logo
আপডেট : ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪ ১০:১৯
ধারাবাহিক উপন‍্যাস-দ্বিতীয় পর্ব
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন

  গহীনে নীল

বেলায়েত হোসেন

তুফানীর মুখটা খুবই শুকনো দেখাচ্ছে। শিবানী প্রশ্ন করে-তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো রে? তুই নিশ্চয়ই আজ কিছু খাসনি তাই না? প্রশ্নটা শুনে তুফানী এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিবানীর বুঝতে আর বাকি থাকে না আজ তার কিছুই খাওয়া হয়নি। এরই  মধ্যে শিবানীর মা তাদের খাবার টেবিলে ডাকে। শিবানী তুফানীকে নিয়ে খেতে বসে । দুজনে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে শিবানীর রুমে যেতেই তার গায়ে ক্লান্তির রেশ নেমে আসে। দেরী না করে শিবানীর বিছানায় শুয়ে পড়ে তুফানী । শিবানীও তার পাশে শুয়ে বিভোর ঘুমে নিমগ্ন হয়।
ঘুম থেকে ওঠে শিবানীর মাকে চা নাস্তা আয়োজনের কথা বলে শিবানী। চায়ের আসরে তুফানীকে কায়দা করে জিজ্ঞেস করে-বলতো তোর আজ কী হয়েছে? তুফানী যদিও সত্যটা বলতে নারাজ। তবু অজান্তেই কপোল বেয়ে তুফানীর চোখ থেকে ক'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে শিবানীর দৃষ্টির আড়ালে। অবশেষে তুফানী বলতে শুরু করে- ছোটোবেলা থেকে কাকাবাবুর কাছে বড় হয়েছি কখনো কাকাবাবুর চোখেমুখে রাগের ছায়া দেখিনি,আজ যা দেখেছি। যখন যা বলেছি বা আবদার করেছি সাধ্যের মধ্যে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। আদর বিনে কোনোদিন শাসন করেননি। কাকাবাবুর আদরে কোনোদিন বাবা মায়ের কথা মনে হয়নি। কিন্তু যেই বাবা-মাকে দেখিইনি আজ শুধু তাদের কথাই মনে পড়ছে। তুফানী আদৌও জানে না তার বাবা মা কোথায়।
 
দিন গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। কিন্তু তুফানী এখনো বাসায় ফেরেনি। কাকাবাবু চিন্তায় অস্থির। কোথায় খুঁজবে তাকে। সে তো তুফানীর কোনো বন্ধু বান্ধবীর বাসাও চিনে না,ঠিকানাও জানে না। তবু মনতো আর মানে না। মেয়েটা যাবে কোথায়। এসব ভেবে তুফানীকে  খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে তার কাকাবাবু। এদিক সেদিক অনেক জায়গায়ই খুঁজে, কিন্তু তুফানীর কোনো খোঁজ মিলেনি। এখন সে কী করবে তাও ভেবে পায় না। যাকেই জিজ্ঞেস করেছে কেউই বলতে পারেনি। অবশেষে হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছে, নিকটবর্তী থানায় রিপোর্ট করেছে। এভাবে রাত পোহায়ে ভোর হয়ে গেলো। কোথাও কোনোভাবে তুফানীর সন্ধান করতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিষণ্ণ মনে বাড়িতে ফেরৎ আসে। নিজেকে সে খুবই অপরাধী মনে করে। এক সময় সে একা একাই পাগলের মতো বিরবির করতে শুরু করে। ভাবে, কেনোই বা আমি ওকে বকাঝকা করতে গেলাম। এই অপরাধবোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। আবার এটাও ভাবে নাকি রাগের বশীভূত হয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে! এসব নানা ভাবনার বিষাক্ত ছোবলে তার কোমল হৃদয়টা বিষে বিষে নীল হয়ে ওঠে । কী করবে সে এখন? অতিমাত্রার টেনশনে বারবার মোর্চা যায় তুফানীর কাকাবাবু হারাধন।
 
হারাধনের বাড়ির পাশ দিয়ে গঞ্জে যাচ্ছিলেন নিরঞ্জন বাবু। নিরঞ্জন বাবু এই এলাকার মাতব্বর। হঠাৎ তার মনে হলো গতকাল তিনি শুনেছিলেন তুফানীকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই একটু খোঁজ নিয়ে যাওয়ার জন‍্যেই হারাধনের বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে ডাকতে শুরু করে নিরঞ্জন বাবু- হারাধন বাড়িতে আছো? ও হারাধন, হারাধন... বাড়ির ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসে না। তবে কী হারাধন বাড়ি ফেরে নাই! বাড়িতে শুধু তুফানী আর হারাধনই থাকতো। তাদের আর কেউই নেই। এই নিয়েই ছিলো তাদের সংসার। বাড়ির ভেতর থেকে কোনো উত্তর আসছে না দেখে মাতব্বর বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ঘরের দরজা খোলা থাকায় সরাসরি ঘরে প্রবেশ করে। দেখে হারাধন মাটিতে পড়ে রয়েছে। পাগলের মতো কী যেনো বিড়বিড় করে বকছে -ও হারাধন,হারাধন! তোমার কী হয়েছে, কী সব পাগলের মতো বিরবির করছো। তুফানীর কোনো খোঁজ পেলে? হারাধন কোনো প্রত্যুত্তর করে না। সে তার প্রলাপেই নিমগ্ন। অবস্থা বেগতিক দেখে মাতব্বর নিরঞ্জন বাবু তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
 
চলবে...