logo
আপডেট : ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:৪৯
নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এলোমেলো অবস্থায় বিএনপি
অনলাইন ডেস্ক

নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এলোমেলো অবস্থায় বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলও বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না তা নিয়ে এলো মেলো অবস্থা দেখা যাচ্ছে। তারা আপতত 

তফসিল সংক্রান্ত বিষয়েক খুব একটা আমলে নিচ্ছে না । তাদের ধারণা একটা 'বিভ্রান্তি তৈরি' করার জন্যই এসব কথা বলা হচ্ছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মূল কথা হচ্ছে সরকারের কথায় মানুষের আস্থা নেই। তারা আজকে এক কথা বলছে, কালকে আরেক কথা বলছে”
তিনি আরো বলেন, “আজকে বিএনপিকে খুশি করার জন্য নির্বাচনী শিডিউল দু দিন-পাঁচ দিন পিছিয়ে দেবে আর বিএনপি তাদের উল্টো-পাল্টা কথা আস্থায় নিয়ে লাফিয়ে নির্বাচনে যাবে- এটা মনে হয় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না,।

ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে জোর দিয়ে বলছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটা অনেক আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ দুজনে দুজনার। তারা তফসিল আগাবে না পেছাবে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। নির্বাচনে যাবার মতো কোন সিদ্ধান্ত আমাদের দলের মধ্যে নাই,।''

বিবিসি বাংলার রিপোর্ট বলছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন কয়েকটি চিন্তাধারা কাজ কাজ করছে। দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে বলা কয়েকটি ধারণা পাওয়া গেল।

নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোন দিকে যায় সেটি তারা দেখার অপেক্ষায় আছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ক্ষমতাসীনরা একতরফা নির্বাচন করে ‘পার পাবে না’।

বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করছেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের মুক্তি দিলে নির্বাচনে অংশ নেবার বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক হলেও হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “এটা ঠিক যে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারপরেও আমরা নির্বাচনে গিয়ে দেখতে পারি, পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। প্রয়োজনে মাঠ থেকে সরে আসবো।”

কিন্তু এর বিরুদ্ধ মতও আছে বিএনপিতে। অনেক নেতা মনে করেন, নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দিলে জনগণের কাছে বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট তৈরি হতে পারে। তাছাড়া একবার নির্বাচনের মাঠে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসাও সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ২০১৮ সালের মতো হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

তাছাড়া নেতা-কর্মীদের মামলা প্রত্যাহার কিংবা জামিনের বিষয়টি সরকারের সাথে আলোচনা বা সমঝোতার বিষয়বস্তু হতে পারে না বলে দলটির অনেক নেতা মনে করেন।

“আমরা তো জামিনের জন্য আন্দোলন করি নাই। আমরা তো আন্দোলন করছি এদেশের মানুষের ভোটাধিকারের জন্য,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বিদেশে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

“এ অবস্থাতে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবই তাদের কন্ট্রোলে। কেয়ারটেকার সরকার আসুক আমরা নির্বাচনে যাব, তাছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না,” বলেন মি. মাহমুদ।
গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ও সহিংসতার পর দলটির বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিএনপি অনড় থাকবে?
বিবিসি বাংলার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতাদের সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত নয়। অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পুরনো মামলায় বিএনপি নেতাদের কারাদণ্ড হচ্ছে। এমন অবস্থায় তারা নির্বাচনের চেয়ে মামলা মোকাবেলা কিংবা গ্রেফতার এড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দাবি করা হচ্ছে, গত ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে সারাদেশে দলটির ১৫হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে।

তাহলে এখনকার পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না – এটাই কি চূড়ান্ত কথা?

জবাবে ড. মঈন খান বলেন, “চূড়ান্ত কথা বলে রাজনীতিতে কিছু নেই। রাজনীতি হচ্ছে একটা ফ্লেক্সিবল জিনিস। এবং গিভ এন্ড টেইকের ভিত্তিতে রাজনীতি পরিচালিত হয়। কাজেই এখানে আমি আমার গো ধরে বসে থাকব, সরকার তার গো ধরে বসে থাকবে – এটা তো কথা হতে পারে না”

তবে সরকারকেই প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন ড. খান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই মনে করেন নির্বাচন নিয়ে সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের যে চাপ তৈরি হয়েছে সেটি বিএনপির জন্য ইতিবাচক। কিন্তু তারা আন্দোলন থেকে সরে আসার কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

"আমরা আন্দোলন করছি গত ১৫ বছর যাবৎ। এখানে হয়তো পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি হয়তো সহায়ক ভূমিকা হিসেবে আছে। কিন্তু আমরা শুধুমাত্র তার উপর নির্ভরশীল নই। আমরা দেশের মানুষকে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলছি," বলছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।

বিএনপি নেতারা স্বীকার করছেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন তফসিল পেছানো সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছে সেটিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য দুই-একদিনের মধ্যেই নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির এক সদস্য।