বহুল আলোচিত জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী হুমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়াকে রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
গত ০২ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা নুসরাত হিমু আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম হিমুর খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-০২, তারিখ ০২ নভেম্বর ২০২৩। উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব বর্ণিত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত মধ্যরাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর বংশাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন @রুফি @উরফি জিয়া (৩৭), পিতা-মোহাম্মদ ইকবাল, সূত্রাপুর, ঢাকাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত হিমুর আত্মহত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম হুমায়রা নুসরাত হিমু একজন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী এবং প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন। ২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতো বোন এর সাথে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা জনিত কারনে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাধে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন এর সাথে ভিকটিম হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সাথে জিয়াউদ্দিন এর বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে গ্রেফতারকৃত জানায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিবাহ করলেও হিমুর সঙ্গে সে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং বিগত ০৪ মাস পূর্বে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন ভিকটিমকে বিবাহের প্রতিশ্রæতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতো বলে জানায়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হতো। এছাড়াও বিগত ২/৩ বছর ধরে ভিকটিম হিমু Bigo Live Apps এ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় করেছে বলে গ্রেফতারকৃত জানায়। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আরও জানায়, গত ০২ নভেম্বর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে গ্রেফতারকৃত জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় আসে। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে ভিকটিম হিমু ও গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন এর মধ্যে বাকবিতন্ডার একপর্যায় ভিকটিম ভাংচুর করে। ভিকটিম হিমু বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে রুমের বাহিরে থেকে একটি মই এনে রুমের সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সাথে পূর্ব থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানায়। গ্রেফতারকৃত আরও জানায়, ভিকটিম হিমু পূর্বেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিনকে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও পূর্বের ন্যায় ভিকটিম আত্মহত্যা করার ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিনকে জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্ত ভিকটিম হিমু একটু পর বেধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এসময় সে পাশের রুমে থাকা ভিকটিম হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম হিমুকে মৃত ঘোষনা করেন।
গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন @রুফি ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল ক্যামিকেলের ব্যবসা করতো। ঘটনার দিন ভিকটিম হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে সে ভিকটিমের ০২টি আইফোন ও ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে দ্রæত হাসপাতাল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে সে ভিকটিমের গাড়ি উত্তরার বাসার পার্কিং এ রেখে দেয় এবং ভিকটিমের মোবাইল ফোন ০২টি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।