logo
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৬:৩১
আজকের গল্প
গোবর বিভ্রাট
জারমিন কোমা সৌহেলী

গোবর বিভ্রাট

জারমিন কোমা সৌহেলী

স্বামীর চাকরির সুবাদে কুমিল্লায় থাকি। বাবার বাড়ি ময়মনসিংহে বেড়াতে এসেছি। আজই চলে যাবো। কুমিল্লায় ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি তিনদিন ধরে। গোছগাছ করছি সব। এই গোছগাছ জামা-কাপড় নয়-গোবর গোছাচ্ছি তিনদিন ধরে। গাছের পাগল আমি-সবাই বলে বৃক্ষপ্রেমিকা। কতোজনের কতো কথাই শুনতে হয় আমাকে। থোড়াই পরোয়া করি। গোবর গোছালাম কুমিল্লা নিয়ে যাবো বলে। আমার এই বদ-কি ভালো অভ‍্যাসটি যেখানেই যাই সেখানেই প্রয়োগ করি। গাছ লাগাই। এটা নেশাও বলা যায়। বিপাক হলো মাটি আর গোবর নিয়ে। এগুলো পাওয়া মুসকিল।তাই যখন বাবার বাড়ি যাই এসব নিয়ে আসি।  এতো দূর কি করে গোবর নিয়ে যাবো তা ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলি আমার কাকা বিদেশ থেকে আমার জন‍্যে একটা এক্সফোর্টের ট্রলিব্যাগ এনেছিলেন ওটা নিবো। তার মধ্যে বড় বড় পলিথিন বিছিয়ে তাতে গোবর ভরে ভালো করে সিল করে দিই। তাও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিলো বলে কড়া ঘ্রাণের তিনটা ইউরোপীয়ান পারফিউম স্প্রে করি। ট্রলির চেইন লাগিয়ে উপরেও কিছুটা পারফিউম ছিটাই। তার উপরে কাগজে গোটা গোটা বাংলায় লিখে দিই -হাত দেয়া নিষেধ।
 কুমিল্লার উদ্দেশ্যে মালপত্রসহ অটোরিকসায় করে বাসস্ট্যান্ড আসি। বাবাও সাথে আসে। জালালাবাদ বাসটি ময়মনসিংহ টু চট্টগ্রাম। এটি কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম যাবে। তাই বাবা টিকিট করে এই বাসেই উঠিয়ে দিলো। গোবরে ঠাসা ট্রলিটা বাসে মালামাল রাখার জায়গায় রাখার সময় বারবার সাবধান করছি বাসের হেলপারকে।  আমার পাশে এক বয়স্ক মুরুব্বি বসা। আমার কথা বলার সময় ট্রলি যথাস্থানে রাখার সময় তিনি আমার ট্রলিটি দেখে নেন। অনেকক্ষণ উনি আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। ঘণ্টাখানেক পর উনি জিজ্ঞেস করেন আমায়- কই যাবেন?বললাম -কুমিল্লা।  
- কুমিল্লা কই থাকেন?
বললাম- ক্যান্টনমেন্ট,বর আর্মিতে চাকরি করে।
- ও। আচ্ছা আপনি বার বার ব্যাগটাকে সাবধানে রাখতে বলছেন কোনো?  কাপড়চোপড় তো আর নষ্ট হয়ে যাবে না?
বললাম-না চাচা আসলে ওটাতে অনেক দামি জিনিস আছে তো তাই হেলপারকে একটু সাবধানে রাখতে বললাম আরকি।

কখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গেছি জানি না।
ঘুম ভাঙে কুমিল্লা আসার পর হেলপারের ডাকে।
পাশে বসা মুরুব্বিকে আর দেখা গেলো না।  হেলপারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি কয়েক স্টপেজ আগেই তিনি নেমে গেছেন।

বাস থেকে নামি। হেলপারকে বলি -ভাই আমার ট্রলি আর ছোট ব্যাগটা দেন। হ্যালপার বললো -আপা ছোট ব্যাগ নেন। আর ট্রলি তো চাচা বললো উনার তাই উনি নিয়ে গেছেন। আপনার সাথে বসা ছিলো ভাবলাম আপনারা পরিচিতই।
আমি হা করে রইলাম।
 বাসায় বসে আছি আর ভাবছি আমার গোবর। এতো কষ্ট করে প্যাকিং করা গোবর। কত টাকার স্প্রে! কষ্টে আমি নির্বাক। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে বয়স্ক লোকটির জন‍্যে। যিনি এত কষ্ট করে ট্রলিটা এই বৃদ্ধ বয়সে যত্নের সাথে বহন করে বাড়ি নিয়ে দেখবেন এটায় শুধু গোবর। তার মুখের অবস্থাটা কল্পনা করে ভীষণ হাসি পায় আবার কষ্টও লাগে আমার।