পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গাজার সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর প্রতি সম্ভাব্য বিকল্প বিবেচনায় এনে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ফিলিস্তিনি জনগণের উপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিষয়ে অর্গাইনাইজেশন অভ ইসলামিক কোঅপারেশনের ১৯তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক্সট্রাঅর্ডিনারি সেশনে বক্তৃতাকালে মন্ত্রী এ আহবান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং মানবিক করিডোর উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তিনি ফিলিস্তিনিদের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে ইসলামিক ফিনান্সিয়াল সেফটি নেটের ওপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের নীতি ও অনুশীলন থেকে উদ্ভূত আইনি পরিণতি সম্পর্কে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তুর্জাতিক বিচার আদালতে বাংলাদেশের দেওয়া জোরালো বিবৃতির কথা উল্লেখ করে আশাপ্রকাশ করেন যে এই অঞ্চলে শীঘ্রই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে যা মুসলিম উম্মাহর দাবি।
মন্ত্রী হাছান বলেন, এ জন্য মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং সব পক্ষের সংকল্পের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী ইস্যুতে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তিনি।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জেদ্দায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীবর্গের বিশেষ সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি সংস্থার সচিবালয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এবং ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী হাছান দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততায় সন্তোষ ব্যক্ত করেন এবং আগামী দিনে এ সহযোগিতা আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফর শিগগিরই সুবিধাজনক সময়ে হবে বলে আশা প্রকাশ করলে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসন্ন এ সফর নিয়ে আরও আলোচনা হবে এবং সৌদি আরব বাংলাদেশের সাথে বিগত তিন বছরে অত্যাধুনিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে।
ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহার সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসির নেতৃত্বে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
মন্ত্রী হাছান রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য ওআইসির নিরলস সমর্থন ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন, বিশেষ করে আইসিজেতে গাম্বিয়ার দায়ের করা রোহিঙ্গা মামলার জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য ওআইসির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করেন।
তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি দেখতে ওআইসি মহাসচিবকে আবারও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং সদস্যদের কাছে বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রচারের জন্য ওআইসি সচিবালয়ে একটি সেল গঠনের প্রস্তাব করেন।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওআইসি মহাসচিব উভয়েই টানা ৪র্থ বারের মতো সরকার গঠন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে পূর্ণ সহযোগিতা ও ফিলিস্তিনে সহিংসতা অবসানে একযোগে কাজের কথা জানান।