আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১০:১৩
ধারাবাহিক উপন্যাস( ত্রিংশৎ পর্ব)
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন
সারাদিনের জার্নি শেষে মা মেয়ে দু'জনই খুব ক্লান্ত। বাসায় ফিরে বিলম্ব না করে যার যার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। শ্রাবণীর চোখ জুড়ে ঘুম নেই। মনের দুয়ারে শুধু একই ভাবনা কড়া নাড়ে। সন্দেহের জালে বন্দী হয়ে মনের যে শাস্তিভোগ চলছে অভিমানের কারাগারে! তার থেকে মুক্তি পেতে চায় শ্রাবণী। অভিমানের ভার আর সইতে পারে না সে। তুফানীর জন্য খুব মন খারাপ হয় তার। চোখের পাতায় যতবার তুফানীর মলিন মুখচ্ছবিটা ভাসে ততবারই শ্রাবণীর ভেতরটা নড়ে ওঠে। যতো অভিমান-ই থাকুক না কেন? সবকিছুর পরেও তুফানী তার হৃদয়ের আপনজন। প্রাণের প্রাণ। যাকে ছাড়া একটা নিঃশ্বাসও কল্পনা করে না শ্রাবণী। আর সেই ঘনিষ্ঠতার মাঝখানে সন্দেহের ধূম্রজালে সঞ্চিত অভিমান, খুবই পীড়াদায়ক। ভ্রমণের শেষলগ্নে এসে তুফানীর মন খারাপের বিষয় শ্রাবণীকে নতুন মাত্রায় ভাবিয়ে তোলে। তা ছাড়া ফেরার পথে তুফানীকে রাস্তায় একা ছেড়ে এসে শ্রাবণী আরো বেশি চিন্তিত হয়। কিন্তু মুখফোটে কাউকে বলতে পারে না।
এদিকে তুফানীও একই যন্ত্রণায় কাতরায়। শ্রাবণীর সাথে মন খুলে কথা বলতে না পেরে খুব হাঁপিয়ে উঠছে সে। দু'জনের মধ্যে সৃষ্ট অভিমান থেকে কেউই বেরুতে পারেনি। দু'দিকেই নীরবতার আগুন জ্বলে ছাই হচ্ছে দুটি মন। ভুল বুঝাবুঝির বলয় থেকে বেরিয়ে আসার সূত্র খুঁজে বেড়ায় দু'জনই। কিন্তু উভয়ের মনের আকাশ জুড়ে উড়ছে সঙ্কোচের ঘুড়ি। কে আগে নাটাই টানবে! কে আগে অভিমান ভেঙে কাছে নিবে একে অপরকে! সেই দ্বিধায় দ্বিধান্বিত দু'জনই।
এমনি করে চলতে থাকলে একদিন তুফানীকেও হারাতে হবে তার। তুফানীকে হারালে সুমনকেও যে,হারাতে হবে সাথে! এটা কোনোভাবে মেনে নিতে পারবে না শ্রাবণী। কারণ, সুমন তার প্রথম জীবনের স্বপ্ন এবং ভালোবাসা। শ্রাবণীর আকাশ থেকে প্রকৃতির বিপর্যয়ে ছিটকে পড়া সুমন কালের ফেরে এখন যদিও তুফানীর আকাশের নক্ষত্র হয়ে রঙিন স্বপ্ন বিলায়,তবুও দূর থেকে না হয়,সান্ত্বনার কুলুপে আবদ্ধ হয়ে অনুভব করবে তার ভালোবাসার মানুষটি অন্তত বেঁচে আছে?
প্রকৃতির এক বেরসিক বিপর্যয়ের মহাযজ্ঞে সুমনকে হারিয়েছিল শ্রাবণী। তার পর থেকে সুমনের আর কোনো খোঁজ মিলছিলো না। শ্রাবণী আশায় বুক বাঁধছিল সুমন বেঁচে থাকলে অবশ্যই তাকে খুঁজে নিবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। সুমন বেঁচে থাকলেও স্মৃতির পালাবদলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সুমনের স্মৃতি থেকে শ্রাবণীর নাম মুছে যায়।
শ্রাবণীর কাছে তুফানীর অবাক করা বর্ণনায় সন্ধান মিলে যায় হারিয়ে যাওয়া সুমনের। ঘটনার বিস্তারিতে শ্রাবণী পুরোপুরি নিশ্চিত, এটিই তার ছোটবেলার স্বপ্নকুসুম। শ্রাবণীর দৃষ্টি ফিরে স্মৃতিময় সেই দিনে। মনের বাগে তখন মজ্জাগত কুসুম কোষে নতুনভাবে স্বপ্নের পাপড়ি মেলতে শুরু করে। হারানো ভালোবাসা ফিরে পেতে মনের খাতায় আবারও স্বপ্ন এঁকে চলে শ্রাবণী। কিন্তু সুমন যে ফিরে এসেছে তুফানীর হৃদয়ের পান্সিতে চড়ে? সে কথাটি আবেগাপ্লুত মনে ভুলের মাঝেই ভুল করে যায় শ্রাবণী। অনাকাঙ্ক্ষিত সন্দেহের দোলায় পড়ে অভিমানের পর্দার আড়ালে তুফানীর সাথে শ্রাবণীর সম্পর্ক মলিন হতে থাকে ক্রমাগত। তাতে শুধু মনের দূরত্বই বাড়ে না, বন্ধুত্বের মাঝেও চির ধরতে থাকে। একদিকে তুফানী অন্য দিকে সুমন। দু'জনই তার আপনজন। কোন্ দিকে পা বাড়াবে শ্রাবণী?
চলবে...