বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলী রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে মারা গেছেন ৪৫ জন। আজ শুক্রবার ভোর থেকে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর চলছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ২৯টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত ৪৫ জনের মধ্যে ৩৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ভোরের দিকে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার মোস্তফা আব্দুল্লাহ আল-নূর জানান, এ পর্যন্ত নিহত ৪৫ জনের মধ্যে ৩৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, ২৯ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। চেহারা, জামাকাপড় দেখে স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ সংখ্যা বাড়বে।
তিনি আরও জানান, শনাক্ত না হওয়া মরদেহগুলোর মধ্যে পাঁচজনের চেহারা বোঝা যাচ্ছে। একটি মরদেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া এটি হস্তান্তর করা সম্ভব হবে না।
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুয়েল নামে আরও একজন মারা গেছেন। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ জনে। আজ শুক্রবার (১ মার্চ) ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মোস্তফা আব্দুল্লাহ আল নুর (এনডিসি, ঢাকা) আরও একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাতে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে মারা যান তিনি। এই নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫ জনে। এছাড়া শনাক্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর চলমান রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার পর লাগা এ আগুন ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। রাতে বেইলি রোডের একটি ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার পর আতঙ্কিত হয়ে নামার সময় অনেকে আহত হন।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পৌঁছে যায় অগ্নিকাণ্ডের খবর। আহত অনেকে আসতে পারেন, এ কারণে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের নির্দেশে আগে থেকেই চিকিৎসকরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। এরই মধ্যে রাত সাড়ে ১১টা থেকে আসতে থাকেন আহতরা। চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে থাকেন। এরই মধ্যে অচেতন অবস্থায় একে একে আনা হয় অনেককে। তাদের আনা হয় ফায়ার সার্ভিসের একটি বড় কার্গোতে করে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একে একে মৃত ঘোষণা করতে থাকেন। একপর্যায়ে লাশের মিছিলে পরিণত হয় জরুরি বিভাগ। অন্যদিকে রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের বলেন, দুই হাসপাতাল মিলে মোট ৪৪ জন বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন আর ঢাকা মেডিকেলে ৩৪ জন মারা গেছেন।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হওয়ার চেয়ে বেশিরভাগ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।এদিকে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগুনে ৪৪ জন মারা গেছেন এ পর্যন্ত।