আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ২২:৩০
শেষদিনেও উপেক্ষিত ইসির চিঠি, সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ ৩৪ দল
নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার স্বাক্ষরে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তা জানাতে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে চাইলে দলগুলোকে শনিবারের (১৮ নভেম্বর) মধ্যে ইসিকে জানানোর জন্য পরিপত্র জারি করা হয়। দলের সভাপতি-মহাসচিব বা সমমর্যাদারের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তবে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ইসির ডাকে আওয়ামী লীগসহ সাড়া দিয়েছে মাত্র ১০টি দল। বিএনপিসহ বাকি ৩৪ দল ইসির ডাকে কোনো সাড়া দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) ইসি’র উপসচিব (নির্বাচনী সহায়তা ও সমন্বয়) মো. মাহবুব আলম শাহ বিএনপিসহ ৪৪ দলকে ই-মেইলের মাধ্যমে পৃথকভাবে চিঠি দেয়। ইসি জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত ৯ দল। এ কথা জানিয়ে আজ শনিবার ইসিকে দলগুলো চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে লড়তে চায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা ও জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ)। তৃণমূল বিএনপি ও প্রগতিশীল ইসলামী জোট হয়ে ভোটে লড়বে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে বহুদিন থেকেই দ্বন্দ্ব চলমান। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি ও নমুনা স্বাক্ষর দেওয়া প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
অন্যদিকে প্রথম দিনই আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রির রেকর্ড গড়েছে। প্রথম দিনই ১ হাজার ৭৪টি ফরম বিক্রি করে ক্ষমতাসীন দলটির আয় হয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে ফরম তুলে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সারাদেশ থেকে আসা প্রার্থীরা ফরম তোলেন।
নেতাকর্মীদের পদচারণায় দিনব্যাপী মুখরিত ছিল গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকা। ঢাকঢোল পিটিয়ে নৌকা সাজিয়ে মিছিল নিয়ে আসেন প্রার্থীরা। প্রার্থীদের চাপে বেশ গলদঘর্ম হতে হয়েছে ফরম বিক্রেতাদের। দফায় দফায় মাইকিং করে নির্দেশনা দিয়েও সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
অন্যদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও এ বিষয়ে ‘ভ্রুক্ষেপ’ নেই বিএনপির। দলটির নেতাদের ভাষ্য, বর্তমান ইসির ওপর যেহেতু আস্থা নেই, সে কারণে ইসির পদক্ষেপে নজর থাকলেও এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
দলটির সহ-দপ্তরসম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, আমরা তো এ ইসি মানি না। আমাদের দাবি ইসি পুনর্গঠন। এ কমিশন কী চিঠি দিলো আর না দিলো সেটা কোনো বিষয় না।
চিঠি প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, আওয়ামী লীগ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। আর সভাপতির স্বাক্ষরে তারা নমিনেশন দেবে। শনিবার আমাদের জোটবদ্ধ আবেদনের জমা দেওয়ার শেষ সময়।
তিনি বলেন, জাপার দুটি চিঠি এসেছে। জিএম কাদের বলেছেন কার স্বাক্ষরে মনোনয়ন হবে। আর রওশন এরশাদ বলেছেন তারা জোটে ভোট করবেন, আমলে নেবেন কোনটা? এটা কমিশন দেখবে। কারণ দুটো চিঠি এসেছে। কমিশন যেটা আমলে নেয়।
জাপার সাইনিং অথরিটি কে হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নরমালি দলের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব সাইনিং অথরিটি হয়। জিএম কাদের সাইনিং অথরিটি, তাহলে বিবেচনা কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কমিশনকে বলতে হবে।
আওয়ামী লীগ চিঠিতে কী বলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছে, জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। আর সভাপতির স্বাক্ষরে তারা নমিনেশন দেবে।
নৌকা প্রতীক নিয়ে কারা ভোট করবেন? জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আওয়ামী লীগের চিঠিতে সেটি বলা নেই যে কারা ভোট করবেন। তারা বলছে, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, নৌকা প্রতীক নিয়ে করবে।