গত ৩০ নভেম্বর ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি শুধু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কোন আসনে কোন প্রার্থী কত ভোট পাবে সেটিও নির্ধারণ হয়ে গেছে। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ‘নির্বাসিত গণতন্ত্র ও বিপন্ন মানবাধিকার’ শীর্ষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এ সভার আয়োজন করে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট।
মঈন খান বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি কীসের নির্বাচন হবে? গত ৩০ নভেম্বর তো ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেছে। নির্বাচনের ফলাফলও সরকারের হেডকোয়ার্টারে নির্ধারণ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই। এ নির্বাচন নিয়ে সরকারের ভোট ভাগাভাগি এমন পর্যায়ে গেছে, তাদের লজ্জা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এর থেকে উত্তরণের জন্য আমরা যে যেখানে আছি, যেভাবে পারি এ সরকারের প্রতিবাদ করতে হবে, এ সরকারের অপকর্মের বাধা দিতে হবে এবং এ সরকারকে অপসারণ করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অন্য একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
দেশের মানুষ ধন-সম্পদ চায় না জানিয়ে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তারা পাঁচ বছর পর পর একদিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ভোট দিতে চায়। এটাই হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার যদি আমরা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে না পারি, তাহলে আমরা যা কিছু বলছি, যা কিছু করছি সব অর্থহীন হয়ে যাবে। আসুন আমরা এ সরকারকে অপসারণ করে দেশের মানুষের ভোটের মৌলিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমাদের আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধভাবে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট বাকশালী সরকারকে অপসারণ করে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন-সংগ্রাম, সেই সংগ্রামে আমরা রাজপথে আছি। পাশাপাশি এ বিষয়ে আলোচনা, সেমিনার, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কাজগুলো করতে হবে। প্রতিটি আন্দোলনের যেসব পন্থা আছে, সেই পন্থায় আমাদের এ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আরোপ করতে হবে। আমরা সেমিনার করবো, রাজপথে প্রতিবাদ করবো, সরকারের সমালোচনা করবো, প্রয়োজনে সরকারকে বিদায়ের রাস্তা দেখিয়ে দেবো। কোনো কাজেই আমরা পিছিয়ে থাকবো না।
তিনি বলেন, আমরা এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। গণতন্ত্র একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া। গণতন্ত্রের ভেতরে কোথাও সংঘাতের সুযোগ নেই। এখানে ভিন্নমতকে সুযোগ দিতে হবে। সেই ভিন্নমত প্রকাশের পর যে মতটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, সেটাকে আমরা সমর্থন করবো। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। আমরা যদি এদেশে গণতন্ত্র অর্জন করতে চাই, যে গণতন্ত্র হচ্ছে একটি শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি, সেই পদ্ধতি আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় অর্জন করতে হবে, অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় নয়। তবে এমন সময় আসতে পারে, এমন প্রয়োজন হতে পারে যখন এ প্রক্রিয়া (শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া) যদি যথেষ্ট না হয়, তাহলে অন্যান্য প্রক্রিয়া ব্যবহার হতে পারে। এটা আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে দেখেছি। আমি আশা করি, বর্তমান সরকার দেশের মানুষকে সেই পর্যায়ে ঠেলে দেবে না।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছি। এ অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে মানুষের মধ্যে। আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি বলে কেউ যে এর সমালোচনা করবে না আমি সেটা চিন্তা করি না। কেউ সমালোচনা করলে আমি সেটার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো। শেষে যে মতটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, সেটিই বিজয়ী হবে। এটাই গণতন্ত্রের ভাষা, পদ্ধতি।
অসহযোগ আন্দোলনে বিএনপি পাঁচটি দফা বা ইস্যু দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে সবচেয়ে প্রথম কথা হলো, এ নির্বাচন বর্জন করুন। আমি বলতে চাই, শুধু নির্বাচনকে নয়, এ সরকারকেও বর্জন করুন।
ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল আজিজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ।