logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৯:৫২
ধারাবাহিক উপন‍্যাস (পঞ্চত্রিংশ পর্ব)
গহীনে নীল
বেলায়েত হোসেন

গহীনে নীল

চোখের পাতা দুটি এক করতে পারেনি তুফানী। 
চিঠি আর পার্স হারিয়ে অশান্তির আগুনে পুড়ছে সারারাত। ভাবনার দুয়ারে নানান প্রশ্নের ভীড়। তবে কী সেগুলো জার্নিবোটে ফেলে আসছে নাকি শ্রাবণীদের বাড়িতে? উত্তর পায় না খুঁজে। বেলা বেড়ে প্রায় দুপুর ঘনিয়ে এলো। এখনো বিছানা ছাড়েনি তুফানী। একেতো ভ্রমণের ক্লান্তি দ্বিতীয়ত চিঠি ও পার্স হারানোর যন্ত্রণা। সবমিলিয়ে খুবই অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে রাত পার হয় তার। রাতে ঘুম না হওয়ার কারণে শরীরটাও বেশ খারাপ লাগছে। ক'দিন যাবৎ দোকানে যাওয়া হয় না। দোকানের কর্মচারীগণ কীভাবে কী করছে জানা নাই। তাই আজকে তার দোকানে যেতেই হবে। শরীর যতোই খারাপ থাকুক। ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিছানা ছাড়ে তুফানী। ফ্রেশ হয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। তুফানী হাঁটে আর ভাবে চিঠি ও চিরকুটটা যদি শ্রাবণীদের বাড়িতে ফেলে এসে থাকি,আর যদি শ্রাবণীর মার হস্তগত হয়ে থাকে তাহলে তো ঝামেলা পাকিয়ে বসবে। কারণ, সুমন -সাজিদ হাসান সুমন মুসলিম আর তুফানী  সনাতন ধর্মের যদিও তুফানী শ্রাবণীর মাকে আন্টি বলে ডাকে! তবুও তো সে মায়ের মতো। তা ছাড়া শ্রাবণীর মা ও তুফানীকে সন্তান হিসেবেই গণ‍্য করে। তাই কোনো মা-ই চাইবে না তার মেয়েটাকে ভিন্ন ধর্মের একটা ছেলের হাতে তুলে দিতে। 
 
এদিকে শ্রাবণী অনেক দিক বিবেচনা করে তার মনের অবস্থান বদলেছে ঠিকই কিন্তু কদিন যাবৎ এতো অভিমানের পর তুফানীর সম্মুখীন হবে কীভাবে! তাই নিয়ে ভাবছে। তা ছাড়া শ্রাবণীর মা যেভাবে সুমনের কথা জিজ্ঞেস করলো তাকে, সত্যি সত্যি যদি চিঠির বরাতে জিজ্ঞেস করে থাকে তাহলে তো আরেক কেলেঙ্কারি। এটাই বা মোকাবেলা করবে কীভাবে। শ্রাবণী ভাবে মা তো কোনোদিন জীবন থাকতে ভিন্ন দুই ধর্মের দুজন তথা সুমন ও তুফানীর প্রণয়ের পরিণতি ঘটতে দিবে না। এসব চিন্তায় শ্রাবণী খুবই অস্থির হয়ে পড়ে। তাদের দুজনের সম্পর্ক যতদূর এগিয়ে গেছে সেখান থেকে তো কেউ পিছু হটবে না। দুজনই মুখিয়ে আছে শেষ পরিণতির মিলন মালার অপেক্ষায়। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। কোনো কারণে যদি তাদের  মিলন না ঘটে তাহলে নিশ্চিত দুজনই হারিয়ে যাবে দূর আকাশের তারা হয়ে। শ্রাবণী আর দুজনের একজনকেও হারাতে চায় না তার জীবন থেকে। 
সুমন যদি কোনোভাবে শ্রাবণীর পরিচয় জেনে  গিয়ে ছোটবেলার স্মৃতির কোলে চোখ ফিরায়! আর তাতে যদি তুফানীর সাথে সুমনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে! তাহলে অবশ্যই বিবেকের কাছে দায়ী হতে হবে শ্রাবণীর। এমনও হতে পারে তিনটি জীবনই ধ্বংসের বিষে নীলাক্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরবে । এসব নিয়ে রাতভর চলে শ্রাবণীর মনের যুদ্ধ। ঘুরে ফিরে একই ভাবনা ঘুরপাক খায় মনে। 
তাই নিজের কাছে নিজেই প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, সুমনের কাছে তার আত্মপরিচয় গোপন রেখে তুফানী ও সুমনের সম্পর্কের মালা বদলে যে কোনো বাধায় দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মোকাবেলা করবেই শ্রাবণী।
শ্রাবণীর মা ঘুম থেকে ওঠে নাস্তাসহ বাড়ির অন্যান্য কাজ শেষ করে শ্রাবণীকে ডেকে বলে- আমি একটু বেরুচ্ছি। আমি না ফেরা পর্যন্ত কোথাও যাবি না। শ্রাবণী তার মাকে জিজ্ঞেস করে- কোথায় যাচ্ছো! তার মা উত্তরে জানায়- বাইরে একটু কাজ আছে। ফেরার পথে তুফানীর এখানে যাবো। এই কথা শুনে শ্রাবণীর মনটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মনে মনে ভাবে, তাহলে আমার ধারণাই সত্যি! তুফানীর ওখানে গিয়ে আজকে কোন্ ঝামেলা পাকিয়ে আসে কে জানে! শ্রাবণী আপত্তি জানায়, আমিও যাবো, আমাকে নিয়ে চলো। শ্রাবণীর আপত্তি শুনে তার মা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। বলে, তোর যেতে হবে কেন? আমি যাচ্ছি হচ্ছে না? মায়ের চোখ রাঙানি দেখে শ্রাবণীর মুখমণ্ডলে আঁধারের ছায়া নামে। শ্রাবণীর মুখচ্ছবিতে আঁধারের ছায়া দেখে একটু ভেবে তৎক্ষণাৎ সান্ত্বনার কণ্ঠে বলে -আমি যাবো আর আসবো কোনো চিন্তা করিস না। তুফানীটা দেখলাম সেদিন কেনোজানি খুব মন খারাপ করে চলে গেছে। মেয়েটার জন্য আমারও মন খারাপ লাগতেছে। একটু দেখে আসি। আর তোর বাবা বাড়ি ফিরলে তাকে তুই দুপুরের খাবারটা দিস কেমন? আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি মা একটু জরুরি কাজে বাইরে গেছে এখনি চলে আসবে।
 
চলবে...