আপডেট : ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪ ১০:৪২
আজকের গল্প
জীবন যন্ত্রণা
ফরিদা বেগম
ফরিদা বেগম
শ্যামল মায়ের লাশটি হাসপাতাল থেকে এনে বাসার সামনে রেখেছে । আজ ভোর ছয়টার ট্রেনে মাকে নিয়ে মামার বাড়ি যাচ্ছিল। তীব্র শীত তাই এখন যেতে বারণ করেছিল :বলেছিল ঠাণ্ডাটা কমলে তোমারে লইয়া যাইয়ামনে। মা মানেনি । তার এক কথা: কত বছর ধইরা মা-বাপের ভিডাডা দেহি না, ঠাণ্ডা থাউক আমারে লইয়া যাইবে। মামার বাড়ি গফরগাঁও । ময়মনসিংহ রেলস্টেশন,ট্রেন এসেছে । ট্রেনে উঠবে এমন সময় শ্যামলের মা ঢলে পড়ে , জ্ঞান হারায়। শ্যামল পাঁজাকোলে করে সিএনজিতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় । ডাক্তার মাকে মৃত ঘোষণা করে ।
শ্যামল কাঁদছে । সে মায়ের একমাত্র সন্তান । ওদের বাসার কাছেই ওর শ্বশুর বাড়ি । ওরাই লাশের সদগতির প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করছে । শ্যামলের বাবা ওদের সাথে থাকে না । একই শহরে অন্যত্র থাকে । সেও এসেছে । বাবাকে দেখে শ্যামলের মেজাজ খারাপ হয় । লাশের কাছে যেতে তাকে বাধা দেয়,বলে : মায়ের কাছে একদম যাইবা না । এইখান থাইকা চইলা যাও ।
বাবা বলে : আমি ওর স্বামী , তর বাপ । সর দেহি যাইবার দে । শ্যামলের মনে বাপের কুকীর্তিগুলো
ভেসে ওঠে ।
ওদের তিন জনের সংসারটা ভালোই চলছিলো। হঠাৎ করে বাবা বিবাহিত এক মুসলমান মহিলার প্রেমে পড়ে ।শ্যামলের মা কান্নাকাটি করে বুঝানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু কোন লাভ হয় না । বাবা মহিলাকে বিয়ে করে মহিলার কাছে চলে যায় ।
মা শ্যামলকে বিয়ে করিয়ে বউ আনে ঘরে । ছেলে-বউ নিয়ে দিন পার করছিলো মা । বছর খানেক পর একদিন বাবা উদয় হয়। স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে আগের সম্পর্কে ফিরে যেতে চায় । মা এটা মানে না । বাবা মায়ের বিছানায় গিয়ে শুয়ে থাকে । মা তাকে কিছুতেই উঠাতে পারে না । গভীর রাতে মায়ের চিৎকার,পরে গোঙানি শোনা যায় । সকালে বাবা চলে যায় । কয়েকদিন পর আবার আসে । মা অনিচ্ছায় তাকে থাকতে দেয় , রাতে ধর্ষিত হয় , গোঙায় । পরে বাবা প্রায়ই আসে আর একই ঘটনা ঘটে । মায়ের এই যন্ত্রণা শ্যামলকে কষ্ট দেয় । বাবা নামক লোকটাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে চায় কিন্তু মায়ের শাঁখা সিঁদুর তাকে বাধা দেয় ।
আজ আর শ্যামল নিজেকে সামলাতে পারে না,বলে : কিসের স্বামী ? স্বামীগিরি ফলাইতে আইছ ? তুমি একটা ধর্ষক !
বাবাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ।