বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে ইলেকশন হবে। এই ইলেকশনের সময় একটা বিষয় সবাইকে নজরে রাখতে হবে....। সেই দল (বিএনপি-জামায়াত) এই দেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
বিএনপির নির্বাচনে আসতে না চাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ওই বিএনপি-জামায়াত ২০০৮ এইমাত্র ২৯ আসন পেয়েছিল। তারা জানে, তাদের নেতা নেই, মুণ্ডুহীন দল। তাদের এক নেতা পলাতক আসামি, এক নেতা কারাগারে।
নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি গাড়িতে আগুন বা মানুষের জীবনে আগুন দিয়ে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন, উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন, যেন আর কেউ সাহস না পায় দেশের মানুষের ক্ষতি করতে।
তিনি বলেন, এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো মানুষের নিরাপত্তা দেবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন।
যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারে, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, যারা আগুন দেয়, তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার।
বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত মানে সন্ত্রাসী। এরা মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। মানুষ খুন বিএনপি-জামায়াতের একমাত্র গুণ।
আগামীতে আরেকবার দেশের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দেবেন।
তিনি বলেন, নৌকার স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকা দেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বারবার বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়েছে, সরকার গঠন করেছি, জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই...। আমি শুধু এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে চাই।
মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে সরকারি কর্মচারীদের বেতন মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ানো হলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে তাদের আপত্তিটা কোথায়? ১৯টা শিল্পকারখানা ভেঙেছে। এই ধ্বংস কারা করছে, এদের মধ্যে কারা আছে, সেটাই খুঁজে বের করে দরকার এবং দেখা দরকার।
জনসভার শুরুতে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ সমাপ্ত ২ হাজার ৩৬৯ কোটি ৬২ লাখ টাকার ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ২২০ কোটি ৮২ লাখ টাকার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সারহান নাসের তন্ময়।
সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সার্কিট হাউজ মাঠে আসেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফেরি, বাস, ট্রেন, ট্রাকে করে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জনসভাস্থলে আসেন তারা। অনেকে আবার নেতাদের দেওয়া টিশার্ট কিংবা শাড়ি পরে আসেন জনসভায়।
বিকেল নাগাদ বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জড়ো হন সার্কিট হাউজ মাঠ এবং আশপাশের এলাকায়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানের জনসভায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।