আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যে দেশের ১০২ বছরের ইতিহাসে ৩০ বার পতাকা পরিবর্তন করা হয়েছে৷ সর্বশেষ পতাকা পরিবর্তন হয় ২০২১ সালে; তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর৷ এই পতাকাটি সাদা কাপড়ের ওপর কালো রংয়ে কলেমা খচিত৷ আফগানিস্তান এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলছে৷ অথচ খেলার মাঠে সেই পতাকা একবারও দেখতে পাইনি৷ মাঠে যে পতাকা দেখতে পাচ্ছি তা ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রচলিত পতাকা৷ আফগানিস্তানের এই পতাকায় খাড়াভাবে কালো লাল সবুজের সমান অবস্থান৷ আফগানিস্তানের ক্রিকেট খেলোয়ারদের এবার বিশ্বকাপ জার্সিতে বর্তমান পতাকার চিহ্ন নেই৷ তবে জার্সিতে পূর্বের পতাকার আদলে একটা লোগো আছে বুকের ডান পাশে৷ এরকম একটা হযবরল অবস্থায় পরিচয়ের সংকট নিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে ভারতে এসেছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট দল৷
আফগানিস্তানের ত্রিকেটর প্রধান কোচ ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার জোনাথন ট্রট৷ এছাড়াও চলতি বিশ্বকাপে মেন্টর হিসেবে যুক্ত হয়েছেন সাবেক ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার অজয় জাদেজা। তবে কেউই আফগানিস্তানে যাননি৷ ট্রট গত ২০২২ সালের ২৩ জুলাই হতে আফগান ক্রিকেটারদের কোচ হলেও আফগানের মাটিতে তার পা পড়েনি৷ চুক্তি সই করতেও আফগানিস্তানে যাননি৷ খেলোয়াররা যেখানে খেলতে যান, তিনিও সেখানে গিয়ে খেলোয়ারদের দেখা পান৷ খেলার আগে পরে যতটুকু কোচিং করতে পারেন তাই দিয়ে চলে আফগান ক্রিকেট৷
তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর খেলোয়ারদের ভিসা প্রাপ্তিতে সমস্যা দেখা দেয়৷ খেলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়৷ আরব আমিরাত এ সংকটে এগিয়ে আসে৷ আফগানিস্তানের ২৫ জনের মতো ক্রিকেটারকে আমিরাতের রেসিডেন্সি ভিসার সুযোগ দেয়। তারপর দুবাই হয়ে খেলোয়াররা গন্তব্যে যাতায়াতের সুযোগ লাভ করে।
আফগান ক্রিকেটের হোম গ্রাউন্ড নেই৷ আরব আমিরাতের সাথে চুক্তি করে আমিরাতকে হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করছে৷ বিনিময়ে আফগানরা আমিরাতের সাথে ক্রিকেট খেলবে৷ আমিরাতের ক্রিকেটের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে৷ তারা অবশ্য পাকিস্তানের সহায়তায় পাকিস্তানের মাঠ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে৷ পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুবিধা পেয়েছে৷ তাদের সহায়তায় ভারতও এগিয়ে এসেছে৷ দিল্লি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের শহীদ বিজয় সিং পথিক স্পোর্টস কমপ্লেক্সকে আফগানদের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে বিসিসিআই। সেখানে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে৷ এত অপ্রতুল অবকাঠামোর মধ্যেও আফগান ক্রিকেট জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে যাচ্ছে৷ জনমতের কারণে তালেবান মৌলবাদী সরকারও ক্রিকেট বোর্ডে তালেবান প্রতিনিধি দিয়ে পরিচালনার চেষ্টা করছে৷
আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে নানা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷ এর ফলে আফগান ক্রিকেট বোর্ডকে টাকা দিতে পারছেনা আইসিসি৷ ফলে ক্রিকেটার ও স্টাফদের সরাসরি টাকা দিচ্ছে আইসিসি৷ এর আগে ল্যান্স ক্লুজনার যখন আফগানদের কোচ ছিল তখন আর্থিক সংকটে সবার বেতন পচিশ ভাগ কমিয়ে দেয়া হয়েছিলো৷ আফগানিস্তানে ক্রিকেটের উন্নয়নে কোন অর্থই ব্যয় করতে পারছেনা আফগান ক্রিকেট বোর্ড৷ খেলোয়ারদের বাড়তি সুবিধা নেই৷ টিকে থাকার এত যুদ্ধ আর অপ্রতুল সুযোগ সুবিধা নিয়েও আফগান ক্রিকেট কোথায় চলে এসেছে৷ বিশ্বকাপে তাদের পারফরমেন্স সবার নজর কেড়েছে৷ আফগানিদের আনন্দ করার সুযোগ এনে দিয়েছে বারবার৷ সেমিফাইনালের দড়জায় কড়া নাড়ছে তারা৷
অথচ আফগানদের বিপরীতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথা ভাবতে পারেন৷ কত সুবিধা৷ কত বেতন৷ কত টাকায় কোচ রাখা হয়েছে৷ ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ ! ফিল্ডিং কোচ! কী নেই৷ এ নিয়ে আরেক দিন লেখা যাবে৷ টাকার শ্রাদ্ধ করে এলাহী কারবার৷ অথচ অর্জন আফগানদের ধারে কাছেও না৷
বাংলাদেশের মানুষ দেশের ক্রিকেটের কাছে বেশি কিছু চায়নি৷ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা আনতে হবে- এ প্রত্যাশা কারো নেই৷ তবে আফগানরা এবার যা করলো ঠিক সেটাই চেয়েছিলো বাংলাদেশ৷