আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৮ থেকে ১৬৬টি আসন পেতে পারে বলেও মনে করে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এমন তথ্য উপস্থাপন করেন। ‘ভোটারের মন ও আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল’ শীর্ষক সেমিনার ও সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
অর্থনীতি সমিতি মনে করে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরাপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল বিন্যাসে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি- তা জোটবদ্ধ তো বটেই এককভাবেও হতে পারে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করে অর্থনীতি সমিতি।
মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপনকালে ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘৩০০ আসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেতে পারে ১৪৮ থেকে ১৬৬টি আসন। বিএনপি ১১৯ থেকে ১৩৭টি আসন পেতে পারে। অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি ১১টি, জামায়াতে ইসলামী ২টি, এলডিপি একটি ও বিজেপি একটি আসন পেতে পারে। আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগকে জোটবদ্ধ সরকার গঠন করতে হলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির পক্ষে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ১১৯ থেকে ১৩৭টি আসন পেতে পারে। বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের একটি গাণিতিক সম্ভাবনা আছে। যে সম্ভাবনা অনেক বেশি শর্তসাপেক্ষ বিধায় দুর্বল। শর্তগুলো হলো- বিএনপিকে পেতে হবে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যাক আসন (১৩৭টি আসন)। জোট করতে হবে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বিজেপি এবং এলডিপির সঙ্গে। আওয়ামী লীগকে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সংখ্যাক আসনের (১৪৮ আসন) বেশি পাওয়া চলবে না।’
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় ১২ কোটি। এসব ভোটারের ৭০ শতাংশই দলীয় অনুগত ভোটার, তারা তাদের অনুগত দলে ভোট দেবেন। এসব ভোট হলো দলের জন্য ভিত্তি ভোট। মোট ভোটে দলীয় অনুগত ভোটের অনুপাত ৩০ শতাংশ আওয়ামী লীগ, ৩০ শতাংশ বিএনপি, ১০ শতাংশ অন্য দল।’
‘এর বাইরে বাকি ৩০ শতাংশ দলীয় অনুগত নন এমন দোদুল্যমান ভোট। এরা কাকে ভোট দেবেন, তা পূর্বনির্ধারিত নয়। দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনের ভাগ্য মোটামুটি নির্ধারিত বলা চলে। এসবই হলো ভিত্তি আসন বা সম্ভাব্য বিজয়-নিশ্চিত আসন। এই ১৫৫টি আসনের মধ্যে ৭০টি আসন পাবে আওয়ামী লীগ, ৭০টি আসন পাবে বিএনপি। বাকি ১৫টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ১১টি, জামায়াতে ইসলামী ২টি, এলডিপি একটি ও বিজেপি একটি পাবে।’
মূল প্রবদ্ধে বলা হয়েছে, ‘ভিত্তি ভোট’ এবং ‘ভিত্তি আসন’ দিয়ে সরকার গঠন হবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- উভয় দলেরই ৭০টি করে ‘ভিত্তি আসন’ আছে। দুই দলের মধ্যে যেকোনো দলের জন্য সরকার গঠনের জন্য আরও ৮১টি আসন প্রয়োজন। তা পেতে হলে দুই বড় দলকে নির্ভর করতে হবে দোদুল্যমান ভোটারদের ওপর। এবারে দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদান সিদ্ধান্তে ৫টি অবজেক্টিভ ফ্যাক্টর ও সংশ্লিষ্ট কাউন্টার ফ্যাক্টর কাজ করবে বলে মনে হয়। তা হলো- দ্রব্যমূল্য, মানব নিরাপত্তা, পদ্মা সেতু, ২০১৮ সালের নির্বাচন এবং স্যাংশনস।
আবুল বারকাত বলেন, ‘পদ্মা সেতু ও স্যাংশনস ফ্যাক্টর ২টি আওয়ামী লীগ ভোট কৌশলে কাজে লাগাবে। বিএনপি কাজে লাগাবে অন্য ৩টি ফ্যাক্টর— দ্রব্যমূল্য, ২০১৮ সালের নির্বাচন ও মানব নিরাপত্তা। একই সঙ্গে প্রভাবক হিসেবে কয়েকটি সাবজেক্টিভ ফ্যাক্টরও কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মোট ৬৮টি আসনের মধ্যে ২৩টি বিজয়-অনিশ্চিত আসন। এসব আসনে পদ্মা সেতু ফ্যাক্টর কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ দোদুল্যমান ভোটারদের ৬০ শতাংশ রায় পেতে পারে। ফলে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ২৫টি ভিত্তি আসনের সঙ্গে আরও ২৩টি আসন যোগ হয়ে তাদের মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াতে পারে কমপক্ষে ৪৮টি।’
দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাইরে ঢাকাসহ পূর্ব-পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলে যে ২৩২টি আসন আছে, তার মধ্যে ১২২টি আসনে বিজয়-অনিশ্চিত আসন। যেকোনো দলের জয়-পরাজয়ে দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে। এসব আসনে দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট পেতে পারে আওয়ামী লীগ ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশ, বিএনপি ৪০ থেকে ৫৫ শতাংশ। এই ১২২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারে ৫৫ থেকে ৭৩টিতে, বিএনপি জয়ী হতে পারে ৪৯ থেকে ৬৭ আসনে’, যোগ করেন আবুল বারকাত।
সূত্র : জাগো নিউজ