logo
আপডেট : ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ২০:২৮
বিএনপির নেতারা বলছেন
যে কোনো মূল্যে ২৮ অক্টোবর থেকে মাঠে থাকবে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

যে কোনো মূল্যে ২৮ অক্টোবর থেকে মাঠে থাকবে বিএনপি

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। এজন্য এতদিন নানা কর্মসূচি পালন করে এসেছে। এবার আন্দোলনের শেষ ধাপ শুরু করতে যাচ্ছে দলটি, যা শুরু হবে ২৮ অক্টোবর থেকে। এদিন রাজধানীতে বিএনপি মহাসমাবেশ করবে। এরপর থেকে দেশব্যাপী চলবে আন্দোলন।
দলটির নেতারা জানান, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এজন্য রাজপথে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে নির্দেশনা রয়েছে। তবে বাধা এলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এ আন্দোলনে নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের গাফিলতি থাকলে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। সে যে কোনো পর্যায়ের নেতা হোক না কেন।
এদিকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অন্য পর্যায়ের নেতাদের এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখছেন।

আন্দোলনে বিএনপির কৌশল : বিএনপি সূত্র জানায়, শেষ ধাপের কর্মসূচি সফল করতে বেশকিছু কৌশল নেওয়া হয়েছে। এজন্য ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা— এই তিন বিভাগের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় হাইকমান্ড। এর বাইরে অন্য বিভাগের নেতাকর্মীদের দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যার একটি অংশ ঢাকায় সমাবেশে যোগ দেবে। আরেকটি অংশ অবস্থান করবে এলাকায়। এরমধ্যে ২৮ তারিখের সমাবেশের পর পরবর্তী কর্মসূচি আর করতে না পারলে, ওইদিন থেকেই লাগাতার কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
আপাতত সচিবালয়, আদালত, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও, অবস্থান এবং অবরোধ কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। বাকি কর্মসূচি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। এরমধ্যে পরিস্থিতি যদি ভিন্ন হয়, তাহলে ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বাত্মক আন্দোলন চলবে।

এদিকে এরই মধ্যে সারাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় অবস্থান নিয়েছেন। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে পারলে, পরে এসব নেতাকর্মী ঢাকা ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।

অন্যদিকে সমাবেশ করতে না দিলে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে অবস্থান নেবেন এসব নেতাকর্মী। এতে কোনো বাধা এলে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ সব বাধা উপেক্ষা করে নয়াপল্টনসহ ঢাকা শহরের নির্ধারিত স্পটে জড়ো হবেন।
দলের একটি সূত্র বলছে, মামলার হাজিরার দিন আদালতে যেমন সবাইকে উপস্থিত থাকতে হয়, একইভাবে নেতাকর্মীদের সেদিন নয়াপল্টনে হাজির হওয়াটা বাধ্যতামূলক। মহাসমাবেশে বাধা এলে নয়াপল্টনসহ বিভিন্ন স্পটে অর্থাৎ পুরো ঢাকা শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সরকার আমাদের নয়াপল্টনের পরিবর্তে বিকল্প জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দিতে পারে। তাতে বিএনপি রাজি হলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে নেতাকর্মীদের এমন ভাবনা ছিল। কিন্তু দেখা গেলো মধ্যরাতে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু মিরপুর ও গোলাপবাগে পুলিশের নির্দেশিত স্পট পরিদর্শন করেন। পরে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ হয়। এবার যেন সেটা না হয়।

বিএনপি নেতা আমিনুল হক বলেছেন, মহাসমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা উদ্বেলিত। ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রতিটি নেতাকর্মী শপথ নিয়েছেন যত বাধাই আসুক, এ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না।
তিনি বলেন, সবমিলিয়ে এবার নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। তবে দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছেন। এটা কি দলের সিদ্ধান্তহীনতা নাকি কৌশল তাও স্পষ্ট নয়।

তবে বিএনপির কিছু নেতা মনে করেন, শুরুতেই বড় ধরনের ঝামেলায় না জড়িয়ে অনুমতি পাওয়া স্পটে সমাবেশ করলে খুব একটা সমস্যা হবে না।
গ্রেফতার হলে বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত : গ্রেফতারের বিষয়টি মাথায় রেখে কয়েক স্তরের বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু গ্রেফতার হওয়ার পর তার দায়িত্বে তানভীর আহমেদ রবিনকে নিযুক্ত করা হয়। রবিন গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে সেখানে লিটন মাহমুদ দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে দলের সব পর্যায়ে বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আন্দোলনে গাফিলতি হলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে :এবার আন্দোলন নিয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে কঠোর বার্তা রয়েছে। নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ, এর আগে ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশদ্বারে অবস্থান কর্মসূচিতে যথাসময়ে উপস্থিত না হয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ‘দায়িত্বহীনতার’ পরিচয় দিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এবার দল তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।

