পিবিআই পূর্বাঞ্চলের বিদায়ী ডিআইজি মোর্শেদুল আনোয়ার খান চাকুরী হতে অবসর প্রাপ্ত হওয়ায় পিবিআই কর্তৃক বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।পিবিআই জানায়, আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১.৩০ টায় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার । পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স এর অফিসার-ফোর্স সহ ঢাকা ও আশপাশের ইউনিট প্রধানগণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিদায়ী অতিথিকে ফুল, ক্রেষ্ট এবং উপহার সামগ্রী প্রদান পূর্বক বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বিদায়ী অতিথি ডিআইজি মোর্শেদুল আনোয়ার খান বলেন, বিদায় নিতে হয় তাই বিদায় নিচ্ছি। মন থেকে বিদায় নিতে পারছি না। সবাইকে নিয়ে যে বিশাল পরিবারে দীর্ঘ ৩২ বছরের পথচলা, কাজ করেছি, ভাব বিনিময় করেছি, এত বড় পরিবার থেকে কিভাবে বিদায় নেই? আমি ধন্যবাদ জানাই, আপনারা আমার শেষ কর্ম দিবসে আমাকে মন খারাপ হতে দেন নাই। আমার অত্যন্ত সৌভাগ্য ক্রিমিনাল এডমিনিস্টেশন দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, সেই অপরাধ প্রশাসন থেকেই বিদায় নিচ্ছি। আমি পিবিআই থেকে অপরাধ প্রশাসন সম্পর্কে চাকুরির শেষ সময়েও অনেক কিছু শিখেছি।
তিনি সকলের উদ্দেশ্যে উপদেশ প্রদান পূর্বক বলেন, পিবিআই যে উচ্চতায় উঠেছে তা ধরে রাখতে হবে। আমি আপনাদের সুনামে আনন্দিত হব। পিবিআইতে আমার কার্যক্রমে আপনারা বিভিন্নভাবে আমাকে সাহায্য করেছন। এটি আমি ভুলব না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কবিতা দিয়ে বিদায়ী অতিথি তার বক্তব্য শেষ বলেন-
“একদিন তরীখানা থেমেছিল এই ঘাটে লেগে,
বসন্তের নূতন হাওয়ার বেগে।
তোমরা সুধায়েছিলে মোরে ডাকি’
পরিচয় কোনো আছে না কি,
যাবে কোন্খানে।
আমি শুধু বলেছি, কে জানে।
নদীতে লাগিল দোলা, বাঁধনে পড়িল টান
একা বসে গাহিলাম যৌবনের বেদনার গান।
সেই গান শুনি’
কুসুমিত তরুতলে তরুণ তরুণী
তুলিল অশোক,
মোর হাতে দিয়ে তা’রা কহিল, এ আমাদেরি লোক।
আর কিছু নয়,
সে মোর প্রথম পরিচয়।”
প্রধান অতিথির ব্যক্তব্যে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আমাদের ব্যাচে দুজন কবি ছিলেন। মোর্শেদুল আনোয়ার খান তাদের একজন। মোর্শেদুলের দ্বারা পিবিআই অনেক উপকৃত হয়েছে। তিনি পিবিআই’তে ফুটপ্রিন্ট রেখে গেছেন; উত্তরসূরীরা তা মনে রাখবে। পিবিআই প্রধান বিদায়ী অতিথি সুস্থ্যতা কামনা করেন। তিনি ভবিষ্যতেও কাজের মধ্যে থাকবেন এই প্রত্যাশা জ্ঞাপন পূর্বক পিবিআই প্রধান তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে ডিআইজি (পশ্চিমাঞ্চল) মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান স্যার সুস্থ্যতার সাথে, সম্মানের সাথে, সহকর্মীদের ভালবাসার সাথে কর্মজীবন অবসান ঘটান, স্যারকে অভিনন্দন। স্যার অনেক বিষয়ে পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। স্যারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত ডিআইজি, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর ও দক্ষিণ) এবং সিলেট বিভাগ জনাব মোহাঃ আবদুল মালেক বলেন, সারদা থেকেই জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান স্যারদের ব্যাচের লোকজনের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। তাঁর বাচনভঙ্গি, দক্ষতা ও দিক নির্দেশনা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। স্যার, আসামীদের প্রতি অন্যায় ও অতি মাত্রায় আইনের প্রয়োগ যাতে না হয় তার প্রতি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি সায়েদুর রহমান বলেন, আজকের অনুষ্ঠান মন ভেঙ্গে দেয়ার অনুষ্ঠান। জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান স্যারের বিদায় দিতে গিয়ে মন ভারাক্রান্ত হয়। স্যারের মতো কাজ জানা লোককে পিবিআই এবং বাংলাদেশ পুলিশ হারাতে যাচ্ছে যা অত্যন্ত বেদনার। পিবিআইতে আমরা স্যারের কাছে নিত্যই শিখেছি। ৩২ বছর স্যার পুলিশ প্রতিটি স্টেশনে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চাকুরি করেছেন যা স্বরণযোগ্য। আমরা চাই আপনাকে অনুসরণ করতে।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আহসান হাবীব পলাশ বলেন, জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান স্যার ৪টি জেলার এসপি ছিলেন। এটা সৌভাগ্যের বিষয়। স্যারের সাথে কাজ করতে বিব্রতবোধ করতাম না কারণ স্যার সকলকে স্নেহতুল্য ছোট ভাইয়ের মতো দেখতেন।
পুলিশ সুপার (সিআরও পূর্বাঞ্চল) মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান স্যার একজন হাসিখুসি মানুষ। স্যার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মামলা দেখেছেন। এতেই বোঝা যায় তিনি একজন মানবিক পুলিশ অফিসার।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর ইউনিট ইনচার্জ অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদায়ী অতিথি জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান স্যার শিক্ষকের মতো বই ধরিয়ে আইনের ধারাগুলোর ব্যাখ্যা করে মামলা নিষ্পত্তিতে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতেন। স্যারের পরিবার সুন্দর ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিআরও (পূর্বাঞ্চল) মোহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান স্যার পেশাদারিত্ব এবং মানুষকে ন্যায় বিচার দেয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বিদায়ী অতিথি জনাব মোর্শেদুল আনোয়ার খান ২০২২ সালে পিবিআই’তে যোগদান করে ডিবিআই (পূর্বাঞ্চাল) এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১ ডিসেম্বর ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কুমিল্ল শিক্ষা বোর্ড থেকে ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৮১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে বিএসসি (অনার্স) এবং এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১২ তম বিসিএস এর পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি তাঁর কর্মজীবনে ০৪ টি জেলা (কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, কুমিল্লা এবং নেত্রকোণা জেলা) এর পুলিশ সুপার হিসেবে সাফস্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পুলিশ টেলিকম এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছেন।