শোনলে অবাক হবেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের ইতিহাস। সোমালিয়ার জলদস্যুরা শুরু থেকে জলদস্যু ছিল না। আগে তাদের পেশা ছিল মাছ শিকার। ১৯৯১ সালে দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিলে বিদেশি ট্রলারগুলো তাদের মাছ ধরার জায়গায় আনাগোনা বাড়িয়ে দেয়। তারা দেখে, নিজেদের জলসীমায় মাছ দিন দিন কমছে। বড় বড় ট্রলার নিয়ে বাড়ছে বিদেশিদের আনাগোনা।
অন্যদিকে সোমালিয়ার জেলেরা গরিব। তাদের হাতে আছে জাল আর ছোট নৌকা। তাই তাদের মাছের পরিমাণ দিন দিন কমছিল। এমনকি সোমালিয়ার জেলেরা কাছাকাছি চলে গেলে ভিনদেশি মাছ ধরার ট্রলারগুলো থেকে গুলি করা হতো।
তা ছাড়া বিদেশি জাহাজ থেকে সোমালিয়ার জলসীমায় তেজস্ত্রিয় পদার্থ ফেলা হতো। এটাও মাছ কমে যাওয়ার বড় কারণ। এমন পরিস্থিতি মানতে পারেনি স্থানীয় জেলেরা। ক্ষোভ থেকে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়। গড়ে তোলে ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার কোস্টগার্ড অব সোমালিয়া এবং সোমালি মেরিনস নামে সংগঠন। এই নাম দুটি এখনো ব্যবহার করছে জলদস্যুরা। তখন থেকে মাছ ধরার ট্রলার ও জাহাজ জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করতে শুরু করে সোমালিয়ার মানুষ। বেআইনি ব্যবসা করায় জলযানগুলোর মালিকেরা আপসে মুক্তিপণ দিয়ে দিত। এভাবে শুরু, এরপর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জাহাজ জিম্মি করার পথে ঝুঁকে পড়ে জলদস্যুরা।
তবে সোমালিয়ার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের জাহাজ জিম্মি করা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকে জলদস্যুরা। তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু বিদেশি জাহাজ।
বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ভারত মহাসাগরে তাদের কবলে পড়েছে। তারা জিম্মি করেছে বাংলাদেশী ২৩ নাবিককে। ফলে নতুন করে আলোচনায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল।
জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন।
এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তিন মাসের মাথায় মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়িয়ে এনেছিল কবির গ্রুপ।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিককার কথা। তখন ভারত মহাসাগরে আফ্রিকার উপকূলে সোমালিয়ার জলদস্যুদের প্রভাব ক্রমেই বাড়তে শুরু করে। দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের পর ১৯৯১ সালে সোমালিয়ায় তৎকালীন সরকারের পতন হয়। দেশটি চরম অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এ সুযোগে জলদস্যুতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
সোমালিয়ার উপকূল–সংলগ্ন সমুদ্রপথ বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট। অ্যাডেন উপসাগরের এক উপকূলে ইয়েমেন। অন্য উপকূলে সোমালিয়া, জিবুতি, ইরিত্রিয়া। বিশ্ববাণিজ্যের বড় একটা অংশ এই জলপথে হয়ে থাকে। তাই এ অঞ্চলে জলদস্যুদের উৎপাত ভাবিয়ে তোলে পুরো বিশ্বকে। ২০১০-১১ সালের দিকে মাত্রা ছাড়ায় জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য। জাতিসংঘের আওতাধীন আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থার (আইএমও) তথ্যমতে, আগের বছরের তুলনায় ২০১০ সালে জলদস্যুতা ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।
শুধু ২০১১ সালেই সোমালিয়ার জলদস্যুরা ২১২টি জাহাজে হামলা করেছিল। ওই সময় জলদস্যুদের দমনে তৎপর হয়ে ওঠে নানা মহল। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সোমলিয়ার জলদস্যুদের দমনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সাতটি প্রস্তাব উঠেছে।
ওই উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য কমাতে তৎপর রয়েছে জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশ, জোট ও সংস্থা। নিরাপত্তার জন্য বিদেশি নৌ ও বিমানশক্তি ওই অঞ্চলে টহল দেয়। এসব কারণে সোমালিয়ার জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে এসেছিল। কিন্তু পুরোপুরি দূর হয়নি।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের আওতাধীন আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক ব্যুরো (আইএমবি) প্রকাশিত ‘পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি রিপোর্ট’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে জলদস্যুতার ১২০টি ঘটনা ঘটেছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১৫০।
জলদস্যুতার কারণে বেড়েছে জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের জীবনের হুমকি। আইএমবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে জলদস্যুরা ৪১ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করেছিল। গত বছর এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৩। গত বছর জলদস্যুরা ১৪ নাবিক ও ক্রুকে অপহরণ করেছিল। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ২।
নানামুখী উদ্যোগের পরও সোমলিয়ার জলদস্যুদের পুরোপুরি নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমালিয়ার উপকূলসহ ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ অঞ্চলে গত তিন মাসে যতগুলো জলদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে, গত ছয় বছরেও তা হয়নি। লন্ডনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (আরইউএসআই) এ তথ্য জানিয়েছে। এ বিষয়ে আইএমও বলছে, জলদস্যুদের লাগাম টানতে তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
জাহাজ ও নাবিকদের জিম্মি করে বিপুল অর্থ আয় করে জলদস্যুরা। সেসব অর্থ হাত খুলে খরচও করে তারা। বলা হয়ে থাকে, সোমালিয়ায় জলদস্যুরা সবচেয়ে বেশি আর বেপরোয়া খরচ করে। জলদস্যুদের শীর্ষ নেতাদের চোখের পলকে ১০ লাখ ডলার খরচ করা কোনো ব্যাপারই নয়।
জলদস্যুদের অনেকেই মুক্তিপণের অর্থ পার্টি করে, মদ খেয়ে, নারীদের পেছনে উড়িয়ে দেয়। অনেকে বড় বাড়ি করে। তবে তাদের পছন্দের একটি কাজ গাড়ি কেনা। প্রিয় গাড়ি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার। যার একেকটির দাম ৩০ হাজার ডলার। সোমালিয়ায় জ্বালানির দাম অনেক বেশি হওয়ায় এর পেছনে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে তারা।
সোমলিয়ায় জলদস্যুদের বেশ সম্মান করা হয়। জলদস্যুদের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে, গাড়ি নষ্ট হওয়ার পর সেই গাড়ি মেরামত করলে তাদের সম্মান নষ্ট হবে। তাই তারা গাড়ি নষ্ট হলে তা সারাই করে না। নতুন আরেকটি গাড়ি কিনে নেয়। এমনকি উইন্ডশিল্ডে ছোট্ট ফাটল কিংবা গাড়িতে সামান্য দাগ লাগলেও নতুন গাড়ি কিনে নেয় তারা।
