যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, গাজায় ‘নির্বিচারে বোমা হামলা’ চালানোর কারণে ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারাচ্ছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন-এর তরফ থেকে ইসরায়েলের নেতৃত্বের সমালোচনা করে এটাই সবচেয়ে কড়া বিবৃতি।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালে পুনরায় নির্বাচনের প্রচারণায় ডেমোক্রেট দলের ডোনারদের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এসব কথা বলেন।
গত সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভেতরে হামলা চালানোর পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন।
“ইসরায়েল তার নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে পারে। এছাড়া তাদের পাশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আছে, পুরো বিশ্ব আছে।”
“কিন্তু নির্বিচারে বোমা হামলার মাধ্যমে তারা সে সমর্থন হারাচ্ছে,” বলেন মি. বাইডেন।
তিনি একথাও বলেন যে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলের সমালোচনা করলেও গাজায় সামরিক অভিযানের জন্য আমেরিকা যে সহায়তা দিচ্ছে সেখান থেকে সরে আসার কোন ইঙ্গিত দেননি।
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলের সাথে মতপার্থক্যের বিষয়টি প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের সাথে দুই রাষ্ট্র সমাধানে যাবার বিরোধিতা করছেন। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিকরা দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসছেন।
জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫৩টি রাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই প্রস্তাব মেনে চলার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এই প্রস্তাবের রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। এই প্রস্তাব পাশের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।
এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ১০টি দেশ ভোট দিয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, প্যারাগুয়ে ও অস্ট্রিয়া।
ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, এবং ইউক্রেনসহ ২৩টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা ‘টেকসই যুদ্ধবিরতির’ আহবান জানিয়েছে।
এই তিনটি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, তারা চায় এই যুদ্ধবিরতি শুরু হোক এবং ‘টেকসই যুদ্ধবিরতির’ জন্য তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমর্থন করবে।
“ তবে এটা এক-পাক্ষিক হতে পারেনা। সব জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে হামাসকে। ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষকে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে,” বলা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।
এই যুদ্ধবিরতিকে মানবিক যুদ্ধবিরতি হিসেবে বর্ণনা করছে জাতিসংঘ।
এর আগে অক্টোবর মাসেও গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি হয়েছিল। তখন ১২১টি দেশ যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছিল। এছাড়া ১৪টি দেশ বিপক্ষে এবং ৪৪টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল তখন।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব পক্ষকে এটা মেনে চলতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং বেসামরিক মানুষকে রক্ষা করার বিষয়টি মেনে চলতে হবে।
অনতিবিলম্বে এবং কোন শর্ত ছাড়া সব জিম্মিকে মুক্তি দেবার কথা বলা হয়েছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে। এছাড়া গাজায় যাতে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে পারে সেটিও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস তার বক্তব্যে বলেন, বেসামরিক মানুষজনের উপর হত্যাযজ্ঞ চলছে। মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখানো হচ্ছে।
“ যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে,” বলেন সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস।
সিনিয়র হামাস নেতা বাসেম নাঈম বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটেছে।
ভোটাভুটির আগে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বিরোধিতা করেন।
“আপনার দেশ যদি ইসরায়েলের জায়গায় থাকতো তাহলে আপনি কী করতেন? যুদ্ধবিরতির আহবান করতেন? মস্কো তখন কী করতো? বেইজিং? ইস্তানবুল? আপনারা কিভাবে জবাব দিতেন? এখানে সবাই সেটা জানে,” গিলাড এরডান।
তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে হামাসের ত্রাসের রাজত্ব দীর্ঘায়িত হবে। সেজন্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে ভোট দেবার আহবান জানান ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত।