আগুনে তিন বগি পুড়ে যাওয়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি আগুন নিয়েই তেজগাঁও স্টেশনে এসেছিল। আগুন দেখতে পেয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ ট্রেনটি থামার সংকেত দেয়।
পরে স্টেশনের দক্ষিণ প্রান্তে গিয়ে ট্রেনটি থামে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা করে এসব কথাই জানান প্রত্যক্ষদর্শী ও স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিন ভোর ৫টার দিকে তেঁজগাও রেলস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনের তিন বগি পুড়ে যায়। ট্রেনটি মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসেছিল। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় আগুনে পুড়ে নিহত হয় এক শিশু ও এক নারীসহ ৪ জন যাত্রী। আহত হন আরো একজন। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আহত একজন একই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আগুনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ছ, জ, ঝ এই তিন বগি পুড়ে যায়। ট্রেনটিতে মোট ১৪টি বগি ছিল। ট্রেনটি বর্তমানে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রাখা হয়েছে।
তেঁজগাও রেল স্টেশনে চায়ের দোকানদার আবুল খায়ের বলেন, ট্রেনটি যখন তেঁজগাও স্টেশনে আসে, তখন এর মাঝের তিনটি বগি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ট্রেনটি এই স্টেশনে থামার কথা না। তাই ট্রেনটি টেনে যাচ্ছিল। পরে স্টেশন পার হয়ে গিয়ে ট্রেনটি থামে। ট্রেনের শেষ বগি ছিল স্টেশনের দক্ষিণ প্রান্তের শেষে। আর ট্রেনের সম্মুখ ভাগ ছিল তেঁজগাও রেল ক্রসিংয়ে।
ট্রেনে ফেরি করে ফল বিক্রি করেন ফারুক মিয়া। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস যখন তেঁজগাও স্টেশনে আসে তখন ফল কিনতে কারওয়ান বাজার যাচ্ছিলেন তিনি। ফারুক মিয়া বলেন, ট্রেনটি যখন তেজগাঁও-বিজয় সরণীর ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আসছিল, তখন থেকেই ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। ট্রেন যখন স্টেশনের কাছে আসে তখন এক লোক ট্রেন থেকে নিচে লাফ দেয়। তার মাথা ফেটে যায়। কিন্তু লাইন ক্লিয়ার থাকায় ট্রেন চলে যাচ্ছিল। পরে স্টেশনের শেষ মাথায় গিয়ে ট্রেন থামে।
তেজগাঁও স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. পর্বত আলী বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৪টা ৫০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হয়। তেজগাঁও স্টেশনে এসে পৌঁছায় ৪টা ৫৪ মিনিটে। যেসব ট্রেন তেজগাঁও স্টেশনে থামে না সেগুলোর জন্য আমরা সবুজ বাতি জ্বালিয়ে পার হওয়ার সংকেত দেই। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের জন্যও সবুজ বাতি ধরা হয়েছিল। কিন্তু দেখি যে, ট্রেনের ইঞ্জিনের পেছনের ৫-৭ টা বগির পর থেকে ধোঁয়া উঠছে। সঙ্গে সঙ্গে সবুজ বাতি পরিবর্তন করে লাল বাতি জ্বালিয়ে বিপৎসংকেত দিই। পাশাপাশি স্টেশন রুমে এসে কম্পিউটারের মাধ্যমেও সব সিগনাল বিপজ্জনক করে দিই। এতে ট্রেনটি স্টেশনের শেষ প্রান্তে থেমে যায়।
তিনি আরও বলেন, ট্রেন থামার পর তাৎক্ষণিক ৯৯৯ এ কল দিয়ে ফায়ার সার্ভিসে জানালাম। পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালাম। পরে ৫টা ৮ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস আসে। ৫টা ১৫ মিনিটে তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এক ঘণ্টা পর ৬টা ১৫ মিনিটে তারা আগুন নিভিয়ে কাজ শেষ করে। এর পর ৬টা ২৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, আগুনে ট্রেনের ছ, জ, ঝ এই তিনটি বগি পুড়ে যায়। ভেতর থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ট্রেনটি যেহেতু ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কোনো বিপজ্জনক সংকেত ছাড়াই ছেড়ে এসেছিল, তার মানে এর পরেই আগুন লাগে বলে ধারণা করছেন এই সহকারী স্টেশন মাস্টার। তবে কিভাবে আগুন লেগেছে বা কেউ নাশকতা করে লাগিয়েছে কি না সেই বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
এদিকে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দিকে ইঙ্গিত দিয়ে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হচ্ছে রেলওয়ে। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রেলভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে নিরাপদ রেলযাত্রাকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো যে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে, এ সময়ে রেলে সহিংসতা বাড়ছে। রেলকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফেলে হুমকি তৈরি করা হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
সম্প্রতি ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যাত্রী হয়ে ট্রেনে ওঠলে তো রেলের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩-১৪ সালেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। এবার বাসের বদলে ট্রেনকে প্রধান হাতিয়ার করা হচ্ছে। পরিকল্পিত দুর্ঘটনা ঘটাতে ফিশপ্লেট খুলে ফেলা হচ্ছে।