logo
আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০৮:৫৫
অবরোধেও বার্ষিক পরীক্ষা-মূল্যায়নে ‘আপত্তি’ নেই অভিভাবকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক

অবরোধেও বার্ষিক পরীক্ষা-মূল্যায়নে ‘আপত্তি’ নেই অভিভাবকদের

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের মধ্যেও দেশের সব সরকারি স্কুলে রুটিন মেনে নেওয়া হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষা। চলছে নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়নও। তবে সামষ্টিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নচিত্র দেখা গিয়েছিল বেসরকারি স্কুলে। তারা শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু অবরোধ কর্মসূচি থাকলেও বেসরকারি স্কুলে রুটিন মেনেই অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক পরীক্ষা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক-অধ্যক্ষরা বলছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কিছুটা ‘উত্তাপ’ থাকলেও পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এখনো তেমন নিরাপত্তা শঙ্কা দেখছেন না তারা। নিরাপদেই শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে পরীক্ষা দিচ্ছে। সেজন্য পূর্বঘোষিত রুটিন মেনেই বার্ষিক পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় সংসদ ঘিরে নির্বাচনী তৎপরতা বাড়ার আগেই পরীক্ষা শেষ করতে চান তারা। দ্রুত পরীক্ষা শেষ করতে তাড়া দিচ্ছেন অভিভাবকরাও।

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা না কাটলেও অভিভাবকরা দ্রুত পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পক্ষে। ফলে অভিভাবকদের অনেকে বলছেন, অবরোধেও পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। নির্বাচনের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার আগেই পরীক্ষা শেষ করাটাই ভালো। তবে পরীক্ষার মৌসুমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর টানা অবরোধ কর্মসূচিতেও ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের সব সরকারি স্কুলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগের নিয়মে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ৯ নভেম্বর পর্যন্ত অনেক স্কুলে ২-৪টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গেছে। অবরোধের দিনও অনেক স্কুলে হয়েছে পরীক্ষা। অন্যদিকে নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন গত ৯ নভেম্বর শুরু করেছে সরকারি স্কুলগুলো।

রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল, তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সবুজবাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দারুসসালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ মনু মিঞা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে রুটিন মেনে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার তথ্য জানান স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ২ নভেম্বর থেকে রুটিন অনুযায়ী আমাদের পরীক্ষা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি পরীক্ষা হয়ে গেছে। সোমবার (১৩ নভেম্বর) আমাদের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি, অষ্টম ও নবম শ্রেণির গণিত পরীক্ষা রয়েছে। আমরা ২১ নভেম্বরের মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ করতে চাই।’

অবরোধে পরীক্ষায় অনুপস্থিতি বা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা শঙ্কা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘না, এমন কোনো নিরাপত্তা শঙ্কার কথা কেউ আমাদের বলেননি। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে পরীক্ষা দিতে আসছে। উল্টো অভিভাবকরা আমাদের দ্রুত পরীক্ষা শেষ করতে তাগাদা দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে আমরা নভেম্বরের মধ্যেই সব পরীক্ষা শেষ করবো। আশা করি সবাই ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ করবে।’

তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহরীন খান রূপা বলেন, ‘৫ নভেম্বর থেকে আমরা পরীক্ষা শুরু করেছি। রুটিন অনুযায়ী এ পর্যন্ত সব পরীক্ষা হয়েছে। সোমবারও দুই শিফটে তিনটি শ্রেণির তিন বিষয়ের পরীক্ষা হবে। যেহেতু রাজনৈতিক একটি পরিস্থিতি চলছে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদে আসতে সতর্ক করছি আমরা। সামনে নির্বাচন, পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার তো সুযোগ নেই। দ্রুত শেষ করাটা জরুরি। এটা অভিভাবকরাও বুঝেছেন।’

এদিকে, বেসরকারি স্কুলগুলোতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নচিত্র দেখা গেলেও বার্ষিক পরীক্ষা রুটিন মেনেই হবে। সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর নাম করা বেসরকারি স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অবরোধের দিনেও বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রুটিন অনুযায়ী ভিকারুননিসার তিন ব্র্যাঞ্চেই সোমবার দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি, তৃতীয় ও নবম শ্রেণির গণিত, পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা হবে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। চতুর্থ, পঞ্চম ও নবমের পরীক্ষা হবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তো এখন বিপদে আছি। অবরোধে পরীক্ষা পেছাতে বলবো কীভাবে? কয়েকদিন পরই নাকি ভোটের তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচনের মধ্যে পরীক্ষা পড়ে গেলে তো আরও বেশি ঝামেলা হবে। এজন্য অবরোধে রাস্তায় চলাচলে ভয় থাকলেও চাচ্ছি যথাসময়ে দ্রুত পরীক্ষাগুলো হয়ে যাক।’

একই কথা বলেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিএফ শাহীন কলেজের কয়েকজন অভিভাবক। জোহরা আক্তার নামে আইডিয়ালের এক অভিভাবক বলেন, ‘এখন যেমন ঝামেলা হচ্ছে, তাতে রাস্তায় বের হতে ভয় লাগে। শুনছি সামনে আরও খারাপ অবস্থা হবে। সেজন্য মন্দের ভালো বিবেচনা করে আমরাই পরীক্ষা দ্রুত নেওয়ার কথা বলেছি। অবরোধ হোক আর যাই হোক পরীক্ষাটা যেন তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।’

জানতে চাইলে ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখার প্রধান জগদীশ চন্দ্র পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘রুটিন অনুযায়ী সোমবার থেকে পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা স্থগিত বা পিছিয়ে দেওয়ার কোনো নোটিশ আমরা পাইনি। সোমবার থেকে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, পরীক্ষা যথাসময়েই হবে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহিংসতার প্রবণতা বেশি। আমরা নির্বাচন ও এসব রাজনৈতিক উত্তাপ এড়াতে নভেম্বরেই শিক্ষাবর্ষ শেষের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবুও এড়ানো সম্ভব হলো কই? এখন যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা নিয়ে নেওয়াটা ভালো।’

অভিভাবকরাও পরীক্ষা দ্রুত হোক এমনটি চাইছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরাও জানতে পেরেছি। পাঁচ বছর পরপর দেশে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে শিক্ষকদের কিছু কাজ দেয় নির্বাচন কমিশন। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখেন। সেদিক থেকেও দ্রুত পরীক্ষা শেষ করাটা দরকার।’

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিচ্ছে দলটি। জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির সঙ্গে পালন করছে এসব কর্মসূচি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, বিরোধীদলগুলোও তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। বরং কর্মসূচির ধরন পাল্টে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে সরকারবিরোধী দলগুলো।

এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইসি সূত্রের বরাতে এরই মধ্যে নভেম্বরের চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরই নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হবে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। 

সূত্র : জাগো নিউজ