logo
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৫:৪৪
হোমিও প্যাথ ডাক্তার থেকে এয়ারওয়েজের নামে প্রতারনা
ধরা পড়লেন প্রতারক ফরহাদী
নিজস্ব প্রতিবেদক

ধরা পড়লেন প্রতারক ফরহাদী

তার নাম এম. এ. হক আলম ফরহাদী (৬০)। তিনি সামান্য পড়াশোনা করে গ্রামে হোমিও প্যাথিক চিকৎসা শুরু করে। কয়েক বছর পর তিনি ঢাকায় এসে অখ্যাত পত্রিকায় কাজ করেন। এর পর নিজেকে জড়ান প্রতারণার সঙ্গে। সর্বশেষ বিভিন্ন এয়ারওয়েজের খােজ খবর নেন। নিজেই একটি এয়ার ও য়েজ কোম্পানীর নাম  দিয়ে তাতে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে লাখ লাখ টাকা কমাতে শুৃরু করেন। অবশেষে   র‌্যাব-১০ এর হাতে ধরা পড়েন তিনি। 

 র‌্যাব- জানায়, বিদেশী স্বনামধন্য এয়ারওয়েস কোম্পানীতে চাকরি দেওয়ার চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শতাধিক বেকার তরুন-তরুণীদের সাথে প্রতারণা করে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূলহোতাসহ ৪ জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

