আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১০:৪৫
ধারাবাহিক উপন্যাস ( একত্রিংশ পর্ব)
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন
ভাবনার ঘোরে রাত কাটে শ্রাবণীর। রাত পেরোলেও ঘুমের ছিটেফোঁটা ভর করেনি চোখের পাতায়। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় চারপাশ আলোকিত। খানিকটা আলো এসে জানালার ফাঁকে উঁকি দেয়। শ্রাবণী বিছানা ছেড়ে গিয়ে জানালা খুলে দাঁড়ায়। ঘরের বাইরে জানালা ঘেঁষেই অপরাজিতার বাগান। ফুটন্ত ফুলের রংবেরঙের পাপড়িগুলো ভোরের বাতাসে তালে তালে ছন্দ মিলিয়ে যাচ্ছে। বহমান বাতাসের দলছুটেরা মাঝেমধ্যেই জানলার গ্রীল ছুঁয়ে শ্রাবণীর আউলা কেশে মৃদু নাচের মহড়া দেয়। শ্রাবণীর মনে জাগ্রত এলোমেলো প্রশ্নগুলো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে বিচরণ করতে থাকে অবিরত।
শ্রাবণী ভাবে, সুমন এখন অন্য আকাশের নক্ষত্র। শ্রাবণীর ভাবনার মধ্যে যতই ঘুরা-ফেরা করুক সুমনের নাম, সুমনকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন, সুমনের ভালোবাসা সবই এখন অতীত। শুধুই স্মৃতি পাতায় সীমাবদ্ধ!
সে তো এখন আর তার অধিকারে নেই? তবে কেনো ফেলে আসা দিগন্তের ডুবন্ত সূর্য উঁকিঝুঁকি দেয় শ্রাবণীর মনের আকাশে? নিজের প্রশ্নে নিজেই যখন নাকাল, তখন ঘরে প্রবেশ করে শ্রাবণীর মা।
ঘরের জিনিসাদিসহ বিছানাপত্র এলোমেলো দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় শ্রাবণীর মা। বলে, ঘরের এ কী অবস্থা করে রেখেছিস! তুই কী এখনো ছোট্টোটি আছিস! নিজের ঘরটা গুছিয়ে রাখতে পারিস না? সারাবছরই কী আমি করে দেবো সব? বয়স কী তোর কম হয়েছে? কথাগুলো একনিমিষে বলে ফেলে শ্রাবণীর মা। শ্রাবণী একটু বিরক্তির কণ্ঠে বলে ওঠে, মা তুমি কী সকালবেলা আমার সাথে ঝগড়া করতে আসছো? শ্রাবণীর মা আরো ক্ষেপে গিয়ে বলে- কী বলছিস তুই? আমি তোর সাথে ঝগড়া করতে আসছি! বাপটা যেমন, মেয়েটাও তেমনই হয়েছে। সারাদিন ঘুরে বেড়াবে, কাজের নামে খবর নাই! মুখে বড়ো বড়ো কথা। আমার যতো মরণ জ্বালা। শ্রাবণী আর কোনো কথা না বলে জানালায় দাঁড়িয়ে শুধু বুকের চাপা নিঃশ্বাসগুলো বাইরের খোলা বাতাসে বিলিয়ে ভাবনার মাঠে নিমগ্ন হয়। মেয়ের এ অবস্থা দেখে শ্রাবণীর মায়ের মনে নানানরকম প্রশ্নের ডালপালা ছড়ায়। মনে মনে ভাবে মেয়ে কী তাহলে কারোর প্রেমে পড়েছে? আর প্রেমেই যদি পড়বে তাহলে তুফানীর কী হয়েছে। তাকেও তো দেখলাম মন খারাপ।
এবার শ্রাবণীর মা একটু নমনীয় হয়ে শ্রাবণীকে জিজ্ঞেস করে, তোদের দুজনার মাঝে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, তাই না রে? শ্রাবণী চুপ করে দাঁড়িয়েই আছে, যেনো তার কর্ণকুহরে কথাটা প্রবেশই করেনি। শ্রাবণীর মা আর কিছু জিজ্ঞেস না করে সে তার ঘর গুছানো নিয়ে ব্যস্ত পড়ে । বিছানা গুছাতে গিয়ে যেই বালিশ টান দেয়, দেখে বালিশের নীচে একটা পকেট পার্স। পার্সটা হাতে নিয়ে ভাবে এই পার্সটাতো আগে কখনো দেখিনি? শ্রাবণীকে জিজ্ঞেস করে: এই পার্সটা কী তোর? শ্রাবণী জানালা ছেড়ে এসে মায়ের হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়। শ্রাবণীর মায়ের মনে আরো সন্দেহ বেড়ে যায়। শ্রাবণীর মা বলে এটা কার? কী আছে এর ভেতরে! শ্রাবণী তার মায়ের প্রশ্ন থেকে মুক্তি নিতে জানায়, এটা তুফানীর। খুলে দেখতো এর ভেতরে কী আছে? শ্রাবণী বলে, আচ্ছা মা! পরে দেখে আমি তোমাকে জানাবো। শ্রাবণীর মা আর কিছু বলে না। সে তার ঘর গোছানোর কাজ শেষ করে শ্রাবণীর ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
চলবে...