জলদস্যুরা জিম্মি করার মতো জাহাজ সব সময় পায় না। পেলেও সেই অভিযান সফল হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। তাই একেকটি অভিযানে জলদস্যুদের অনেক অর্থ বেরিয়ে যায়। সফল হলে মুক্তিপণের বিপুল অর্থ মেলে। আর ব্যর্থ হলে করার কিছু নেই। এসব কারণে জলদস্যুরা অভিযানে অর্থায়নের জন্য সোমালিয়ার জনগণের ওপর ভরসা করে।
সোমালিয়ায় একটি ‘জলদস্যু শেয়ারবাজার’ আছে। সেখানে বিনিয়োগকারীরা সম্ভাব্য অভিযানের শেয়ার কেনে। ৭২টির বেশি জলদস্যু গ্রুপের সমন্বয়ে এই শেয়ারবাজার গঠিত। এসব গ্রুপকে তারা ‘সামুদ্রিক কোম্পানি’ বলে থাকে। বিনিয়োগকারীরা আশা করে, তাদের অর্থায়ন করা গ্রুপ ‘জ্যাকপট’ পেয়ে যাবে। অনেক মুক্তিপণ নিয়ে ফিরবে।
তবে সেখানে শুধু অর্থ দিয়েই শেয়ার কেনাবেচা হয় না। বরং বিনিয়োগকারীরা একে-৪৭ রাইফেল বা রকেটচালিত গ্রেনেডের বিনিময়েও শেয়ার কিনতে পারে।
একেকটি ‘সফল’ অভিযান থেকে মুক্তিপণ হিসেবে লাখ লাখ ডলার জলদস্যুদের হাতে আসে। তবে সেই অর্থের সামান্যই অভিযানে অংশ নেওয়া জলদস্যুদের পকেটে ঢোকে। যারা ছোট ডিঙিনৌকা নিয়ে জিম্মি করার মতো জাহাজের সন্ধানে উত্তাল সাগরে ভেসে বেড়ায় কিংবা গুলি ছুড়ে জাহাজ জিম্মি করে, তারা মুক্তিপণের ভাগের ৩০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার ডলার পায়। যারা বন্দুক কিংবা জাহাজে ওঠার মই নিয়ে এগিয়ে আসে, তাদের ভাগে অতিরিক্ত ১০ হাজার ডলার।
যেভাবে অভিযান চলে : সোমালিয়ার জলদস্যুদের জাহাজ জিম্মি করার প্রক্রিয়াটি বেশ সোজাসাপটা। তবে পরিস্থিতিভেদে তা জটিল হতে পারে। বিনিয়োগকারী পাওয়ার পর জলদস্যুরা দুটি দলে ভাগ হয়ে যায়। একটি দল জিম্মি করার মতো জাহাজ খুঁজতে নৌকা নিয়ে সাগরে ভেসে বেড়ায়। জাহাজ খুঁজে পেলে, অন্ধকারের মধ্যে সেটার পাশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর গুলি ছুড়তে ছুড়তে জাহাজের ডেকে ওঠার চেষ্টা করে তারা। সফল হলে পরে সেই জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যায় এই দল।
এরপর মাঠে নামে আরেকটি দল। মুক্তিপণের আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা জাহাজ পাহারা দেয়। মুক্তিপণের অর্থ পাওয়ার পরই তারা জাহাজ ছেড়ে যায়। এর মধ্যে দৃশ্যপটে আসে ব্যবসায়ী। নোঙর করা জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের খাওয়ানোসহ যাবতীয় খরচ বহন করে সে। পরে মুক্তিপণের ভাগ থেকে খরচ করা অর্থ সুদসহ ফেরত পায় সে।
যারা জাহাজ পাহারা দেয়, তারা একেকজন ১৫ হাজার ডলার পায়। মূল বিনিয়োগকারী মুক্তিপণের ৩০ শতাংশ নেয়। বাকি বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ শেয়ার অনুযায়ী ভাগ পায়। ‘অ্যাংকরিং রাইট’ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় একটা ভাগ পায়। এরপর যা থাকে, সেটা বাকি জলদস্যুরা ভাগ করে নেয়।
সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য কমাতে সশস্ত্র যুদ্ধজাহাজ টহল দেয়। জলদস্যুরা জানে, একে-৪৭ কিংবা গ্রেনেড নিয়ে এসব যুদ্ধজাহাজের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এরপরও তাদের ঝুঁকি নিতে হয়। অভিযানে গিয়ে অনেক সময় তারা ভুল করে ফেলে। বাণিজ্য জাহাজ মনে করে যুদ্ধজাহাজের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
