্তি করবো না। তবে কেউ যদি অশান্তি করতে আসে খবর আছে। খবর এতদিন বলি না। অনেক সহ্য করেছি, সহ্যেরও একটা সীমারেখা আছে। আমরা কারও সভায় অশান্তি করবো না। তবে অশান্তি হলে তখনকার পরিস্থিতি বলে দেবে অশান্তি কাকে বলে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এবার ছাড় নেই। অশান্তির পথ দেখালে অশান্তি আপনাদের (বিএনপির) দিকেই আসবে। সেই পথ আওয়ামী লীগকে দেখাবেন না। ভয়-ডর এগুলো আমরা পায়ের তলে ফেলে এসেছি বহুবার।’
এক বছর ধরে আওয়ামী লীগ শান্তি সমবেশ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অশান্তি চাইলে (বিএনপি) এতগুলো সমাবেশ করতে পারতো? ক্ষমতাসীন দল হয়ে দলের কর্মীরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে। অবলা নারী, শিশু হত্যার কারণে আওয়ামী লীগের মনে অনেক বেদনা আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান।’
‘আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি করছে’— বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে বিএনপি এ কথা কয়েকবার উচ্চারণ করেছে। তাহলে ঘোষণা দেন যে অশান্তি চান। অশান্তি কাকে বলে দেখিয়ে দেবো। ক্ষমতায় আমরা আছি, আমরা কেন অশান্তি করবো? ক্ষমতায় আছি মানুষের সেবা করার জন্য, আমরা অশান্তি করার জন্য আসি নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অশান্তি সৃষ্টি করছি না। আমরা অশান্তি সৃষ্টি করলে এই নগরীর কোথাও বিএনপি দাঁড়াতে পারতো না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফখরুল সাহেব মাইক একটা মুখে দিয়ে আরেকটা আছে… (রুহুল কবির রিজভী) বসে বসে কী জঘন্য ভাষায় আমাকে গালাগালি দেন। আমার কথা বাদ দেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে কী অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছেন! আমরা প্রতিশোধ নিলে আরেকটা ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকি দিতে পারতেন না।’
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশের বিষয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি একটি উত্তাল জনসমুদ্র দেখতে চাই। বঙ্গোপসাগরের মতো গর্জন দেখতে চাই। পারবেন না? সেইরকম একটা জনস্রোত সেই দিন আমরা ঢাকায় দেখাতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলে (আরাফাত রহমান কোকো) মারা যাওয়ার পর শেখ হাসিনা শোক জানাতে গিয়েছিলেন, তারা (বিএনপি) কর্ণপাত করেনি। ২১ নভেম্বর (আগস্ট) শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। সেই দলের সঙ্গে কীভাবে সমঝোতা করি? আওয়ামী লীগের আমলে কি বিএনপি কোনো নেতাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে?’
বিএনপি আবারও ভুল পথে হাঁটছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দিনক্ষণ তারিখ দিয়ে আন্দোলন হয় না। দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলনের ডাক দিলে সেই আন্দোলন খাদে গিয়ে পড়ে। যারা গণতন্ত্রকে গলা টিপে মেরেছে, সেই দলের লজ্জা হওয়া উচিত। ২৮ তারিখ (অক্টোবর) বিএনপি নাকি ৪০ দল নিয়ে নামবে?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতারা এখনই আসা (ঢাকায় আসা) শুরু করেছেন। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করছে, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে উঠছে। কার আত্মীয় কে, এটাও খবর নেওয়া উচিত। এত আত্মীয় কোথা থেকে এলো ঢাকা শহরে? ২৫ তারিখের আগেই সবাই আসবে। তারপরে গাড়িতে আসার চিন্তা তাদের কম। এখনই সব এসে যাচ্ছে, সবাইকে ডাক দিচ্ছে। তারপর ৪০ দল মিলে অবরোধ করবে, রাস্তা দখল করবে। স্বপ্নরে স্বপ্ন, কত স্বপ্ন, রঙিন খোয়াব! ফাঁপা বেলুন চুপসে যাবে।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সব রাস্তায় হাঁটতেও যেন আওয়ামী লীগ, সামনে আওয়ামী লীগ, পেছনে আওয়ামী লীগ। সারা সিটিতে আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ…।’
বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। এতে আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।