আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১০:৫০
আজকের গল্প
কালো ছায়া
সরকার হুমায়ুন
সরকার হুমায়ুন
একজন বিখ্যাত সম্রাট সম্পর্কে গল্পটি শুনেছি। তিনি একরাতে স্বপ্নে দেখেন- একটি কালো ছায়া তাঁর মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ঙ্কর কালো ছায়াটি দেখে সম্রাট ভয়ে কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, কে তুমি?
ছায়াটি বলল, হুজুর,এ বিষয়ে আমরা পরে কথা বলব। আমি আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নিয়ে এসেছি।সংবাদটি হলো- আগামীকাল সূর্যাস্তের সাথে সাথে আপনার মৃত্যু হবে! কালো ছায়া সংবাদটি জানিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো । তার সঙ্গে সম্রাটের চোখ থেকে ঘুমও নিরুদ্দেশ হলো।
সম্রাট ঘেমে অস্হির হলেন। তিনি তাঁর রক্ষীদের ডাকলেন। এই মধ্যরাতেই সমস্ত রাজ জ্যোতিষী, হস্তরেখা বিশারদ এবং পণ্ডিতদেরকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে বললেন। সম্রাট জানতে চাইলেন- এই স্বপ্নের অর্থ কি?
জ্যোতিষীরা তাদের বিশাল বিশাল গ্রন্হমালা খুঁজতে থাকলো । স্বপ্নের কোন পূর্ব ব্যাখ্যা গ্রন্হসমূহে আছে কিনা?
তারা সম্রাটের স্বপ্নের কোন অর্থ খুঁজে পেলো না। কারণ, এর আগে মৃত্যু কাউকে কোন আগাম খবর দিয়ে আসেনি। কারও দরজায় নক না করেই মৃত্যু এসে যায়।
পরদিন যথারীতি সূর্য উদিত হলো। সূর্যের লাল রঙে শোকের শঙ্কা রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়লো। প্রাসাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পুরনো রক্ষী সম্রাটের কাছে এলো। এই রক্ষীটি ছিল সম্রাটের পিতার আমলের। সম্রাটের কাছে সে পিতার মতো। খুবই ছোট বয়সে সম্রাটের মা মারা যান। মাতৃহারা শিশু সম্রাটের পিতা সাবেক সম্রাট সবসময় যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে থাকতেন। নিজের সন্তানকে সময় দিতে পারতেন না। শিশু সম্রাটকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে এই বৃদ্ধ প্রাসাদরক্ষী। পিতার আদর দিয়ে এই রক্ষী শিশু সম্রাটকে লালন করেছে। এইজন্য সম্রাট তাকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করেন।
এই বৃদ্ধ রক্ষী সম্রাটের খুব কাছে এসে বলল,হুজুর! আমি রাজপরিষদের বিশিষ্ট কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি নই । আমি কোনো জ্যোতিষী নই । আমি বড়ো কোন বিদ্বান ব্যক্তি নই । আমি কোনো বিষয়ে বিশেষ কিছুই জানি না। একটি জিনিস আমি জানি: সেটি হলো- আপনার এই প্রাসাদে থাকা উচিত নয়। আমাদের সবচেয়ে দ্রুতগতির ঘোড়া নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজধানী ছেড়ে চলে যান। যদি সম্ভব হয় তবে অন্য রাজ্যে চলে যান।
আমার জানামতে এই শাস্ত্রবিশারদগণ বড়ো বড়ো গ্রন্হ সামনে নিয়ে স্বপ্নের অর্থ বোঝার জন্য একে অপরের সঙ্গে মূল্যবান শলা পরামর্শ করতেই থাকবে । তারা যুক্তি তর্ক আর পাল্টাযুক্তি দিয়ে সারাবেলা ব্যস্ত থাকবে । কে কার চাইতে বড়ো পণ্ডিত তা দেখানোর চেষ্টা করবে। তারা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারবে না।
সম্রাট পিতৃতুল্য রক্ষীর কথা রাখলেন। তিনি অশ্বশালা থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী একটি অ্যারাবিয়ান ঘোড়ায় চড়লেন। সম্রাট ঘোড়াকে বলল,সূর্য ডোবার আগে আমাকে এ রাজ্য ছাড়িয়ে নিরাপদ রাজ্যে নিয়ে যাও।
প্রভুভক্তির জন্য কুকুর আর ঘোড়ার খ্যাতি আমাদের সকলের জানা। ঘোড়া সম্রাটকে নিয়ে হাঁকিয়ে চলল।কোথাও থামাথামি নেই। পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে পড়েছে। মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ঘোড়া জনপদ ছাড়িয়ে চললো । সূর্যাস্তের আগেই সম্রাট নিজরাজ্য পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যে পা রাখলো। ইতোমধ্যে সূর্য ডুবে গেলো।
অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো। বিশাল এক আম্রকুঞ্জে ঘোড়া থামলো। সম্রাট ঘোড়া থেকে নামলেন।তৃপ্তির নিশ্বাস নিলেন। সম্রাট একবারও ভাবেননি যে, তিনি নিজেই মরণ ফাঁদে পা দিয়েছেন। ঘোড়ার কেশরে হাত বুলাতে বুলাতে তিনি এর গতির প্রশংসা করলেন । ঘোড়াকে ধন্যবাদ দিতে থাকলেন। এমন সময় সম্রাট তাঁর কাঁধে একটি হাতের ছোঁয়া অনুভব করলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি সেই কালো ছায়াকে আবার দেখে থমকে গেলেন।কালো ছায়াটিও ঘোড়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কালো ছায়ারূপী মৃত্যুদূত সম্রাটকে বলল,আমিও দুশ্চিন্তায় ছিলাম হুজুর! এই ভেবে যে, একদিনের মধ্যে কি করে এতদূরের পথ পাড়ি দিয়ে এই আম বাগানে পৌঁছানো সম্ভব? যেখানে আপনার মৃত্যুস্হান নির্ধারিত।