
রাজধানীতে প্রতি কেজি ৫০০ টাকার নিচে খেজুরের মূল্য নেই। বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে ক্রেতারা দাম জিজ্ঞেস করে বেশিরভাগ ক্রেতা চলে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার প্রথম রমজানের দিন রাজধানীর গুলিস্তান, জুরাইন, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেছে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রমজানে খেজুরের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সুযোগে প্রতি বছরই বাড়িয়ে দেয়া হয় পণ্যটির দাম।
পাঁচ বছর আগেও যেসব খেজুরের দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, সেসব খেজুরের কেজি এখন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে এসব খেজুরের দাম কেজিপ্রতি সাত থেকে আটগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের খেজুর ‘জাহেদি’ জাতের। এই খেজুর প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ এই জাতের খেজুরের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পাঁচ বছর আগে ‘জাহেদি’ খেজুর বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
খেজুরের দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে পুরান ঢাকার বাদামতলীর খেজুর ব্যবসায়ীদের দাবি—ভ্যাট বেড়েছে, তাই খেজুরের দাম বেড়েছে। ভ্যাট যদি কম থাকতো, তাহলে দাম বাড়ার কোনও কারণ ছিল না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর রোজায় যে খেজুর পাইকারি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেই খেজুরের ওপরে এবার শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৮ টাকা। এতে পাইকারি বাজারেই খেজুরের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
নুরুন্নবী তালুকদার নামে একজন খেজুর ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবসময় অল্প লাভেই বিক্রি করে থাকি। আমাদের চিন্তা থাকে লাভ অল্প হলেও বিক্রি যদি বেশি হয়, তাহলে লাভ এমনিতে বেশি হবে। আমাদের বিক্রি হয় কেনার ওপর ভিত্তি করে। যেই খেজুর আগে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করতাম, সেখানে এখন ৩৫০ টাকা ভ্যাট দেওয়া লাগতেছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, ভ্যাট বাড়ানোর ফলে খেজুরের দাম বেড়েছে। শুধু এ বছরে চার থেকে পাঁচগুণ দাম বেড়েছে শুধু ভ্যাট বাড়ানোর কারণে।’
দেশের বাজারে প্রতি কেজি মারিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, মাবরুম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, মেডজুল ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দাবাস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। আজোয়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি। আজোয়া এবং মরিয়ম ক্ষেত্র বিশেষে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আরও বেশি দামের খেজুরও আছে। তবে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে জাহেদি খেজুর, দাম প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। গত বছরের তুলনায় পাইকারি বাজারে সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে কেজিতে আরও ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা খেজুর বিক্রেতা মো. রিহান জানান, পাইকারি বাজার থেকে আমরা যে দামে কিনি, খুচরা পর্যায়ে কেজিতে তার চেয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করি। তবে আজোয়া এবং মরিয়ম খেজুরের ক্ষেত্রে একটু বেশি। কারণ, অনেক টাকা চালান খাটাতে হয়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের খরচ আছে। এখন দাম বাড়ার কারণে খেজুরের বিক্রিও কমে গেছে। আগে যে মানুষ একসঙ্গে ৫ কেজি খেজুর কিনতেন, এখন তারা এক বা ২ কেজি কিনেন। পাইকারি বাজারে যদি কম দামে কিনতে পারতাম, তাহলে খুচরাও কম দামে বিক্রি করতে পারতাম।