আপডেট : ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৯:৪২
ধারাবাহিক উপন্যাস ( চতুর্বিংশ পর্ব)
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন
তুফানীর ঘুম ভাঙতেই চেয়ে দেখে শ্রাবণী বিছানায় নেই। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে একা একা কী যেনো ভাবছে। তুফানী বিছানা ছেড়ে শ্রাবণীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে : শ্রাবণী তোর কী হয়েছে বলতো? রাত থেকে দেখছি কেমন যেনো অন্যমনস্ক হয়ে আছিস। তুই খুবই আগ্রহভরে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলে সুমনের কথা। কিন্তু আমি যখন সুমন সম্পর্কে বলছিলাম, বলার মাঝখানে আসতেই হঠাৎ তোর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। তুই বললে, তোর খুব ঘুম পেয়েছে। তাই তোকে আর বিরক্ত করিনি। এখন ঘুম ছেড়ে ওঠে আবার জানলায় দাঁড়িয়ে একা একা কী ভাবছিস। বল না কী হয়েছে? শ্রাবণী মনে মনে মুহুর্তের জন্য একবার ভেবে নেয়,এমনিতেই তোর জীবনের উপর দিয়ে কত ধকল বয়ে গেছে, তার উপর যদি আমার ভাবনার সত্যিটা তোকে বলি,তাহলে কোনভাবেই সহ্য করতে পারবে না। আমার সত্যিটা যে এখন তোর দখলে! জানলে কী পারবে আমার সত্যিটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে? তুফানী বারবার পীড়াপীড়ি করেই চলছে। তুই কী ভাবছিস আমাকে খুলে বল? তুফানীর পীড়াপীড়িতে টিকতে না পেরে শ্রাবণী তার ভাবনার কথা ছাপিয়ে উত্তরে শুধু জানায়: কই কিছু ভাবছি না তো?
: তাহলে এমন করছিস ক্যান শ্রাবণীর পাল্টা প্রশ্ন- : কেমন করলাম? তুফানী বলে- এই যে! আমাকে পাশকাটিয়ে এসে একা একা জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবনার অতলে ডুবছিস? এটা কী কিছু করার মধ্যে পড়ে না? শ্রাবণী একটু ভারী কণ্ঠে জানায়: রাত থেকে মনটা ভালো লাগছে না রে, তাই একটু জানলায় দাঁড়িয়ে বাইরের খোলা বাতাসের গন্ধ শুঁকছি। অনেকদিন হয় দূরে কোথাও বেড়াতে যাই না, তুইও ঝামেলায় থাকিস।চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি। এভাবে গণ্ডির ভেতর থাকতে থাকতে আমার নিঃশ্বাসটা কেমন যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। তুফানী তখন ভাবে, তোকে কী আমি চিনি না শ্রাবণী? তুই নিশ্চয়ই আমার কাছে কিছু লুকোচ্ছিস। তুফানীর চেয়ে শ্রাবণীর বুদ্ধিমত্তা অনেক বেশী। তুফানীর মুখচ্ছবিতে সন্দেহের ছাপ গাঢ় হতে দেখে মুহুর্তেই শ্রাবণীর ভাবনার রঙ পাল্টায়। ভাবে, তুফানীর সাথে এখনি ফ্রি না হলে তার মনের সন্দেহ কাটবে না। তাই মনের বিরুদ্ধেই এক চিলতে হাসি উড়িয়ে বলে : আরে পাগলি তুই শুধু শুধু সন্দেহের জলে ডুবছিস। এরই মাঝে শ্রাবণীর মা এসে হাঁক ছাড়ে :কইগো মা তুফানী! তোমাদের ঘুম ভাঙছে? তুফানী উত্তরে জানায়: জ্বী আন্টি! শ্রাবণীর মা বলে: তাহলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে আসো। তুফানী তখন নিজেই শ্রাবণীকে জানালার কাছ থেকে টেনে এনে মশকারা করে বলে : অনেক ভাবছিস এখন আর ভাবতে হবে না। আন্টি ডাকছে, চল আগে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে আসি।
দু'জন মিলে নাস্তা সারে। শ্রাবণীর মনে একটাই চিন্তা তার উপর থেকে তুফানীর মনের সন্দেহটাকে কীভাবে হালকা করা যায়। আগে পরের কোনো প্ল্যান নেই। নাস্তার টেবিলে বসেই চটকরে সিদ্ধান্ত নেয় আজ তুফানীকে নিয়ে তাদের পূর্ব বসবাসের এলাকাটা দেখাতে নিয়ে যাবে। যেখানে কেটেছে সুমন শ্রাবণীর স্বপ্নমাখা শৈশবকাল। তুফানী যদিও সুমন শ্রাবণীর সম্পর্কের কথা জানে না। শ্রাবণীদের পূর্ব বসবাসের এলাকাটি এখন সাগর গহ্বরে নিমজ্জিত। সেখানে শ্রাবণীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব এখন আর অবশিষ্ট নেই। সেখানকার শৈশব বিচরণ ভূমির সমস্ত কিছু রাক্ষসী সাগর অস্তিত্ব থেকে মুছে দিলেও শ্রাবণীর মন থেকে মুছতে পারেনি সুমন শ্রাবণীর স্মৃতির মুহুর্তগুলো। শ্রাবণীর মনের পটে আজও আঁকা রয়েছে সুমনকে নিয়ে শৈশব কাটানো দিনগুলোর ছবি। এসব ভাবনার অনুকূলে শ্রাবণীর মনের আকাশ যখন মেঘে মেঘে ভারী হয়ে আসে! তখন কিছুটা হাল্কা হতে মাঝেমধ্যেই শ্রাবণী তার পরিবার নিয়ে সেখানে ছুটে যায়। আজও একই কারণে সেখানে যেতে উদ্যোগ নেয় শ্রাবণী। তুফানীকে সেখানে যাওয়ার প্রস্তাব করলে তুফানী তার দোকানের ঝামেলা দেখিয়ে যেতে অমত পোষণ করে। নাছোড়বান্দা শ্রাবণী তাকে নিয়েই যাবে। এর মাঝে শ্রাবণীর মা এসে শ্রাবণীর কথায় আরো জোর দেয়। শ্রাবণীর মা তুফানীকে বলে সেখান থেকে ঘুরে আসো মা! দেখবে খুব ভালো লাগবে। আমরা প্রায়ই সেখানে যাই। চলো তোমাদের সাথে আমিও যাবো। তুফানী আর শ্রাবণীর মায়ের কথা ফেলতে না পেরে তাদের সঙ্গী হয়।
চলবে...