সাধারণত গুলি ছুড়তে ছুড়তে জাহাজে উঠে পড়ে সেটার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে জলদস্যুরা। এমনই এক অভিযানে গিয়ে ২০১০ সালের এপ্রিলে বাণিজ্য জাহাজ মনে করে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ অ্যাশল্যান্ডে গুলি ছোড়ে জলদস্যুরা। তখন অ্যাশল্যান্ড থেকে পাল্টা গুলি ছুড়লে এক জলদস্যু নিহত হয়। আটক করা হয় বাকিদের।
তারা যে জলদস্যু, সেটা অবশ্য কেউই স্বীকার করেনি। বলেছিল, তারা সবাই পাচারকারী। ইয়েমেনে মানুষ নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের নৌকা ডুবে গেছে। জাহাজের নাবিকদের দৃষ্টি আকর্ষণে গুলি ছুড়েছিল।
২০১০ সালে অন্য একটি ঘটনায় কিছু জলদস্যু বাণিজ্য জাহাজ ভেবে ইউএসএস নিকোলাসে আক্রমণ করেছিল। পরে তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। ইউএসএস নিকোলাস থেকে পাল্টা গুলি ও ধাওয়া করা হয়। আটক করা হয় পাঁচ জলদস্যুকে। একই বছরে ডাচ যুদ্ধজাহাজ এইচএনএলএমএস ট্রম্পে ভুলবশত অভিযান চালাতে গিয়ে আটক হয়েছিল ১৩ জলদস্যু।
জিম্মি করার পর শুরুতে জলদস্যুরা জাহাজে থাকা সব নথি ঘেঁটে মালিকের তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর একজন মধ্যস্থতাকারী মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে। ওই মধ্যস্থতাকারীকে বিশ্বস্ত হতে হয়। তাকে সাধারণত আত্মীয়স্বজনের ভেতর থেকে বেছে নেওয়া হয়।
মধ্যস্থতাকারীকে ভীষণ চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। কেননা তার প্রধান দায়িত্ব জলদস্যুদের বড় অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করিয়ে দেওয়া। এ ছাড়া জলদস্যুরা বেশি দিন একটি জাহাজ আটকে রাখতে পারে না। সেটা চায়ও না। তাই দ্রুত মুক্তিপণের জন্য যোগাযোগ স্থাপন ও দর–কষাকষি করতে হয়। সাধারণত ২০০০ সালের পর ছাপা ৫০ কিংবা ১০০ ডলারের নোটে মুক্তিপণ পরিশোধ করতে বলে জলদস্যুরা।
জাহাজ জিম্মি করা থেকে শুরু করে মুক্তিপণ আদায়—বিপজ্জনক কাজগুলো করতে হয় জলদস্যুদের। কিন্তু মুক্তিপণের ভাগ তারা সবচেয়ে কম পায়। শুরুতে বিনিয়োগকারীরা ভাগের বড় অংশ কেটে নেয়। কম যায় না বিমা কোম্পানিগুলো। বলা হয়, জলদস্যুরা বছরে যে পরিমাণ আয় করে, তার ১০ গুণ বেশি অর্থ পকেটে ভরে এসব কোম্পানি।
কেঅ্যান্ডকেসহ বেশ কয়েকটি জাহাজ পরিচালনাকারী কোম্পানির বিমা করা থাকে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত তারা বিমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে ওই কোম্পানির প্রতিনিধিরা জলদস্যুদের মধ্যস্থাতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে দুই পক্ষ। শেষ পর্যন্ত চুক্তি হলে মালিকপক্ষ একটি বেসরকারি নিরাপত্তাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মুক্তিপণের অর্থ পৌঁছে দিতে চুক্তি করে।
মধ্যস্থতাকারী চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে পরিস্থিতি সামাল দিতে জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আইনজীবীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। আইনজীবীরা প্রায় তিন লাখ ডলার ফি নেন। আর মুক্তিপণের অর্থ পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান নেয় প্রায় এক লাখ ডলার। পাশাপাশি জাহাজের খরচ হিসেবে আরও ১০ লাখ ডলার দেওয়া হয়।
মুক্তিপণের অর্থ আসল, নাকি নকল, সেটা যাচাই করার পরই জলদস্যুরা জিম্মি করা জাহাজ এবং নাবিক ও ক্রুদের মুক্তি দেয়।