logo
আপডেট : ২২ জানুয়ারী, ২০২৪ ১০:২১
আজকের গল্প
পৃথিবীর মা-বাবা
সরকার হুমায়ুন

পৃথিবীর মা-বাবা

সরকার হুমায়ুন

সেদিন গল্পের আসরে বিজ্ঞান দাদু সামসজী বললেন : আমাদেরতো পিতা- মাতা আছে। আমরা জন্মগ্রহণ করি। জীবজন্তু,
পশুপাখি ,কীটপতঙ্গ ,গাছপালা ইত্যাদি যা কিছু পৃথিবীতে আমরা দেখি, সবকিছুর মা- বাবা রয়েছে। তাই না?
এ কথা শুনে  কৌতূহলী পাথর আলী বিজ্ঞান দাদু সামসজীকে জিজ্ঞেস করলো : পৃথিবীর কি মা - বাবা আছে ,সামস জী?
প্রশ্নটি শুনে বিজ্ঞান দাদু সামসজী অবাক হলেন। খুব খুশি মনে পাথর আলীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার প্রশ্নের উত্তরে বললেন : ঠিক সন্তানের মতোই মা-বাবা থেকেই পৃথিবী এবং এর মতো গ্রহেরা জন্মগ্রহণ করে থাকে । মহাকাশে ঘোরাঘুরির সময় দুটি বড় তারকার মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। তারকারা একে অপরের সাথে কোনো শারীরিক আইন দ্বারা নয় বরং ভালোবাসার মতো মহাকর্ষ বলের টানে সংযুক্ত থাকে। আকাশের তারকারা হলো পৃথিবীর পিতা-মাতা। দুটি তারার মধ্যে সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর জন্ম হয়েছিলো। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে,এরকম কিছু অবশ্যই ঘটেছিলো। দুটি তারকার সংঘর্ষ। যখন দুটি তারা, একটি মেয়েলি এবং একটি পুরুষ সংঘর্ষে আসে, তখন পৃথিবীর জন্ম হয়। পৃথিবী বেঁচে আছে ; এটা মারা যায়নি। মৃত পৃথিবীও আছে। 
বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করছেন যে, চাঁদ একটি মৃত পৃথিবী হতে পারে। হয়তো কিছুদিন আগেও এটি বেঁচে ছিলো বা জীবিত ছিল। তবে এখন সেটি মৃত। এই পৃথিবী বেঁচে আছে। গাছের সবুজ রঙ তার জীবনের এক অংশ মাত্র। আমাদের চেতনা তার বিকাশের একটি অংশ মাত্র। দিনেদিনে পৃথিবী বিকশিত হচ্ছে । বর্তমানে এটি তরুণ। কোনো এক সময় এটি পুরোনো হয়ে যাবে। এটি মরে যাবে, তবে অন্য কোথাও জীবন ফুটে উঠবে।
এই জন্ম মৃত্যুর অবশ্যই কোন উদ্দেশ্য রযেছে।  তবে যে বিষয়টি আমাদের জানতে হবে সেটি হলো - কার উদ্দেশ্যে এই সৃষ্টি কর্ম? আমরাতো আর আমাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জন্মগ্রহণ করিনি। মহান আল্লাহ্ মহাবিশ্বের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। সবকিছুর ধ্বংস বা মৃত্যু আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী হতে থাকবে। 
বিজ্ঞানীরা বলেন যে ,কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার আমাদের পৃথিবীর মতো গ্রহ শুধু আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই রয়েছে। যেখানে প্রায় বিশ হাজার কোটি তারকা আছে।  মহাবিশ্বে কমপক্ষে বিশ হাজার কোটি এ রকম গ্যালাক্সি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালাক্সিতে এরকম দশ- বিশ হাজার কোটি তারকা রয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব জগত রয়েছে। 
যেমন -আমাদের সূর্য একটি তারকা। আমাদের  পৃথিবী এর একটি গ্রহ। এমন আটটি গ্রহ এবং প্লুটোর মতো ছোটো বড়ো অনেক গ্রহাণু আছে এই সূর্য রাজ্যে।  আছে শতো শতো ধূমকেতু , আছে অসংখ্য উল্কা ও পাথুরে বেল্ট এবং অজানা  বহু মহাকাশীয় বস্তু। সূর্যরাজ্যের  ভেতরেই রয়েছে শতো শতো চন্দ্রজগৎ। এই সমস্ত কিছু মিলে গঠিত মাত্র একটি  সৌরজগত।  সব তারকারই এরকম গ্রহরাজ্য রয়েছে। কিছুদিন পর পর বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন বহি:জাগতিক গ্রহ আবিষ্কার করছেন।অনেকগুলো আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যে একদম পৃথিবীর মতো। তারা এও অনুমান করছেন - পুরো মহাবিশ্ব জুড়েই জীবিত প্রাণ থাকার গাণিতিক সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের গ্যালাক্সিতেই পঞ্চাশ হাজার গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে। এটি কেবল একটি গাণিতিক সম্ভাবনা। আমাদের প্রযুক্তিগত বুদ্ধিগুণে আমরা এখনো অন্যান্য জীবিত পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। তবে যখন একটি পৃথিবী মারা যায় তখন অন্য পৃথিবীর জন্ম হয়। কোথাও জন্ম হয়,কোথাও মৃত্যু। কোথাও মৃত্যু হয়, কোথাও জন্ম হয়। জীবন চলতে থাকে। এটি একটি ধারাবাহিকতা।