গত ০৫ ডিসেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনে "ANA (All Nippon Airways) Co. Ltd" নামক একটি এয়ারওয়েস  প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে চাকুরী দেয়ার কথা বলে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এই  বিজ্ঞাপন দেখে ভিকটিম মোঃ মাইন, পিতা-আব্দুল মতিন, সাং-কাটা কলোনী, মগবাজার, ঢাকা ও তার ভাতিজা মাসুদুল ইসলাম আপন (২১) এবং এবং তার অপর পরিচিত জুই আক্তার (১৯)দ্বয় মিলে গত-১০ ডিসেম্বর এয়ারওয়েস কোম্পানীতে চাকুরীর জন্য এএনএ  প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যোগাযোগ করেন। প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম. এ. হক আলম ফরহাদী ভিকটিমের নিকট নগদ-৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা দাবি করে। ভিকটিমরা আলম ফরহাদীর কথামত গত-২৩ ডিসেম্বর পুনরায় তাদের অফিসে গিয়ে নগদ-৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা প্রদান করে এবং চাকুরীর জন্য তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আসে। অতঃপর ভিকটিমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে যে, উল্লেখিত বিজ্ঞাপনে প্রদত্ত এয়ারওয়েজ নামে বাংলাদেশে কোন প্রতিষ্ঠান নেই। অতঃপর ভিকটিমরা আলম ফরহাদী সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু আলম ফরহাদী ভিকটিমদেরকে কোন প্রকার চাকুরী প্রদান এবং তাদের প্রদানকৃত অর্থ ফেরত না দিয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন প্রকার তালবাহানা করতে থাকে এবং একপর্যায় ফোন বন্ধ করে তাদের সাথে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরবর্তীতে ভিকটিমরা বুঝতে পারে যে, তারা প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। 
এ ঘটনার পর প্রতারিত ভিকটিমরা নিরুপায় হয়ে গত ২৭/ডিসেম্বর  অধিনায়ক, র‌্যাব-১০ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগ প্রাপ্তির পর র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল উল্লেখিত প্রতারক চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ২৮ ডিসেম্বর  রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানী ঢাকার ভাটারা থানাধীন জগন্নাথপুর শহীদ আব্দুল হাফিজ রোড এলাকায় অবস্থিত সুংসিং টাওয়ার এর ২য় তলা "ANA (All Nippon Airways) Co. Ltd" এর অফিসে একটি অভিযান পরিচালনা করে।  অভিযানে "ANA (All Nippon Airways) Co. Ltd" নামক এয়ারওয়েস কোম্পানীতে চাকরি দেওয়ার চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শতাধিক বেকার তরুন-তরুণীদের সাথে প্রতারণা করে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন এম. এ. হক আলম ফরহাদী (৬০), পিতা-আবদুর রউফ ফরহাদী, সাং-সৈয়দ কেরানী বাড়ী, থানা-ফেনী সদও, জেলা-ফেনী, মেহেরাব হোসেন (২১), পিতা-আবু তাহের, সাং-হামছাদি, থানা-লক্ষ্মীপুর সদর, জেলা-লক্ষ্মীপুর, বর্তমান ঠিকানা-মধ্য বাড্ডা, থানা-বাড্ডা, ঢাকা,  মোঃ রাসেল হোসাইন (৩০), পিতা-মৃত খালেকুজ্জামান, সাং-বাঘমারা মৌচাক, থানা-সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা-নারায়নগঞ্জ ও শাহাদাত হোসেন (৩৫), পিতা-হাফেজ জয়নাল আবেদিন, সাং-দক্ষিণ বোরোচর, থানা-মতলব উত্তর, জেলা-চাঁদপুর, বর্তমান ঠিকানা-নাখালপাড়া, মহাখালী, থানা-বনানী, ঢাকা বলে জানা যায়। এসময় তাদের নিকট থেকে ১৭০টি বিভিন্ন চাকুরী প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত, ৪টি বিভিন্ন চাকুরী প্রার্থীদের এপয়েনমেন্ট লেটার, ০১ পাতা দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রদত্ত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি, ০১ পাতা টাকা গ্রহনের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, ৩০০টি ANA Co. Ltd প্যাড, ২০০টি ANA Co. Ltd Gi M. A. Hoque Alam Forhady এর ভিজিটিং কার্ড, ৬০০টি "ANA (All Nippon Airways) Co. Ltd" এর বড় এবং ছোট খাম, ০২টি ল্যাপটপ ০২টি ল্যপটপ চার্জার, ০২টি ক্যাবল-, ০১টি মনিটর, ০২টি কি-বোর্ড, ০১টি টেলিফোন, ০১টি প্রিন্টার, ০১টি ক্যালকুলেটর, ০১টি M. A. Hoque Alam Forhady Country Director লেখা সিল, ০১টি ANA Co. Ltd সিল, ০১টি হাতঘড়ি, ০৬টি মোবাইল  ও নগদ-১,৩৮,৫০০/- (এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার পাঁচশত) টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত এম. এ. হক আলম ফরহাদী (৬০) উক্ত প্রতারক চক্রটির মুল হোতা। সে সামান্য পড়াশোনা করে তার গ্রামের বাড়ীতে একটি হোমিওপেথির দোকান দিয়ে হোমিওপেথির ঔষধ বিক্রি করতো। পরবর্তীতে ঢাকায় এসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে কাজ করতো বলে জানায়। একপর্যায় সে তার পূর্বপরিচিত কিছু অসাধু ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্ন এয়ারওয়েস সম্বন্ধে তথ্য নেয়। অতঃপর গত ০১/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ হতে উল্লেখিত "ANA (All Nippon Airways) Co. Ltd" নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনার শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে গত ০৫/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে একটি জাতীয় পত্রিকায় উক্ত কোম্পানীতে বিভিন্ন পদে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। অতঃপর গত ২৩/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে প্রায় শতাধিক চাকরি প্রাত্যাশিদের ভাইবা নেয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে আলম ফরহাদীর আরো জানা যায় চক্রটি এ যাবৎ ৯২ জন তরুন-তরুনিদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫-৪০ জন চাকরি প্রার্থীদের নিকট হতে আনুমানিক এক কোটি টাকার মতো আত্মসাৎ করেছে এবং বাকি চাকরি প্রার্থীদের নিকট হতে আনুমানিক আরো ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করে। এছাড়া তার কাছে তার নামে দুদকের ডেপুটি ডিরেক্টর উল্লেখিত একটি ভিজিটিং কার্ড পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে বিগত ১৮-১৯ বছর যাবৎ দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কর্তব্যরত ছিল পরিচয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে বিভিন্ন প্রকার প্রতারণা করে আসছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের ২টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মেহেরাব হোসেন (২১) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বলে জানায়। সে তার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি চাকরির সন্ধান করতে থাকে। চাকরির সন্ধান করার একপর্যায় আলম ফরহাদীর সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে গত ১০/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ হতে মেহেরাব অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে আলম ফরহাদীর সাথে যুক্ত হয় এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করে।
গ্রেফতারকৃত শাহাদাত হোসেন (৩৫) পড়ালেখা শেষ করে একটি চাকরির সন্ধান করতে থাকে। অতঃপর শাহাদাত বিগত ০৬ মাস একটি এয়ার টিকেটিং কোম্পানীতে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তার একজন সহকর্মীর মাধ্যমে আলম ফরহাদীর সাথে পরিচয় হয়। অতঃপর রাসেল সল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে গত ০১/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ হতে আলম ফরহাদীর সাথে যুক্ত হয় এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের রিজার্ভেশন অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ রাসেল হোসাইন (৩০) পড়াশোনা শেষ করে রাসেল একটি চাকরির সন্ধান করতে থাকে। অতঃপর চাকরির সন্ধান করার একপর্যায় আলম ফরতাগীর সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে রাসেল অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে আলম ফরহাদীর সাতে যুক্ত হয় এবং উক্ত  প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।