এছাড়া ওয়ান/ইলেভেনের সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু যেভাবে নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, এবারও দলের আদর্শবিচ্যুত নেতাকর্মীদের সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সর্তক করা হয়েছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক মূল্যায়নে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মতিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকার পতনের শেষ ধাপের আন্দোলন সফল করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। এবার সরকারবিরোধী সব দল তাদের অধিকার ফিরে পেতে রাজপথে নেমেছে। শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষ, দিনমজুর সবাই আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। তারা মনে করেন, রুটি আর সরকার সময় মতো উল্টানো দরকার। কারণ রুটি চুলায় দিয়ে সময় মতো না উল্টালে পুড়ে যায়, খাওয়া যায় না। তেমনি সরকারও সময় মতো না উল্টালে দেশ পুড়ে যাবে, জনগণ শান্তিতে থাকতে পারবে না।

গত বছর গোলাপবাপে সমাবেশ করেছিল বিএনপি, তখনও সমাবেশের স্থান নিয়ে নানা নাটকীয়তা দেখা যায়
গত বছর গোলাপবাপে সমাবেশ করেছিল বিএনপি, তখনও সমাবেশের স্থান নিয়ে নানা নাটকীয়তা দেখা যায়

তিনি আরও বলেন, এবারের আন্দোলনে দেখবেন ঢাকা শহরের অ্যাপভিত্তিক যত যানবাহনের চালক আছেন, পরিবহনকর্মী, ফুটপাতের দোকানি, অধিকাংশই বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা। এরা এলাকায় থাকতে পারেন না। ফলে ঢাকায় এসে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এসব নেতাকর্মী সাধারণ চালক ও দিনমজুরদের সুসংগঠিত করেছেন। ঢাকা শহরের আন্দোলন সফল করতে এরাই যথেষ্ট।

যুবদলের দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান দুলাল বলেন, আন্দোলন সফল করতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারকে মোকাবিলা করার জন্য গণতান্ত্রিক পন্থায় যা যা করণীয় আমরা তাই করবো। এবার আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
সরকারের পতনে রাজপথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন এখন মুহূর্তের ব্যাপার। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।

২৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, মহাসমাবেশকে ঘিরে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা উদ্বেলিত। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রতিটি নেতাকর্মী শপথ নিয়েছেন যত বাধাই আসুক, এ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, আমরা আশাবাদী বিএনপির কর্মসূচি সফল হবে। সরকারের পতনে যা যা করা লাগবে আমরা এবং দেশের জনগণ তাই করবে।

এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অভিযোগ করেন যে, সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা সমাবেশে আসতে চাচ্ছেন, তাদের বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে। গণপরিবহনগুলো ২৮ অক্টোবর ঢাকা আসতে না করা হচ্ছে। বিএনপির বন্ধু সংগঠনগুলোর নেতাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই কৌশলেই এবার সমাবেশে যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা।

নয়াপল্টনে সমাবেশে অনড় বিএনপি : এদিকে ২৮ অক্টোবর যেখানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে সেখানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এরই মধ্যে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না গেলে, কোথায় সমাবেশ হতে পারে এমন বিকল্প দুটি জায়গার নাম বিএনপির কাছে চেয়েছে ডিএমপি। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড়।

এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না দিলে সরকার বড় ধরনের ভুল করবে। তখন পুরো শহরই সমাবেশের নগরীতে পরিণত হবে। সরকারের নতুন নতুন ফ্রন্ট তৈরিও কোনো কাজে আসবে না। এটা সরকারকে চিন্তা করতে হবে। হাতে সময় কম। পরে দেখবে অক্টোপাসের মতো চারদিকে ঘিরে ফেলেছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এই মহাসমাবেশ হবে নজীরবিহীন, ঐতিহাসিক।
সমাবেশ শেষে এখান থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ জেলায় ফিরে যাবেন বলেও জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না দিলে পুরো ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে সমাবেশ করা হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়বেন।

সূত্র : জাগো নিউজ