logo
আপডেট : ৫ মার্চ, ২০২৪ ১৩:৫১
মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক বললেন-
‘মিয়ানমার ইস্যুতে আমরা প্রস্তুত তবে আগ্রাসী ভূমিকায় যাবো না'
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘মিয়ানমার ইস্যুতে আমরা প্রস্তুত তবে আগ্রাসী ভূমিকায় যাবো না'

মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর  নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে আমাদের ওপর আগ্রাসনের কোনো আশঙ্কা দেখি না। তারপরও আমরা প্রস্তুত। আমরা বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করবো। আমরা কখনোই আগ্রাসী ভূমিকায় যাবো না।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৪ এর তৃতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কার্যঅধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সিভিল মিলিটারি রিলেশনশিপ (সিএমআর) যেন আরও উন্নত হয় সেজন্য আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ ছিল। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে। এটা আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবো। ওনারাও (ডিসি-বিভাগীয় কমিশনার) চাচ্ছে আমাদের কাছাকাছি আসতে, আমরাও চাচ্ছি ওনাদের কাছাকাছি যেতে। আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্য অনেক বেশি। ওনারা আমাদের এখানে ট্রেনিং করতে আসেন, আমরাও যাই। এতে আমাদের বন্ধুত্ব অনেক বেড়ে গেছে।

ডিসিদের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনারা (ডিসি-বিভাগীয় কমিশনার) হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তে পরিস্থিতি অনেক উদ্বেগজনক। ওখানে সিভিল প্রশাসন যেমন সম্পৃক্ত, তেমনি বিজিবিও সম্পৃক্ত। সেনাবাহিনী ততটা সম্পৃক্ত নয়। কারণ এখনও যুদ্ধ লাগেনি যে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমরা কোনো সময় আগ্রাসী ভূমিকা নেবো না। কিন্তু আমরা প্রস্তুত, আমাদের ওপর যদি কোনো রকম আক্রমণ আসে, আমরা ব্যবস্থা নেবো। এট নিয়ে আলাপ হয়েছে।

তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, এ ছাড়া ইলিশ ধরার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। ওটার ব্যাপারে নৌবাহিনী প্রধান বলেছেন কী কী ব্যবস্থা নেবেন।

আপনাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী তো স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা চাচ্ছি ওনাদের সঙ্গে বিশেষ করে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় একসঙ্গে কাজ করতে। আমাদের পক্ষ থেকে ডিসিদের অনুরোধ ছিল, আগুন ধরার বিষয়ে...।  আজকেই দেখা যাবে বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাবে। কোথায় কার চিনির গুদামে আগুন ধরেছে, এটার ইফেক্ট হয়তো আসবে কিছুটা বাজারে, সেটি খুবই সামান্য আসার কথা। সেটি আমাদের মজুদের তুলনায় এক শতাংশও না। কিন্তু দেখা যাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওটার অজুহাত দিয়ে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে বলা হলো, ওনারা যাতে নজর রাখেন। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বলবো এগুলো মনিটরিং করতে।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আমাদের ওপর আগ্রাসনের কোনো সম্ভাবনা দেখি না। তারপরও আমরা প্রস্তুত। কিন্তু ওখানে বিভিন্ন বহিঃশক্তি সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। কোথাও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হলে সবাই এখন নাক গলাতে চায়। আমরা ওই ব্যাপারে (মিয়ানমার পরিস্থিতি) মোটেও নাক গলাতে চাই না। আমাদের জনগণ যাতে শান্তিতে থাকে এবং রোহিঙ্গা যারা আছে তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সজাগ থাকি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে, আমরা বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করবো, আমরা কখনোই আগ্রাসী ভূমিকায় যাবো না। এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক।

হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা হেলিকপ্টার ব্যবহার অনেক কমিয়ে দিয়েছি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তেলের ওপর প্রভাব পড়েছে। যার কারণে হেলিকপ্টার ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিসিরা বলছিলেন, তারা চাহিদা অনুযায়ী পান না। এটা হয়তো সাময়িক। তবে যেকোনো সময় যে কারো অসুবিধা হলেই হেলিকপ্টার সাপোর্ট দেওয়া হবে।

ক্রস বর্ডার কিলিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এটা তো পরিকল্পিত কিছু না। এখানে দুই পক্ষেরই দোষ থাকে। আমাদেরও দোষ, বর্ডারের ওপারে যারা থাকে তাদেরও দোষ। এটাকে কিলিং না বলে ইনসিডেন্ট বলা যায়। চোরাচালানকারিরা এতটাই ফেরসাস হয় যে, মাঝে মধ্যে তারা বিএসএফকে আক্রমণ করে বসে। তখন তারা গুলি করতে বাধ্য হয়। আমাদের পক্ষ থেকেও গুলি হয় মাঝে মধ্যে।

তিনি বলেন, যেসব ঘটনা অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে সেদিকে আমরা বেশি সজাগ আছি। যেমন আগুন লাগা, এ লাগা, ওই লাগা এগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে। আবার অস্থিতিশীল পরিবেশ হয়, তখন বিনিয়োগকারীরা আসবে না। এসব ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা দেখি না। তবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকট হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। আমরা সবাই যৌথভাবে কাজ করছি।

এ ছাড়া ডিসিদের সঙ্গে কক্সবাজারসহ অন্যান্য আবহাওয়া কেন্দ্রে রাডার সিস্টেম আধুনিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় সিগন্যাল বাতিঘর স্থাপন, জরুরি অবস্থা/প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা/দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আর্মি-সিভিল যৌথ মহড়া (Search & Rescue Drill) আয়োজন, আর্মি ও সিভিল প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহে (NDC, ACAD, SSC) পরস্পরের প্রশিক্ষণার্থী বৃদ্ধিকরণ, সীমান্ত সড়ক নির্মাণে সীমান্তবর্তী জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো, সিভিল-মিলিটারি গাইডেন্স এবং এ সম্পর্কিত SOP যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে থাকছে ৩৫৬ প্রস্তাব। প্রস্তাবগুলোর জনসেবা বাড়ানো, জনদুর্ভোগ হ্রাস করা, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনে বিকাশ, আইনকানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২২টি প্রস্তাব পড়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে। সম্মেলনে সর্বমোট অধিবেশন ৩০টি। এর মধ্যে কার্য-অধিবেশন ২৫টি। একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, একটি স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়, একটি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সদয় নির্দেশনা গ্রহণ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা দুটি। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী কার্যালয়: একটি (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়)।