আপডেট : ১২ জানুয়ারী, ২০২৪ ১০:৫৮
আজকের গল্প
ঝগড়া
কোহিনুর রহমান
কোহিনুর রহমান
স্ত্রী মরিয়মের সাথে আজিজ সাহেবের ঝগড়া
প্রতিনিয়ত লেগেই থাকে। স্বামী আজিজ সাহেব বেশ ঝগরাটে। রাগী। খিটখিটে। বদমেজাজী। কিন্তু অন্য কারো বুঝার উপায় নেই। মানুষের সামনে খুবই সহজ,সরল,অমায়িক ভদ্রলোক। যতো ফ্যাসাদ-ঝামেলার জায়গা স্ত্রী। তবে আজকের ঝগড়া অতীত রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
মরিয়ম একা। তার দুই ভাই। বাবা,মা পরপারে গেছেন প্রায় বারো বৎসর। তফাৎ ছিলো তিন মাসের। মা আগে। বাবা পড়ে।
বাবা অনেক বিষয় সম্পত্তি রেখে গেছেন। এখানেই জটিলতা। বোনকে দিতে ভাইদের আঁতে ঘা পড়ে। মরিয়মের স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাব নেই। তবুও সে বিশেষ লোভী প্রকৃতির।
আজ যা ঘটলো। এই সম্পত্তির জের ধরে আজিজ সাহেব স্ত্রীকে অনেক বাজে বকা দেয়। সাথে এও বলে-শুয়োরের বাচ্চা! তুই তো বেজন্মা। তোর পয়দার ঠিক নেই। বাপের সন্তান হলে তো জমি পেতে। বকা দিক! তবে বাবা, মা তোলে ক্যান? এটা মরিয়ম সহ্য করতে পারে না। সে যদিও জমি আনার পক্ষে। তবে এ ব্যাপারে স্বামীর বাড়াবাড়ি মরিয়ম মানতে পারে না। তাই বকা খেয়ে সে বলে উঠে-যা জমি আনবো না! কি করবি কর! এক্ষুণি ভাইকে কল দিচ্ছি যে আমি এসবে নেই! আর কোথায় যায়, আজিজ সাহেব সাথে সাথে বলে-
জমি আনবি না মানে? আমার বাসায় তোর ভাত নেই। তোকে আমি তালাক দিবো। বাসা থেকে বেরিয়ে যা। এই ঘরের দুয়ার তোর জন্য চিরতরে বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি।
-তুই কি ভাবছিস আমার জায়গা নেই! দেখ কোথায় যাই।
-জানি তো! তোর লাঙ ভাতারের অভাব নেই। কোনো একটাকে ধরে তুই ওখানেই যাবি।
এবার মরিয়ম আর নিতে পারলো না। ত্রিশ বৎসর ঘর করার পর এ কথা! কার কাছে বলবে তার মনোকষ্ট! মা, বাবাও তো বেঁচে নেই। সে বলতে শুরু করলো-ও মা,ও বাবা আমি তোমাদের কাছে যেতে চাই। ও আল্লাহ তুমি আমাকে এ নরক যন্ত্রণা থেকে রেহাই দাও? আমি মুক্তি চাই।
অমনি আজিজ সাহেব-ওহো! তো এখন আমাকে কি করতে হবে? তোর পায়ে পড়ে মাফ চেয়ে ভুলের মাশুল দিতে হবে? না হয় তোর এসব নাটক দেখতে হবে? নাহ! বলে রাগের মাথায় ডাইনিং টেবিলে রাখা ক্রিস্টালের লবনদানিটা মরিয়মের কপালে ছুড়ে মারে। সাথে সাথে কপাল ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। লবনদানিটা ফ্লোরে পড়ে চুরমার হয়ে যায়।
প্রচণ্ড অপমান আর রাগে মরিয়মের শরীর কাঁপছে। কিন্তু আকস্মিক একটা শক্তি অনুভব করলো সে। নিমিষে কেমন জানি শান্ত হয়ে যায় মরিয়ম। হয়ত প্রচণ্ড অপমানে তার বোধশক্তি লোপ পেয়েছে।
মরিয়মের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। চারিদিক অন্ধকার লাগছে । তবে চোখে পানি নেই। কেমন জানি নীরব। নিথর। ভাগ্যিস আজ ছেলে-মেয়ে বাসায় নেই।
কপাল থেকে তখনো রক্ত ঝরছে। ভাগ্য ভাল চোখে চশমা ছিল না। বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ও আজিজ সাহেবের অশ্লীল অকথ্য গালিগালাজ সে শুনতে পেলো।
মরিয়ম রাস্তায় নেমে বুঝতে পারছে না কোথায় যাবে। তার আসলে যাওয়ার জায়গা নেই। গতকাল জমি নিয়ে ভাইয়ের সাথে বেশ বাক বিতণ্ডা হয়েছে। আত্মহত্যা মহাপাপ। না হলে সে নির্ঘাত সুইসাইড করতো।
আল্লাহ আমার মৃত্যু দাও...! এই কথা বিড়বিড় করতে করতে মরিয়ম হাঁটতে লাগলো। তার গন্তব্য উদ্দেশ্যহীন। অজানা।
বাসার সামনে বড় রাস্তা। পার হওয়ার সময় মিনি ট্রাকের ধাক্কায় সে সংজ্ঞাহীন। যখন সম্বিৎ এলো দেখে- চায়ের টঙ দোকানের বেঞ্চে সে শুয়া। মাথা,শরীর ভেজা। হঠাৎ একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। অচেনা ফুলের মোহনীয় গন্ধে চারদিক মোহিত।
মরিয়ম বিস্ময়ে অবাক! তার চুলে বাবা হাত বুলাচ্ছে। কেমন এক স্বর্গীয় অনুভূতি মর্ত্যে নেমেছে। অসম্ভব শুভ্র আর পবিত্র একটা ভাব বাবার শরীরে। যেন মুখাবয়ব থেকে নূর গলে গলে পড়ছে।
-বাবা তুমি...?
-হুম! তোকে দেখতে এলাম। তোর মন খারাপ তাই।
-তুমি কেমন আছো...?
-আলহামদুলিল্লাহ। ভালো!
-মা কেমন আছে...?
-তোর মা-ও ভালো সোনা!
আমরা দু'জন একসাথে হীরের খাটে নূরের বিছানায় থাকি। ওখানে সুখ শান্তির অভাব নেই মা! শাহাদৎ আঙ্গুল উপরে উঠিয়ে-
ঐ যে দেখ তোর মা!
মরিয়ম আকাশে তাকিয়ে দেখে ভরা পূর্ণিমা। গোল চাঁদের মধ্যে হীরের খাট। ঝলমল করছে। তার মা শুয়া থেকে উঠছে। সারা শরীর নূরে আবৃত। সব মিলে নূর যেন উপছে পড়ছে। মা হাসি হাসি মুখে তাকে হাত নেড়ে ডাকছে।
-বাবা! দেখো ঐ যে মা আমায় ডাকছে! আমিও তোমাদের কাছে যাবো বাবা! লোভাতুর দৃষ্টিতে বললো মরিয়ম।
-আচ্ছা চল্ মা!
সাথে সাথেই চোখ বুঁজে মরিয়ম বেঞ্চ থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ে।