logo
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:৫২
অণুগল্প
কেমন তে-রে ঘর
খোকন রায়

কেমন তে-রে ঘর

ঘুটঘুটে অন্ধকার। দরজা ভেবে ওয়াহিদ সাহেব এগিয়ে যান। নিকটে গিয়েই কেমন খটকা লাগে। জুম ঘরের দরজা এত বড় কেন! সহকর্মী রফিককে বলেন- এ কেমন তেরে ঘর রে রফিক, অত বড় দরজা! উপরে হাত বাড়াতেই খসখস করে ওঠে। ভয়ে তার হৃদকম্পন বেড়ে যায়। মায়ানমারের পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা হওয়ায় প্রতিপক্ষের স্পষ্ট ইঙ্গিতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ, ইয়াবা, মাদক চোরাচালান কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। রোহিঙ্গারা  এলাকার পরিবেশকে একেবারে বিষাক্ত করে তুলেছে। মাইলের পর মাইল সুন্দর সবুজ বনায়ন ধ্বংস করছে। অসামাজিক কাজ ক্রমশ বাড়ছেই। আবাসিক হোটেলগুলিতে রয়েছে সুন্দরীদের গোপন যাতায়াত। কিছুতেই নির্ধারিত ক্যাম্পে সীমাবদ্ধ রাখা যাচ্ছে না। আইনের তোয়াক্কা নেই এদের। সবকিছুতেই মারমুখী হতে চায়। কৃতজ্ঞতা বোধ বলতে কিচ্ছু নেই। রাতের আঁধারে সংখ্যা শুধু বেড়েই চলেছে। সামাজিক সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষের রয়েছে কঠোর নির্দেশ, তীক্ষ্ণ নজরদারি।  দিন রাত শুধুই টহল আর টহল। এখন এতটাই ক্লান্ত হাঁটতে গেলেও ঘুম আসতে চায়। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ওদেরকে তাড়া করলেই সীমান্ত ঘেষা বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দৌঁড়ে উপস্থিত হয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই সাফ উত্তর- আই তো ন দেহি। একই ভাষাভাষী হওয়ায় তাদের রক্ষা করতেই এমন জ্যান্ত মিথ্যাচার। চোরাচালানীর ক্ষেত্রেও একই রকম উত্তর। তখন মনে প্রশ্ন জাগে এদের দেশ প্রেম কোথায়?
 
ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতে টহল। অফিসারের কড়া হুশিয়ারী নির্দেশের কারণে কোন ফাঁকির সুযোগ নেই। ঠাণ্ডায় হাত পায়ের রক্ত যেন জমতে চায়। বুট,গরম পোষাকেও দাঁতেদাঁত ঠক ঠক করছে। ওয়াহিদ সাহেব টহল দলকে নিয়ে  জুম চাষিদের ঘর খুঁজতেই সেখানে গেছেন। তিনি ডান- বামে তাকিয়ে  দুপাশে চারটি পিলারের মত লক্ষ করেন। উপরের দিকে কালো অন্ধকার দেখেন। ঘরের চাল ভেবে হাত বাড়তেই ভাঁজ ভাঁজ ঢিলেঢালা চামড়ার মতো লাগে। তখন ভাল করে হাত লাগিয়ে দেখেন মোটা মোটা লোম। ঠিক তখনই জন্তুটি লেজ নেড়ে মশা তাড়ায়। আর বুঝতে বাকি নেই মহাবিপদে তারা। নিমিষেই গলা শুকিয়ে বুক ধড়ফড় করতে থাকে। তখনও দানবটি একদম স্হির। ভীত কম্পিত এক কদম সরে গিয়েই গুলিভরা এস এম জি তাক করে কাঁপা স্বরে বলতে থাকেন ...আমারে মারলে তরে ব্রাস ফায়ার কইরা দিমু কিন্তু! তখন ভীষণ বড় বন্য হাতিটি তার লম্বা শুড় উঁচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।