
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৬:৪১
রঙ্গরস
মো. রফিকুল ইসলাম সুফিয়ান
[সর্ব বিষয়ে বিশেষ অজ্ঞ ড. জ্ঞানাধারের একটি সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার গ্রহণে ড.হাঁদারাম প। বিষয় : জীবনানন্দ দাশ ও বনলতাসেন।]
সাক্ষাৎকার পর্ব--০৩
বিষয়-জীবনানন্দ দাশ ও বনলতা সেন
-----------------------------------
ড.হাঁদারাম প :স্যার,ভেতরে আসতে পারি?
চাচ্ছি অনুমতি।
ড.জ্ঞানাধার : আসুন আসুন, আপনি আসবেন,
এমন কী আর ক্ষতি!
ড.হাঁদারাম প : ধন্যবাদ স্যার।
আবারো কিছু প্রশ্ন
মাথায় হয়েছে জমা,
উত্তর পেতে ঘুরছে মাথা
মানছে না দাঁড়ি-কমা।
ড.জ্ঞানাধার : নো প্রবলেম।
বিষয়টা কি প্রেম?
নাকি অন্যকিছু ; বলেন আগে,
উত্তর দেবো বিস্তারিত
যতো সময় লাগে।
ড.হাঁদারাম প : স্যার,বিষয়টা
জীবনানন্দ দাশ এবং বনলতা সেন।
ড.জ্ঞানাধার : জীবনানন্দ?
আহা কী আনন্দ!
সাথে বনলতা সেন?
আমি তো জীবনানন্দ,
বনলতার ফ্যান।
ড.হাঁদারাম প : এ যে দেখি
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি,
পরিবেশটা হয়ে গেলো
কী দারুণ মিষ্টি।
স্যার,লক্ষ্য করুন,বনলতা সেন
কবিতার প্রথম চরণ--
কী বা তার অর্থ,কী বা তার ধরন!
"হাজার বছর ধরে আমি পথ
হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,"
এ কেমন উদ্ভট কথা,
মেনে নিই কোন্ মতে?
হাজার বছর ধরে পথচলা
এ কেমন অদ্ভুত ব্যাপার!
আসলে কি এ উক্তি
কোনো উন্মাদ-খ্যাপার?
ড.জ্ঞানাধার : ঠিক বলেছেন ড.হাঁদারাম,
এ ধরনের জটিল ব্যাখ্যা দেয়াই
আমার কাম।
যদিও বিষয়টা সবার কাছে
নয় মোটেই সরল,
এমনভাবে ব্যাখ্যা দেবো যেনো
পানির মতো তরল।
ড.হাঁদারাম প : স্যার,
আপনার পাণ্ডিত্যের কথা কী
বলবো আর?
ড.জ্ঞানাধার : জানেন তো হিন্দুধর্মে আছে
পরজন্মের কথা স্পষ্ট,
এতেই আছে প্রশ্নের সমাধান,
হবে না সময় নষ্ট।
ড.হাঁদারাম প : জী স্যার, হয় তো এখানেই
আছে সমাধান,
স্যার, ব্যাখ্যা করে যান।
ড.জ্ঞানাধার : হাজার বছর আগে
জীবনানন্দ ইহধাম ত্যাগ করে,
কায়াহীন রূপে ঘুরেছেন বিশ্বচরাচরে।
পুনর্জন্ম পেয়ে লিখেছেন
সেই সে গাঁথা,
ভরেছেন কবিতার খাতা।
ড.হাঁদারাম প : স্যার,কাহারবা কাহারবা;
সরি! মারহাবা! মারহাবা!
আমরা অজ্ঞ-হাবা।
ড.জ্ঞানাধার : যাক বাবা!
আরো কি কিছু আছে জানার
কিংবা মানার?
ড.হাঁদারাম প:স্যার,আছে বৈকি, আছে;
বলছি একেএকে যদি
ভুলে যাই পাছে।
দেখুন স্যার,কবিতার আরেক
চরণে আছে,
"এতোদিন কোথায় ছিলেন,
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে
নাটোরের বনলতা সেন।"
এমন বিচ্ছিরি উপমা কবি
কী করে দিলেন?
