logo
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০২৪ ১১:২১
গাজা উপকূলে প্রথমবারের মতো ত্রাণ পৌঁছেছে সাগর পথে
নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজা উপকূলে প্রথমবারের মতো ত্রাণ পৌঁছেছে সাগর পথে

সাগর পথে  প্রথমবারের মতো  একটি বার্জ থেকে ত্রাণ সামগ্রী নামানো হয়েছে গাজা উপকূলে। গাজার বিপন্ন মানুষদের জন্য স্প্যানিশ জাহাজ ওপেন আমস ২০০ টন খাদ্য সহায়তা নিয়ে মঙ্গলবার সাইপ্রাস ছেড়েছিল। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই সতর্ক করে বলেছে গাজা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।

অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বার্জ থেকে ক্রেনে করে খাদ্যবাহী ক্রেটগুলো টেনে লরিতে তোলা হচ্ছে। মূলত সড়কপথে ও বিমানযোগে ত্রাণ দেয়া কঠিন হয়ে পড়ায় সাগর পথে নেয়াটা কার্যকর হয় কি-না সেটিই দেখা শুরু হলো।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) চাল, গম, সবজি, প্যাকেটজাত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বহনকারী কার্গো নিয়ে এ মিশন পরিচালনা করছে।

গাজায় সচল কোন বন্দর নেই। সে কারণে ডব্লিউসিকে উপকূলে একটি জেটি তৈরি করতে হয়েছে। তবে কীভাবে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা সেলেব্রিটি শেফ হোসে আন্দ্রেজ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন বার্জগুলো থেকে সব খাবার ১২টি লরিতে তোলা হয়েছে।

“আমরা এটা করেছি”- লিখেছেন তিনি। একই সাথে বলেছেন, পরবর্তী শিপমেন্টে আরও সহায়তা আনা যায় কি না এটি ছিলো তারই একটি পরীক্ষা- ‘সপ্তাহে হাজার হাজার টন’।

ওদিকে ইসরায়েল এক বিবৃতিতে বলেছে ওপেন আমস নৌযান ও এর কার্গো সাইপ্রাসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে এবং উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছে।

দা ওপেন আমস চ্যারিটি জাহাজটি পরিচালনা করছে। তারা শুক্রবার একটি ভিডিও শেয়ার করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, তাদের টিম রাতভর কাজ করছে ত্রানসহায়তা স্থলভাগে নেয়ার জন্য।

মঙ্গলবার জাহাজটি লারনাকার বন্দর ছাড়ার পর থেকেই ত্রাণ সরবরাহের বিষয়টি প্রত্যাশা করা হচ্ছিল।

সাগর পথের এ অভিযান সফল হলে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে আরও সহায়তা একইভাবে গাজায় আসার কথা রয়েছে।
এসব জাহাজ ওই অঞ্চলে সরাসরি যাওয়ার জন্য নতুন একটি রুট চালু করা হয়েছে সাগর পথে।

এছাড়া সাগর পথে উপকূলে আরও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভাসমান ডক তৈরির পরিকল্পনা করছে।

একটি সামরিক নৌযান ভাসমান ডক বানানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে রওনা দিলেও অন্যান্য উপকরণগুলোর বিষয়ে পরিকল্পনা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।

সামরিক অভিযান এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার মতো ঘটনা ত্রাণ বিতরণে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

অন্যদিকে গাজার নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। বেকারি ও কারখানাগুলো হয় ধ্বংস হয়ে গেছে কিংবা যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

সহজে ও দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ পথ ছিলো সড়ক পথে। কিন্তু ইসরায়েলি নানা বিধিনিষেধের কারণে ত্রাণ নিয়ে গাজায় যাওয়া নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো।
ওদিকে নিজেদের কনভয়ে গুলি ও লুটপাটের পর ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।

প্যারাসুট ছিঁড়ে মালামাল পড়ে কয়েকজন নিহত হওয়ার পর বিমান থেকেও খাদ্য ছুঁড়ে দেয়ার কার্যক্রম বিপজ্জনক হয়ে গেছে।

দ্রুত সহায়তা না দিলে গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অবশ্যম্ভাবী’ বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মানবিক বিপর্যয় তৈরির জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছেন।

ইসরায়েল এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে গাজার দক্ষিণের ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিচ্ছে তারা।

এদিকে শুক্রবারের আলোচনাতেও হামাসের সবশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে।

হামাস জানিয়েছে যে তারা মধ্যস্থতাকারীদের হাতে যুদ্ধবিরতির একটি পূর্ণাঙ্গ ভিশন তুলে দিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এটি ‘অবাস্তব’ আখ্যায়িত করেছেন।

গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে গিয়ে হামাস যোদ্ধারা হামলা চালালে যুদ্ধের সূচনা হয়। ওই সময় ১২শ মানুষ নিহত হওয়া ছাড়াও ২৫৩ ইসরায়েলি হামাসের হাতে জিম্মি হয়।

জবাবে ইসরায়েলের অভিযানে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা