আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের (এমপি) মধ্যে অনেকেই বাদ পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি জোট ও জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতার ফলে কিছু আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের বাদ পড়তে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) থেকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হয়েছে। সংসদীয় বোর্ডের এই সভায় দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, দলের মধ্যে এমন আলোচনা এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না দলের নেতাদের অনেকেই।
তাদের মতে, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়নে একটা বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছিল। বিএনপির নির্বাচনে আাসার সম্ভাবনা এখন আর নেই। কিন্তু তারপরও যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে, সে সব দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার একটা বিষয় রয়েছে। এর পাশাপাশি অতি বিতর্কিত কিছু এমপি বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপিসহ কিছু দল নির্বাচনে না আসায় ২০১৮ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জোট বা জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর জন্য একটু বেশি আসন ছাড় দিতে হবে। কারণ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে কিছু দল ও জোটকে নির্বাচনে আনার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এই দলগুলোকে কিছু আসন ছাড় দিতে হবে। এই সব দলের সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনায় আওযামী লীগের দুর্বল প্রার্থীর সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর তাছাড়া আসন সমঝোতার নিশ্চয়তার ভিত্তিতেই এই দলগুলো নির্বাচনে আসবে। এতে এমন কিছু আসনে ছাড় দিতে হবে, যেখানে বর্তমানে আাওয়ামী লীগেরই এমপি আছেন। বর্তমানে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির যে আসনগুলোতে এমপি রয়েছে, গত নির্বাচনের মতো এবারও ওই আসনগুলোতে ছাড় দিতে হবে। এর বাইরে আরও কিছু আসন তারা দাবি করতে পারে। অর্থাৎ নতুন করে জোট ও জোটের বাইরের দলগুলোকে যে সব আসন ছাড়তে হবে সেগুলোতে বর্তমানে আওয়ামী লীগেরই এমপি রয়েছেন। এর ফলে দলের কিছু এমপি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়বেন।
এছাড়া কিছু আসনে এমনিতেই দলীয় প্রর্থীর পরিবর্তন আসতে পারে। গত ৫ বছরে যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন, যা দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোত দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন, জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন—এরকম কিছু এমপি এবার মনোনয়ন পাবেন না। তবে সেই সংখ্যাটা খুব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০টির মতো আসন হতে পারে, যেখান থেকে বর্তমান এমপিরা বাদ পড়বেন। তবে দলীয় মনোনয়ন ৩০০ আসনেই চূড়ান্ত করা হবে। এর পর জোট ও জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে দলের প্রার্থীদের কাছ থেকে লিখিত নেওয়া হবে যাতে সমঝোতা হলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৩৩৬২টি। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে প্রতিটিতে গড়ে ১১ জন করে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলীয় প্রার্থী মনোয়নের কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এ সভায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মোট্ট ৭২টি আসনেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আগামী ২৫ নভেম্বর ৩০০ আসনেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর তালিকা ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানান।
তবে বাদ পড়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের ইঙ্গিত দিলেও কত জন বাদ পড়েছেন, সেটা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, কয়জন বাদ পড়ছেন এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না, তবে বাদ পড়েছেন।
এ অবস্থায় কত আসনে পরিবর্তন এসেছে, কারা বাদ পড়েছেন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সংসদীয় বোর্ডের একজন সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি তা বলতে চাননি। তিনি বলেন, আমাদের এ বিষয়ে কথা বলা নিষেধ। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাই আমি কিছু বলতে পারছি না।