ড.জ্ঞানাধার : ভুলটা ধরেছেন খাসা,
কী জবাব দেবো তার
হারিয়েছি ভাষা!
আসলে কবি লিখেছিলেন
''পাখির নীরের' মতো চোখ,"
যা ছিলো নির্ভুল-নিখুঁত,
কাণ্ডটা ঘটিয়েছে ব্যাটা ছাপাখানার ভূত।
'পাখির নীর' হলো পাখির স্বচ্ছ
চোখের জল,
কবিপ্রিয়ার চোখ ছিলো তেমনি
অশ্রুভরা,ছলোছল।
কিন্তু দেখুন,এখন পণ্ডিতেরা
ব্যাখ্যা দিচ্ছে, 'পাখির নীড়' মানে
শান্তির প্রতীক!
ভাবুন তো এমন উদ্ভট ব্যাখ্যা কী
ঠিক?
ড.হাঁদারাম প : মোটেই না মোটেই না,
এসব ব্যাখ্যা একেবারেই
অখাদ্য-কুখাদ্য,
যেনো খড়কুটো গোখাদ্য।
স্যার, আমার শেষপ্রশ্ন --
"আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো
নাটোরের বনলতা সেন।"
এখানে 'দুদণ্ড শান্তি' বলতে
আমরা কী বুঝি?
এর উত্তরটাই বারবার খুঁজি।
ড.জ্ঞানাধার : এখানেও
আছে মহাভুল,
দিচ্ছি ব্যাখ্যা,ছাড়বো না একচুল।
আমারে 'দুদণ্ড শান্তি' নয়
'দুদণ্ড শাস্তি' দিয়েছিলো
নাটোরের বনলতা সেন,
এ সত্য না লিখে কবি লজ্জায়
উল্টোটা লিখলেন।
ড.হাঁদারাম প : স্যার,হচ্ছে অসাধারণ!
বলে যান, নেই বারণ।
ড.জ্ঞানাধার : দুদণ্ড মানে
৪৮ মিনিট কাল,
শাস্তি পেয়ে কবি
হয়েছিলেন বড়ো বেসামাল।
দীর্ঘ দীর্ঘ দিন কবির অপেক্ষায়
থেকে বনলতা সেনের হয় সন্দেহ,
হয় তো কবি অন্যকোনো নারীকে
দিয়েছেন, মনদেহ।
এসব ভেবে শেষে,
রাগে,ক্ষোভে কবিকে এ শাস্তি দেন
ভুজঙ্গিনী বেশে।
সেই শাস্তি ছিলো কী যে
এখনো গবেষণায় পাইনি নিজে।
হয়তো পেয়ে যাবো ফাটাফাটি
একটা কিছু,
গবেষণায় তাই আছি,
ছাড়ছি না পিছু।
ড.হাঁদারাম প:স্যার,যা ব্যাখ্যা
দিলেন জোস।
ড.জ্ঞানাধার :কেউ বোঝে না এসব,
আফসোস বড়ো আফসোস।
ড.হাঁদারাম প : স্যার,
আজ পর্যন্ত শুনেছি যতো ব্যাখ্যা,
সবই নস্যি; আপনি দিলেন টেক্কা।
ড.জ্ঞানাধার : এদেশে গবেষক আছে
ডজন ডজন,
কিন্তু আসল গবেষক পাবেন কজন?
ড.হাঁদারাম প : স্যার,আপনার
সাথে আমি আপাদমস্তক একমত।
গবেষণায় ঈর্ষণীয় আপনার
হেকমত।
স্যার,আসবো আবার জানবো অনেক,
অশেষ ধন্যবাদ।
ড.জ্ঞানাধার : ধন্যবাদ আপনাকেও,
বন্ধুরাসব কেউ যাবে না বাদ।
ড.হাঁদারাম প : বন্ধুরাসব
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন
এবার তবে আসি?
সবার জন্যে রেখে গেলাম
একচিলতে হাসি।